বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আশুরার নফল রোজার ফজিলত

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রশিদ

মহররম মাসকে নফল ইবাদতের উত্তম মাস হিসেবে ভাবা হয়। রমজানের ফরজ রোজার পর মহররমের নফল রোজার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর হজরত মুসা (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে আশুরার দিন এবং আগের অথবা পরের দিন রোজা পালনের হুকুম দেন। রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা পালন করতে দেখেন। বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিস অনুযায়ী ইহুদিরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান, এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ও তার উম্মতকে আল্লাহপাক নাজাত দান করেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে পানিতে ডুবিয়ে দেন। হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর এই কৃপায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এ দিনে রোজা পালন করেন। তাই ইহুদিরাও আশুরার দিনে রোজা পালন করে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের বলেন, হজরত মুসা (আ.)-এর নাজাতে কৃতজ্ঞতা আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। রসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরপর থেকে আশুরায় নিজে রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের রোজা রাখার হুকুম দান করেন। আশুরার রোজা পালনের মাধ্যমে বেশি বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত আদম (আ.) থেকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সব নবী মহররম মাসকে বিশেষ সম্মান দিয়েছেন। বিশেষত আশুরার দিনে রোজা ও ইবাদত বন্দেগি করেছেন তারা। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে মুসলমানদের পার্থক্য রচনায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা অর্থাৎ ১০ মহররমের পাশাপাশি ৯ মহররম অথবা ১১ মহররম রোজা পালনের নির্দেশ দেন।

১০ মহররম আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারবালার প্রান্তরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় নাতি, হজরত আলী (রা.) ও বিবি ফাতেমা (রা.)-এর প্রিয় পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)সহ নবী বংশের শাহাদাতবরণের ঘটনায়। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামী ইমান-আকিদা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার জন্য ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ জন্য তার ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়। কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনী হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার পরিবারের সদস্য ও সঙ্গীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের বদলে সত্য ও ন্যায়ের জন্য শাহাদাতবরণকে বেছে নেন। মহররম মাসে আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-এর গুনাহ মাফ করেছিলেন। নূহ (আ.) মহাপ্লাবণ থেকে নাজাত পান, এ দিনে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করলে আল্লাহ তাকে সেখান থেকে রক্ষা করেন। আরও অনেক নবী এই দিনে আল্লাহর রহমত লাভ করেন।  এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল এবং এই দিনেই ধ্বংস হবে। ফলে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আশুরা পালন করা উচিত।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর