বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের নারী

বাংলাদেশে দুই যুগ ধরে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা পদে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই নারী। এ মুহূর্তে সংসদ উপনেতা, স্পিকার পদেও নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। সংসদের বাইরের যে দলটি জাতীয় রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত সেই দলের চেয়ারপারসন পদটি একজন নারী অলঙ্কৃত করছেন। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের নারীরা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালনার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত তৈরি পোশাক খাত। এ খাতের শ্রমিকদের সিংহ ভাগই নারী। নারী স্বাধীনতার জন্য নন্দিত পশ্চিম দুনিয়ায়ও একসঙ্গে এতগুলো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর অধিষ্ঠানের কোনো দৃষ্টান্ত নেই। এটি যেমন আলোময় দিক তেমন অন্ধকারের দিক থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে। দুনিয়ার যেসব দেশের নারীরা সীমাহীন বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘরে বা বাইরে প্রতিনিয়ত সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন বাংলাদেশের নারীরা। এ সহিংসতার অন্যতম কারণ নারী ও পুরুষের অসমতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ মনে করে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে শারীরিকভাবে আঘাত করা যায়। প্রায় ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময় স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন। নারীর প্রতি সহিংসতাগুলোর মধ্যে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে, এর পরই রয়েছে ধর্ষণ। এমনকি বাংলাদেশে এমন অনেক সহিংসতাও আছে, যা রাষ্ট্রই ঘটায় বা রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ২০১৩ সালের প্রথম আট মাসে যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ৩২৭টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১১০ জনকে হত্যা করা হয়, নয়জন আত্দহত্যা করে আর ২০৮ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ২০১৩ সালের প্রথম আট মাসে ২২ জন নারী অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ধর্ষণের ৬৬১টি ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ১৮৮টি। ৪৯ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, আর পাঁচজন নারী ধর্ষিতা হওয়ার লজ্জায় আত্দহত্যা করেছেন। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদন সাক্ষ্য দেয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল না হওয়ায় তারা আজও বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার। এ বৈষম্য জাতীয় লজ্জার বিষয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। নিজেদের সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হলে এ বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। এটি নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে সবার কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

 

 

সর্বশেষ খবর