হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সাতছড়ির সংরক্ষিত গহিন বন থেকে র্যাব সদস্যরা বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছেন। ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান অভিযানে বাঙ্কার ও গর্ত থেকে নয়টি এসএমজি, ছয়টি এসএলআরসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। স্মর্তব্য, গত ৩ ও ৪ জুন সাতছড়ি থেকে ২২২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কামানবিধ্বংসী রকেটসহ বিপুল অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের পর সাতছড়ি থেকে বড় ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটল। মনে করা হচ্ছে, গহিন বনের এ এলাকাটি এক সময় ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন অল ত্রিপুরা টাইগার্স ফোর্সের (এটিটিএফ) ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে সংগঠনটি প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় বিদ্রোহীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দানের অপনীতি থেকে সরে এসে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বছর এটিটিএফ প্রধান রঞ্জিত দেব বর্মাকে বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হয় বলে ব্যাপক রটনা রয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দাবি করা হয়, গ্রেফতারের পর বিচ্ছিন্নতাবাদী ওই নেতাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গহিন বনাঞ্চল থেকে তিন মাসের ব্যবধানে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার আইনশৃঙ্খলা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি উদ্বেগজনক বিষয়। বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু অতীতের কোনো কোনো সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে এ নীতির ব্যত্যয় ঘটেছে। ভারত ও মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের প্রতি তাদের মদদ প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। বর্তমান সরকার এ ভ্রান্ত পথ থেকে বেরিয়ে আসাই শুধু নয়, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার দৃঢ়তা দেখিয়েছে। গত মঙ্গলবার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রধানদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিকে বিদেশি উগ্রবাদীদের চারণভূমি হতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জাতীয় অঙ্গীকারের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। আমরা মনে করি, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে এ দেশের মাটিতে কোনো বিদেশি অপতৎপরতাকে বরদাশত করা উচিত নয়।