শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দশ মহররম এক ঐতিহাসিক দিন

মুফতি আমজাদ হোসাইন

দশ মহররম এক ঐতিহাসিক দিন

আরবি ১২ মাসের মধ্যে প্রথম মাসটির নাম হলো মহররম (সম্মানিত) মাস। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন থেকে। তম্নধ্যে চারটি (জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব) সম্মানিত মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সূরা তাওবা : ৩৬) অর্থাৎ সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই বছরে আরবি ১২ মাস ধার্য হয়েছে, যা লওহে মাহফুজে লেখা রয়েছে। তার বাস্তবায়ন আকাশ-জমিন সৃষ্টির দিন থেকে হয়েছে। তবে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব সম্মানিত ও বরকতপূর্ণ মাস। ইমাম জাসসাস (র.) ‘আহকামুল কোরআন’ গ্রন্থে উলে­খ করেন। পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সম্মানিত চার মাসের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য মাসের নেই। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করলে অন্য মাসগুলোতেও ইবাদত-বন্দেগির তৌফিক ও সাহস লাভ করা যায়। এ মাসগুলোর মধ্যে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে অন্যান্য মাসেও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এমনকি মহররম মাসের ১০ তারিখ, যাকে আমরা আশুরার দিন হিসেবে জানি। বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সৃষ্টির কারণে দিনটি মানুষের মাঝে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছে। আল্লামা ইবনে নাবাতা (র.) তার খুতবায় উলে­খ করেন, এদিনে আল্লাহতাআলা হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল করেন। এদিনেই হজরত নূহ (আ.) ও তার সঙ্গীরা মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পেয়ে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) জালেম নমরুদের আগুন থেকে, হজরত মূসা (আ.) ও বনী ইসরায়েলরা ফেরাউন এবং তার বাহিনী থেকে নাজাত লাভ করেন। হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহতাআলা এদিনেই তাঁর কাছে উঠিয়ে নেন। এ ধরনের বহু বড় বড় ঘটনার কারণে দিনটির সম্মান ও মর‌্যাদা সুস্পষ্ট। ঘটনাক্রমে এদিনেই কারবালার প্রান্তরে রসুল (সা.)-এর আদরের নাতি, কলিজার টুকরা, নয়নের মণি ইমাম হোসাইন (রা.) নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। যা অত্যন্ত নির্মম, নির্দয় ও দুঃখজনক স্মৃতি।

 

মানব ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছে। কিন্তু উলি­খিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, এদিনের সম্মান শুধু কারবালার ঘটনার কারণেই নয়, বরং তার বহু ঐতিহাসিক কারণ। রসুল (সা.)-এর বাণী ও আমল রয়েছে। হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে। রসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। এসে দেখলেন এখানের ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তিনি জানতে চাইলেন, এরা এদিনে রোজা রাখে কেন? উত্তরে রসুল (সা.)-কে জানানো হলো, যেহেতু এদিনে হজরত মূসা (আ.) ও বনী ইসরায়েলিরা সমুদ্র পার হয়েছে এবং ফেরাউন ও তার বাহিনী থেকে মুক্তি পেয়েছে, তার শুকরিয়া হিসেবে তিনি ও বনী ইসরায়েলিরা এদিনে একটি রোজা রাখত। তাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে ইহুদিরাও এদিনে রোজা রাখতে শুরু করেছে, তার ধারাবাহিকতায় মদিনার ইহুদিরাও রোজা রাখে। রসুল (স.) বললেন, আমরা তোমাদের (ইহুদিদের) থেকে মূসা. (আ.)-এর অনুসরণ বেশি করব। তিনি নিজেও এদিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখতে বলেছেন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর