শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আশুরার গুরুত্ব ও আমল

মুফতি মো. ওলিউল্লাহ পাটওয়ারী

আশুরার গুরুত্ব ও আমল

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় এসে দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এ দিনে রোজা রাখছে। প্রিয় নবী (সা.) তাদের রোজার কারণ জানতে চাইলেন, তারা বলল এ দিনে হজরত মূসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এ দিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে উদ্ধার করে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যায়। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এদিন রোজা রাখে। মহানবী (সা.) বললেন, মূসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। অতঃপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মহররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ, তবে এ রোজাতে ইহুদিদের সঙ্গে অমিল রেখ (ইহুদিরা আশুরার রোজা একটি রাখে) তোমরা (দুটি রেখ) তার আগের দিন অথবা পরের দিনও রোজা রেখ। রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগেও আশুরায় রোজা রাখার প্রচলন ছিল। আশুরার দিনের আরেকটি আমল হলো নিজের পরিবাবের জন্য খরচের ব্যাপারেও নিজের হাতকে প্রশস্ত করা। রসুল (স.) বায়হাকি শরিফের মধ্যে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবারের প্রতি খরচের হাত প্রশস্ত করবে আল্লাহতায়ালা তার ব্যাপারে সারা বছর (রিজিক) প্রশস্ত করবেন’। মানবজাতির সৃষ্টি হয় আদম (আ.) থেকে। তারই রক্তের ধারায় কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষ সৃষ্টি হতে থাকবে। আর মানুষের জন্যই আসমান-জমিন, চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র মোটকথা সব বস্তুও সৃষ্টি হয়েছে। অতএব বলা যেতে পারে যে, আদম (আ.)-কে কেন্দ্র করেই সব বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং এই সৃষ্টির দিনটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এ আশুরায় আদম (আ.)-এর দোয়া কবুলের মর‌্যাদা লাভ করেছিলেন। এ আশুরার দিনেই হজরত ইদরিস (আ.) দুনিয়া থেকে সরাসরি বেহেশতে গমন করেন। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা মারইয়ামের ৫৬-৫৭নং আয়াতে বলেন, ‘স্মরণ করুন ইদরিসের কথা, যে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী এবং আমি তাকে উচ্চে উন্নীত করেছিলাম। ১০ মহররমের আরেকটি ঘটনা হলো নূহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ে ভেড়া। নূহ (আ.)-এর জামানায় মানুষ আল্লাহর ইবাদত ভুলে গিয়ে মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এসব মানুষের সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য তখন আল্লাহপাক নূহ (আ.)-কে নবী করে পাঠালেন। তিনি সাড়ে নয়শ বছর যাবৎ মানুষকে শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করতে আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু কয়েকজন লোক ছাড়া কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। বরং তাকে নানাভাবে কষ্ট দিতে লাগল। দৈহিকভাবে তাকে নির‌্যাতন করা হতো। কাফেররা তাকে সারা দিন প্রহার করত এবং রাতের বেলায় মৃত ভেবে চলে যেত। পরদিন যখন তিনি চেতনা ফিরে পেতেন তখন আবার তিনি তাদের ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন। কিন্তু তার আহ্বানে তারা সাড়া না দিয়ে তাকে পাগল বলে বিদ্রুপ করতে লাগল। তিনি খুব দুঃখিত হলেন। পবিত্র কোরআনের সূরা হুদের ৩৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘নূহের প্রতি ওহী হয়েছিল, যারা ইমান এনেছে তারা ব্যতীত তোমার কওমের অন্য কেউ কখনো ইমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে তার জন্য তুমি দুঃখিত হইও না। তাদের মধ্যে আর যখন কেউ ইমান আনবেই না তখন নূহ (আ.) তাদের জন্য বদ দোয়া করলেন। সূরা নূহ এর ২৬-২৭নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় নূহ আরও বলেছিল, হে আমার রব। পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্যে থেকে একটি গৃহবাসীকেও ছেড়ে দিও না। তুমি তাদের ছেড়ে দিলে ওরা তোমার বান্দাদের গুমরাহ করবে এবং জম্নদিতে থাকবে কেবল গুনাহগার ও কাফের। হে আমার রব। তুমি ক্ষমা কর আমাকে আমার পিতামাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে তাদের এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের আর জালিমদের শুধু ধ্বংসই বৃদ্ধি কর। অতঃপর আল্লাহ সুবাহানাহু ওতাআলা তার বদ দোয়া কবুল করলেন। এবং বললেন তুমি আমার তও্বাবধানে ও আমার ওহী অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ কর এবং যারা সীমা লঙ্ঘন করেছে তাদের ব্যাপারে তুমি আমাকে অনুরোধ কর না। তারা ডুবে মরবে। সূরা ১১ হুদ, ৩৭ আয়াত। অতঃপর নূহ নৌকা বানাতে লাগলেন। কিন্তু তার কওম কখনো তাকে বিদ্রুপ করা থেকে বিরত হলো না। নূহ (আ.) এর নৌকায় যত আরোহী ছিল তারা আল্লাহপাকের দয়ায় বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু যারা অল্লাহ ও আল্লাহর নবীকে অস্বীকার করেছে তারা ডুবে মরেছে। অথৈ পানিতে নৌকা ভাসতে লাগল। ভাসতে ভাসতে ৪০ দিন অতিক্রম হলো। অতঃপর পানি শুকাতে লাগল। নৌকা এসে জুদি পাহাড়ে থামল। এ দিনটিও ছিল আশুরার দিন। সর্বশেষ ৬২ হিজরি সনে কুফার ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী দৌহিত্র হজরত হোসাইন (সা.)-এর শাহাদাত এ দিনটিকে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।

লেখক : খতিব- দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, বায়তুনূর জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর