রবিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

সবজি চাষিদের সর্বনাশ

টানা অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীতে সবজির দাম বেড়েছে গড়ে দ্বিগুণ। দাম বাড়লেও এ বাড়তি অর্থ যাচ্ছে না কৃষকদের পকেটে। তারা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছে না। ক্রেতার অভাবে পণ্য বিক্রি করে কখনো কখনো হাটে যাওয়া-আসার খরচ উঠছে না। অবরোধের কারণে পরিবহন খরচ গড়ে তিন-চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় নামমাত্র মূল্যে কেনা সবজি রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে যেসব ব্যবসায়ী বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় আসছেন তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। কখনো কখনো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ঝুঁকি মাথায় রেখে ট্রাক মালিক ও ট্রাক চালকরা যেমন কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করছেন তেমন ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকির বিষয়টি ভেবে মূল্য নির্ধারণ করছেন। ফলে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বেশি অর্থ ব্যয় করা হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজির পাশাপাশি চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অবরোধের কারণে। রাজধানীর দোকানদাররা বলছেন, অবরোধের কারণে বেচাকেনা কম। মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের লাভেও টান পড়ছে। অবরোধ দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে যেভাবে পিষ্ট করছে তা দুর্ভাগ্যজনক। সবজি বিক্রি করে সমৃদ্ধির মুখ দেখার বদলে সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন অনেক কৃষক। অবরোধের কারণে বিদেশে সবজি রপ্তানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। রাজধানী ও প্রধান প্রধান নগরে পণ্য পাঠানো বিঘি্নত হচ্ছে অবরোধের কারণে। রাজনীতির অশুভ লড়াইয়ে কৃষকরা কোনো পক্ষের না হলেও তাদের পেটেই লাথি মারা হচ্ছে। প্রায় দুই সপ্তাহের অবরোধ কৃষি অর্থনীতিকে যেভাবে জিম্মি করে ফেলেছে তা অব্যাহত থাকলে অনেক চাষিই সবজি চাষে উৎসাহ হারাবে। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে অভ্যুদয়ের সে হাতছানি রয়েছে তা ধোয়াশা হয়ে উঠছে। গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ডেও আঘাত হানছে অবরোধ। রাজনীতিকরা দায়িত্বশীল হলে যেখানে অতি সহজেই সংঘাত এড়ানো সম্ভব, তখন কেন তা জিইয়ে রাখা হচ্ছে আমাদের বোধগম্য নয়। এ আত্দঘাতী প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর