শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
মণিপুরি তাঁতশিল্প

সুদিন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আশাজাগানিয়া

সিলেটের মণিপুরি তাঁতশিল্পের সুনাম ছিল এক সময় দেশজুড়ে। সিলেট শুধু নয়, দেশের ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ হিসেবেও তা বিবেচিত হতো। দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা সিলেটে বেড়াতে যেতেন যেসব দেশি-বিদেশি পর্যটক, তারাও আকর্ষিত হতেন মণিপুরি তাঁতশিল্পের রং-বেরঙের কাপড়ে। কালের বিবর্তনে মণিপুরি তাঁতশিল্প তার অবস্থান হারিয়েছে। নকল কাপড়ের আধিপত্য এবং ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় মণিপুরি তাঁতশিল্পীদের বড় অংশ কাপড় তৈরির পেশা থেকে নিজেদের ফিরিয়ে এনেছে। শত শত বছর ধরে মণিপুরি তাঁতশিল্প যে সুনাম ধরে রেখেছে তা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তাঁতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায়। হতাশার মধ্যে আশার কথা মণিপুরি তাঁতশিল্পকে স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চলছে নানামুখী উদ্যোগ। মণিপুরি তাঁতশিল্পের সোনালি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন ১০০ নারী তাঁতশিল্পী। তারা ইতিমধ্যে গড়ে তুলেছেন ‘মোইরাং’ নামের প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নামে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ ফরহাদ খাঁ পুলের পাশে নিজস্ব বিপণন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শত নারীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ‘মোইরাং’ই নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে মণিপুরি তাঁতশিল্পীদের। এ প্রতিষ্ঠানটি নারীদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও কাজ করছে। স্মর্তব্য, মণিপুরি তাঁতশিল্পের সৃষ্টি ভারতের মণিপুর রাজ্যের মোইরাংয়ে। মণিপুরি কাপড়ের পাড়ে ত্রিকোণাকৃতির যে চিত্রটি দেখা যায় তাকেই বলা হয় মোইরাং। এ ঐতিহ্য ধারণ করে মণিপুরি তাঁতশিল্পীরা তাদের প্রতিষ্ঠানটির নাম দিয়েছেন ‘মোইরাং’। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরের ৭৫ ও সিলেটের ২৫- এই ১০০ নারী তাঁতশিল্পীর সমন্বিত উদ্যোগ এটি। উৎপাদন ও বিপণনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা মণিপুরি সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মকে তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী এ পেশায় উদ্বুদ্ধ করারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটে মণিপুরি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার এ উদ্যোগ আশাজাগানিয়া। আমাদের দেশের আরও কিছু এলাকার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে প্রতিকূল অবস্থার শিকার হয়ে। ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পও ধুঁকে ধুঁকে মরছে অসহায়ভাবে। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে মণিপুরিদের উদ্যোগ আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করলে তা হবে এক বিরাট অর্জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর