শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য

বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা কি- এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে বৈদেশিক সহায়তার এক বড় অংশ ছাড় করা সম্ভব হয় না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সস্তা শ্রম ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি সত্ত্বেও যে সব কারণে বাংলাদেশমুখী হন না তার মধ্যে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা অন্যতম। দেশের সরকারি দফতরগুলোতে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা বা লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এত বেশি যে সাধারণ মানুষকে নূ্যনতম সেবা পেতেও নাকানি চুবানির শিকার হতে হয়। জনগণের ট্যাক্সে টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও এর বিনিময়ে সেবা দানে রয়েছে সীমাহীন কার্পণ্য। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে সরকারি দফতরগুলোর কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। এ স্থবিরতা মানুষের কাজের গতি থামিয়ে দিচ্ছে। নষ্ট করে দিচ্ছে সব উদ্যোগ, উদ্যম ও তৎপরতা। বাড়ি বানাতে গিয়ে নকশা অনুমোদনে যেমন সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তেমনি সরকারিভাবে কোনো জমি অধিগ্রহণ হলে ক্ষতিগ্রস্তরা দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও পায় না ক্ষতিপূরণ। পানির লাইন নিতে গেলে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। বিদ্যুতের ভৌতিক বিল সংশোধন করতে গেলে হয়রানি পোহাতে হয় দিনের পর দিন। লাল ফিতায় আটকে আছে শিক্ষক-কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও এমপিওভুক্তি। এজি অফিসেও ভোগান্তি চরমে। সেবা খাতের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নেই। যে কোনো কাজের জন্য ভুক্তভোগীদের দিনের পর দিন বিভিন্ন দফতরে ঘুরতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত, এজি অফিস, ডেসা, ওয়াসা, পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণ, রাজউক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দফতরে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ করে তুলেছে সেবাগ্রহীতাদের। দেশের মানুষ সরকারি দফতরগুলো থেকে যে সেবা পায় সেগুলো কারোর দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। এটি সাধারণ মানুষের অধিকার। দেশবাসীর দেওয়া ট্যাক্সে টাকায় যেহেতু সরকারি অফিসগুলো পরিচালিত হয়, সেহেতু তাদের সেবা নিশ্চিত করা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কর্তব্য হওয়া উচিত। দেশের উন্নয়ন এবং নাগরিকদের কাছে সরকারের সেবা পৌঁছাতে হলে আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্যকে থামাতে হবে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর