বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

এনজিওর নামে প্রতারণা

সরকারের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙুক

সমাজকল্যাণের মহান ব্রত নিয়ে নন গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন বা এনজিওগুলো এ দেশে কাজ শুরু করে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের এনজিওগুলোর 'আকাশছোঁয়া' সাফল্যও সুবিদিত। ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য মোচনে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের সুনাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন এ সংস্থার কর্ণধার ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষুদ্র ঋণের পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারে ব্র্যাকের অবদান দেশের বাইরেও সুনাম কুড়িয়েছে। স্বাস্থ্য পরিচর্যায় গণস্বাস্থ্যের অবদানও সব মহলে স্বীকৃত। মানবাধিকার সংরক্ষণেও বেশ কয়েকটি এনজিওর আশাজাগানিয়া ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। সময়ের বিবর্তনে এনজিও অপব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে যথেচ্ছভাবে। এনজিওর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চলছে লাগামহীন প্রতারণা। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নামকাওয়াস্তে অনুমোদন নিয়ে মতলববাজ বেসরকারি সংস্থাগুলো যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের প্রধান আদর্শ-উদ্দেশ্য এখন একটাই- এনজিও করো টাকা মারো। অলাভজনক, সেবামূলক, সহায়তাকারী সংস্থা হিসেবে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বেশির ভাগ এনজিও লাভ-লোকসান, চক্রবৃদ্ধি সুদের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এদের একাংশ গণতন্ত্র ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতার নামে রীতিমতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে নানামুখী হস্তক্ষেপও তাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও কিছু বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সুরক্ষার নামে নানাভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজে লিপ্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। এনজিও কর্মকাণ্ডের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতারণা এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জেলা, উপজেলা এমনকি মাঠ পর্যায়েও শাখা কার্যালয় সাজিয়ে গুছিয়ে নানা বুলি আউড়িয়ে লোভনীয় সব কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে মতলববাজ সংস্থাগুলো সদস্য সংগ্রহের অভিযানে নামে। কখনো চাকরি দেওয়ার নামে জামানত হিসেবে, কখনো সঞ্চয় বা আমানত সংগ্রহের নামে জমা নেওয়া হয় লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা।

এক পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষের সর্বস্ব হাতিয়ে প্রতারক এনজিওগুলো লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে। মতলববাজদের অসৎ কর্মকাণ্ডে এনজিও নামটিই এখন বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপর সরকারের নজরদারি না থাকায় শিব গড়ার নামে বানর গড়ার কসরতই চলছে বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে সরকারের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর