শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মুমিনের পরিচয়, দায়িত্ব ও কর্তব্য

মুফতি আমজাদ হোসাইন

মুমিন মানে খাওফে ইলাহীর তাড়নায় প্রকম্পিত এক বান্দা। আল্লাহর ওপর খালেছ দিলে বিশ্বাস, তার ওপর অবিচল আস্থা এবং আল্লাহর হুকুমে জীবনকে উৎসর্গকারী এক সত্তার নাম 'মুমিন'। হাজারো প্রশংসিত গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে এক শব্দে 'মুমিন' বলে অভিহিত করা যায়। আরও ১০ ব্যক্তি থেকে পৃথক করে সঠিক পন্থায় দীনি আলোয় যখন কোনো ব্যক্তি উদ্ভাসিত হবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন তিনিই 'মুমিন'। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের অনেক স্থানে মুমিনের গুণাবলির কথা উল্লেখ করেছেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতিদানের কথাও বলেছেন। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন- ওই কিতাবটি প্রকৃত কিতাব, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। যা মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, যথাযথভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠা রাখে, আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এই কিতাবকে যা আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেই কিতাবের ওপর যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তারা আখেরাতের ওপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। তারাই স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই সফলকাম। (সুরা : বাকারা, আয়াত-২, ৩, ৪, ৫)

আল্লাহতায়ালা উক্ত আয়াতসমূহে মুমিন মুত্তাকিদের পাঁচটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন।

১. মুমিনের প্রথম গুণ হলো তারা 'ঈমান বিল গায়েব' তথা অদৃশ্য বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। যেমন কবরের আজাব, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি। অর্থাৎ রসুল (সা.) যেসব অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন এবং মানুষ যেসব বিষয় স্বীয় বুদ্ধিবল ও ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করতে অক্ষম, সেসব বিষয়ে পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে।

২. মুমিনের দ্বিতীয় গুণ হলো তারা যথাযথভাবে নামাজ কায়েম রাখে। কোনো অবস্থাতেই নামাজ ছাড়ে না। কখনো কোনো কারণে নামাজ কাজা হলে তার হৃদয় ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ সে নামাজের সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব স্বযত্নে ওয়াক্ত মতো আদায় করে।

৩. মুমিনের তৃতীয় গুণ হলো, তারা সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে। তারা কৃপণ কিংবা লোভী নয়। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার প্রকারসমূহ (১) সম্পদের জাকাত আদায় করা (২) সদকায়ে ফিতর আদায় করা (৩) ফকিরদের দান করা (৪) অভাবিকে ঋণ প্রদান করা (৫) ওয়াক্ফ তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা, মেহমানখানা তৈরিসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা (৬) হজের সফরে ব্যয় করা (৭) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা (৮) আর্থিক সংকটে জর্জরিত আত্দীয়স্বজনের জন্য ব্যয় করা (৯) মাতা-পিতার জন্য ব্যয় করা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করা (১০) মেহমানকে আপ্যায়ন করা। (মাআরেফুল কোরআন)

৪. মুমিনের চতুর্থ গুণ হলো- তারা কোরআনের প্রতি ইমান আনার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসমূহের প্রতিও ইমান আনে। অর্থাৎ আসমানি সমস্ত কিতাব আল্লাহর কালাম, হক ও সত্য এ কথার ওপর ইমান এনে, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ রহিত হয়ে যাওয়ায় এখন শুধু সর্বশেষ কিতাব তথা আল কোরআনের বিধানের ওপর আমল করে। আল কোরআনকে বোঝার জন্য রসুল (সা.) এর অসংখ্য হাদিস চর্চা করে আর আমলের পদ্ধতিগত দিকগুলো মাজাহেবে আরবাআ (চার মাজহাব) এর ইমামদের এজতেহাদের ওপর নির্ভর করে এবং তার আদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। মৌলিকভাবে মুমিন ব্যক্তি মনে করে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার অবকাশ নেই এবং সে এটাও মনে করে, ইসলাম ধর্ম আল্লাহর এমন মনোনীত ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম, যার মধ্যে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা যাবে না। তাই তো আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য রসুল (সা.) যা নিয়ে এসেছেন তা মজবুত করে ধর এবং যার থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সুরা হাশর, আয়াত-৬)

৫. মুমিনের পঞ্চম গুণ হলো, তারা পরকালের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে। বস্তুত পরকালের প্রতি বিশ্বাস থেকেই সৃষ্টি হয় নেক আমলের অনুপ্রেরণা এবং গুনাহের অনুসূচনা। উপরোলি্লখিত গুণের অধিকারী মুমিন মুত্তাকিদের জন্য দুটি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। (১) ওইসব লোকই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়েতপ্রাপ্ত এবং তারা হেদায়েতের ওপর থাকবে অটল অবিচল (২) আর ওইসব লোকের জন্যই ইহকাল ও পরকালের সফলতা রয়েছে। আর রয়েছে জান্নাতের হাজারো নেয়ামত।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা-১২১২।

সর্বশেষ খবর