বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে বুড়িগঙ্গা

রাজধানীর প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত বুড়িগঙ্গা নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বলা যায়, লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীর মতো বেহাল অবস্থার শিকার এই নদী। প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বুড়িগঙ্গার ১৮ কিলোমিটারই অবৈধ দখলদারের কব্জায়। প্রতিদিন টনকে টন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের মলমূত্র ও কল-কারখানার বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পতিত হওয়ায় এ নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বহু আগেই। এমনকি শোধনের পরও উৎকট দুর্গন্ধ থেকে যায় বুড়িগঙ্গার পানিতে। মাছের জন্যও এ পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গৃহস্থালি ও কল-কারখানায় সাত হাজার টনেরও বেশি বর্জ্যের ৬৩ ভাগ বিভিন্ন খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়। নদীতীর দখল করে রাজনৈতিক দলের অফিস করা হয়েছে। ট্রাকস্ট্যান্ড, টেম্পোস্ট্যান্ড, দোকানপাটও তৈরি করা হচ্ছে নদীতীর ভরাট করে। বুড়িগঙ্গার অস্তিত্ববিনাশী নানা অপপ্রয়াস চলছে সরকার তথা প্রশাসনের নাকের ডগায়। দেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি করপোরেশন তো বুড়িগঙ্গা বিনাশে ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। রাজধানীর পরিবেশ সমুন্নত রাখা ঢাকা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তাদের দ্বারা বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের যে ঘটনা ঘটছে তা ক্ষমার অযোগ্য বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। বুড়িগঙ্গা নদীতীরেই সেই মোগল আমলে ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। ঢাকা আজ বিশ্বের মেগা সিটিগুলোর একটি। বুড়িগঙ্গা না থাকলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করা হতো কিনা এটি একটি প্রশ্ন। একইভাবে আমাদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় রাজধানীর এ বৃহত্তম নদীটি অস্তিত্ব হারালে ঢাকা বাসযোগ্য নগরী থাকবে কিনা সে সংশয়ও থেকে যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি বুড়িগঙ্গার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাদের দায়িত্ব তারাই নদীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। জনগণের ট্যাক্সে টাকায় যাদের পোষা হয় দায়িত্ব পালনে তাদের অবহেলার কারণেই বুড়িগঙ্গার তীর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার ব্যর্থতাও এ ক্ষেত্রে দায়ী। রাজধানীতে জীবনধারণের পরিবেশ বজায় রাখতে বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর সব নদী ও জলাশয়কে টিকিয়ে রাখতে হবে। নদী দূষণ ও ভরাটের দুষ্টচক্রকে প্রতিহত করতে হবে। এ ব্যাপারে গড়ে তুলতে হবে জনসচেতনতা। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।

 

 

সর্বশেষ খবর