শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

নিজের হাত এবং জিহ্বা থেকে অন্যকে নিরাপদ রাখুন

পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম

রসুলে কারিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে প্রকৃত মুসলমান হওয়ার বৈশিষ্ট্যাবলি বর্ণনা করেছেন, ওই সব বৈশিষ্ট্যাবলি যখন মানুষ নিজের মাঝে অর্জন করতে পারবে তখনই একজন মানুষ প্রকৃত মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে। কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত মুসলমানের গুণাবলি অর্জন করা ছাড়া একজন মানুষ কখনোই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। ওইসব গুণাবলির মধ্য থেকে অন্যতম একটি গুণ হলো- একজন মানুষকে প্রকৃত মুসলমান হতে হলে অবশ্যই তার হাত এবং মুখের অনিষ্ট থেকে অপর ভাইকে নিরাপদ রাখতে হবে। এক কথায় বিষয়টি এভাবে ব্যক্ত করা যেতে পারে- প্রকৃত মুসলমান হতে হলে মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন প্রকৃত মুসলমান সে-ই যার জিহ্বা এবং হাত থেকে সব মুসলমান নিরাপদ থাকে (বুখারি, কিতাবুল ইমান, হাদিস নম্বর-৯)।

অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসুলুল্লাহ! অমুক মহিলা এমন যে তার নামাজ, সদকা ও রোজার আধিক্য সর্বজনের মুখে আলোচিত। তবে সে মুখ দিয়ে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে জাহান্নামি। লোকটি বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! অমুক মহিলা এমন যে, তার নামাজ রোজার পরিমাণ কম বলে সবাই জানে, সে সদকা করলেও মাত্র পনিরের টুকরা সদকা করে। তবে সে মুখ দিয়ে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জান্নাতি। (মুসনাদে আহমাদ, খ২ পৃ.৪৪, মুসনাদে বাবযার, হাদিস ১৯০২, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৭৬৪, হাকেম, খ৪, পৃ ১৬৬, মুনযিরি হাদিস ৩৭৬৭ পৃ ৪৮৯)।

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি, যার হাত এবং মুখের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ নয় সে শুধু প্রকৃত মুসলমানই নয়, বিষয়টি এমন নয় বরং তার জন্য অপেক্ষা করছে জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব। সুতরাং আসুন আমরা এ মর্মে অঙ্গীকার করি যে, আমরা কোনো মানুষের মনে কষ্ট দিব না। শুধু মানুষই নয় বরং আল্লাহপাকের কোনো সৃষ্টির মনে কষ্ট দিব না। কারও ওপর জুলুম করব না, বরং সব সৃষ্টির ওপর দয়া করব। কেননা আল্লাহপাকের কোনো সাধারণ সৃষ্টির মনে কষ্ট দেওয়া আমাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে, আবার সামান্য কোনো সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন জান্নাতে যাওয়ার কারণ হতে পারে। এক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, একদা একটি কুকুর এক কুপের চারদিকে ঘুরছিল এবং প্রবল পিপাসার কারণে সে মৃত্যুর কাছে পৌঁছেছিল তখন বনি ইসরায়েলের ব্যভিচারিণীদের একজন কুকুরটির অবস্থা লক্ষ্য করল এবং তার পায়ের মোজার সাহায্যে পানি সংগ্রহ করে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের প্রতিদানে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৩২২১)।

অপর হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলা ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে দানা-পানি কিছুই দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে নিজ খুশিমতো পোকা মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৩২৩৬)।

উল্লিখিত হাদিস দুটির মাঝে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই আল্লাহপাক কুকুরের প্রতি দয়া করার কারণে যখন একজন পাপী মহিলাকে ক্ষমা করে দিলেন আর বিড়ালের প্রতি অবিচারের কারণে একজন মহিলাকে শাস্তি দিলেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের উপায় কী হবে। আমরা সাধারণ মাখলুক তো দূরের কথা, আল্লাহপাকের সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক মানুষের মনে কষ্ট দিচ্ছি। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করছি। ন্যূনতম স্বার্থের কারণে ভাই-ভাইকে, ছেলে বাবাকে পর্যন্ত হত্যা করে ফেলছে। এগুলো অত্যন্ত বর্বর কাজ এবং জঘন্যতম অপরাধ। সুতরাং আসুন আমরা সব মানুষই নয় সব মাখলুকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি। অন্যায় অবিচার, খুন-খারাবি বর্জন করে আল্লাহপাকের পছন্দনীয় পথে জীবন পরিচালিত করে পরকালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করে আল্লাহপাকের মহব্বত, ভালোবাসা এবং জান্নাত অর্জনে সচেষ্ট হই। আল্লাহপাক আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর