রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্ম

অহংকারী হওয়া উচিত নয়

মাওলানা মুহাম্মদ সাহেব আলী

একমাত্র আল্লাহ। অহংকার করার মতো নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। আল্লাহ ছাড়া আর কারোর অহংকারী হওয়ার সুযোগ নেই। দুনিয়ায় যারা অহংবোধের প্রকাশ ঘটায় তারা আল্লাহর হককে লঙ্ঘন করে। আল্লাহ চান প্রতিটি মানুষ বিনয়ীভাবে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হোক। তিনি বিনয়ীদের পছন্দ করেন। হজরত উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমরা বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন কর। কেননা আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ তার মর্যাদা সমুন্নত করেন। সে লোকদের দৃষ্টিতে মহান পরিগণিত হয়। আর যে ব্যক্তি গর্ব-অহংকার করে আল্লাহ তাকে হতাশ করেন। যদিও সে নিজেকে বড় মনে করে কিন্তু সে মানুষের দৃষ্টিতে নিচ ও মর্যাদাহীন হয়ে যায়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো হেলান দিয়ে আহার করতে দেখা যায়নি এবং তার পেছনে কখনো দুজন মাত্র লোককেও চলতে দেখা যায়নি (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)।

অর্থাৎ তিনি এতটা বিনয়ী ও নিরহংকার ছিলেন যে, কখনো হেলান দিয়ে আহার করেননি। তার নীতিও এমন ছিল না যে, তিনি আগে আগে যাবেন আর জনগণ তার পেছনে পেছনে যাবে। এমনকি তিনি দুজন লোককেও পেছনে রেখে হাঁটতে পছন্দ করতেন না। এ দুটি আচরণই উচ্চাভিলাষী ও অহংকারী লোকদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত।

বিনয়ী ও নম্রতা মানবিক গুণাবলির অন্যতম। আত্মগরিমামুক্ত হওয়াও মানবিক গুণাবলির মধ্যে পড়ে। মানুষের চরিত্রে এসবের সনি্নবেশ ঘটলে তাতে যেমন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা হয় তেমন সামাজিকভাবেও ভালো মানুষের সুনাম অর্জিত হয়। শ্রেষ্ঠ মানব রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিনয়ী ও নিরহংকার। তার উম্মত হিসেবে আমাদেরও এই গুণাবলিকে আত্মস্থ করতে হবে।

হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহতায়ালা মুত্তাকী, অমুখাপেক্ষী ও প্রচারবিমুখ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন (মিশকাত)।

এ হাদিসে গানী বা অমুখাপেক্ষী শব্দটির অর্থ আত্মনির্ভরশীল ও অল্পে তুষ্ট ব্যক্তিও হতে পারে এবং অভাবশূন্যতাও হতে পারে। যদি অভাবশূন্যতা ও প্রাচুর্যের সঙ্গে তাকওয়া ও খোদাভীতি যুক্ত থাকে তবে এটাও আল্লাহর তরফ থেকে এক বড় নিয়ামত, বিশেষত এ ধরনের লোক যখন খ্যাতি ও যশের কাঙ্গাল না হয়। অহংবোধ পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে অশান্তি ও অনৈক্যের মদদ দেয়। এতে মানুষের প্রতি অন্য মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধে ভাঙন ধরায়। আল্লাহ আমাদের অহংকারী হওয়া থেকে রক্ষা করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

 

 

সর্বশেষ খবর