বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

অমানুষদের রুখতে হবে

আইয়ামে জাহেলিয়ায় কন্যাশিশুকে কখনো কখনো জীবন্ত কবর দিত আরবের অসভ্য মানুষ। ইসলামের অভ্যুদয়ে সেই কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটে। শিশুকে আগুনে পোড়ানোর পৈশাচিকতা সেই অন্ধকার যুগেও ঘটেছে কিনা আমাদের জানা নেই। মানব সভ্যতার উৎকর্ষতার এই যুগে বাংলাদেশে রাজনীতির মন্দ খেলায় পেট্রলবোমার হাত থেকে শিশুও রক্ষা পাচ্ছে না। আড়াই বছরের ছোট্ট শিশু সাফির ওপরও পেট্রলবোমা ছোড়ার ঘৃণ্য নজির রেখেছে দোজখের কীটরা। চিকিৎসক দম্পতির সন্তান শিশু সাফিরের পা পুড়ে যায় ১৫ দিন আগে গরম পানিতে। গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে ড্রেসিং শেষে পুত্রকে নিয়ে তার মা-বাবা নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার পথে সেই বাসে ছোড়া হয় পেট্রলবোমা। বোমার আগুনে পুড়ে যায় শিশু সাফিরের দুই হাত ও মুখ। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তার বাবার হাত পুড়ে যায়। আগুন থেকে বাঁচতে জানালা দিয়ে নামতে গিয়ে তার মায়ের হাত ভেঙে যায়। আগুনে পুড়ে যায় তার দেহের কিছু অংশ। রাজধানীর লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে সাফির এখন চিকিৎসাধীন। তার বাবা-মা ব্যান্ডেজ হাতে বাঁধা অবস্থায় শিশুপুত্রের পরিচর্যা করছেন। তারা নিজেরাও গুরুতর অসুস্থ। তারপরও নিজেদের ব্যথা ভুলে কিসে পুত্রকে একটু স্বস্তিতে রাখা যাবে সেই চেষ্টাই করছেন তারা। শিশু সাফিরের ছোট্ট দেহের বড় অংশই এখন ব্যান্ডেজ বাঁধা। ব্যান্ডেজ বাঁধা ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে সে মা-বাবাকে অাঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। বাবা তার ছোট্ট শিশুর কান্না থামাতে তাকে প্রজাপতির গল্প, গান গেয়ে কিংবা কখনো দোয়া দরুদ পড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে প্রয়াস খুব একটা সফল হচ্ছে না। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লেও একটু পর জেগে ওঠে চিৎকার করে উঠছে। চিকিৎসক, বাবা-মা কিভাবে শিশুটির কষ্ট লাঘব করবেন কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না। বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় কারা জড়িত তা একমাত্র নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে। অবরোধের সময় একের পর এক বোমাবাজির ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের একমাত্র পরিচয় তারা অপরাধী। আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ও এমন অপরাধীর সংখ্যা খুব একটা বেশি ছিল ইতিহাস তা প্রমাণ করে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দিনই পেট্রলবোমার আঘাতে মানুষ পোড়ার যে ঘটনা ঘটছে, তা মানব সভ্যতাকেই সত্যিকার অর্থে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। প্রশ্ন ওঠে অপরাধীরা কি আসলেই মানুষ। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে। যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, আড়াই বছরের শিশুও যাদের রাজনীতির টার্গেটে পরিণত হয়, তারা তো মানুষ হতে পারে না- এই অমানুষদের রুখতেই হবে।

সর্বশেষ খবর