বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শুরুটা

তসলিমা নাসরিন

শুরুটা

১৯৭৫ সাল। চিত্রালীতে আমার লেখা ছাপা হয়ে গেল। বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেল, হিপ হিপ হুররের তোড়ে ভাসতে থাকি। আমার নামখানি পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে, অবিশ্বাস্য কাণ্ড বটে! ছোটদা কিছুক্ষণ হাঁ হয়ে থেকে তোতলালেন, বাহ ত-তর লে-লেখা ছাপা হইয়া গে-গেল! যেন আমি সাংঘাতিক অসম্ভব কিছু সম্ভব করে ফেলেছি! আমার ঠোঁটে সারাক্ষণই রাজ্য জয় করার হাসি মিছরির গায়ের লাল পিঁপড়ের মতো লেগে থাকে। বাবাকে বাদ দিয়ে পত্রিকাটি সবার চোখের সামনে একাধিকবার উঁচু করি, এমনকি জরির মার চোখের সামনেও। জরির মা অবাক হয়ে পত্রিকাটির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এইডারে ত ঠোঙ্গার কাগজের মতোই দেহা যায়’। অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর আরও একটি ঘটনা ঘটে, এটিও অবিশ্বাস্য। পরের সপ্তাহে দেখি আমার লেখার প্রশংসা করে এবং আপত্তি জানিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা চিত্রালীতে ছাপা হয়েছে। আমার উৎসাহ তখন ভাত ফোটার মতো টগবগ করে ফোটে। এরপর পাঠকের পাতায় তো বটেই, চিঠিপত্র বিভাগেও লেখা পাঠানো শুরু করি। চিত্রালীর ধাঁচে শরীর সাজিয়ে পূর্বাণী নামের নতুন একটি পত্রিকা উঁকি দিচ্ছে শিল্প-সাহিত্য-বিনোদনের জগতে। পূর্বাণীকে হেলা করব, এমন হৃদয়হীন আমি নই। চিত্রালী-পূর্বাণী, এ দুটো পত্রিকা প্রতি সপ্তাহে আমার না হলেই নয়। চিত্রালী বা পূর্বাণীতে আমার লেখা থাকলে ঠোঁটে চিকন হাসি ঝুলিয়ে ছোটদা প্রতি সপ্তাহে বলেন, ‘হ হইছে ছাপা, আর না থাকলে কি রে তর লেখা ত ছাপল না’! চন্দনাকে এই জগতটিতে টেনে নামাতে হয় না, আড়ম্বর দেখে ও নিজেই নামে। আমি যত না লিখি, আমাকে নিয়ে লোকে তার চেয়ে বেশি লেখে। রীতিমতো আসরের অন্যতম একজন হয়ে উঠি। চিত্রালীতে চিঠির উত্তর যিনি দেন, যাঁকে সবাই উত্তরদা বলে ডাকে, রসের কলসে চুবিয়ে তাঁর উত্তর তোলেন। লিখতে লিখতে সেই কোনও দিন দেখা না হওয়া উত্তরদাকে আমার আপন দাদার মতো মনে হতে থাকে। ইয়াসমিনের সঙ্গে পেনসিল নিয়ে ছোটখাটো একটি চুলোচুলির যুদ্ধ হয়ে গেল, সবার আগে উত্তরদাকে চিঠি লিখে জানাই আজ আমার মন ভালো নেই। মনে ফুর্তি হলেও তাঁকে জানানো চাই সবার আগে। গোলপুকুর পাড়ের আড্ডা থেকে ছোটদা একটি বাক্য তুলে একদিন অবকাশে বিতরণ করলেন ‘কুড়িটা বসন্ত পার হয়ে গেল, কোনও কোকিল তো দূরের কথা, একটা কাকও ডাকল না।’ বাক্যটি লুফে নিয়ে উত্তরদাকে জানিয়ে দিই, ঘটনা এই। তিনি এমনই মর্মাহত শুনে যে ঢাকা শহরের সবগুলো কাককে ময়মনসিংহের দিকে ধাওয়া করলেন, যেন কা কা রব তুলে আমার বসন্তকে সার্থক করে এবং তিনি এবং তাঁর শহরবাসী কাকের যন্ত্রণা থেকে এই জনমের মতো মুক্তি পান। ধুত্তোরি, আমি কি এমনই বুড়ি যে কুড়ি হব! ও তো মজা করতে! কেবলই মজা করার জন্য সে আসর নয়, যথেষ্ট গুরুগম্ভীর কথাবার্তাও হয়। লোকের সত্যিকার মান অভিমান, দুঃখ শোক, প্রেম বিরহ, ক‚টকচাল এমনকি সংসারের ঝুটঝামেলারও মীমাংসা হয় পত্রিকার পাতায়। পাঠকসংখ্যা এত ব্যাপক যে তখন দেশের প্রতিটি শহরে চিপাচস নামে চিত্রালী পাঠকপাঠিকা সমিতি খোলা শুরু হলো। ময়মনসিংহে চিপাচসের কর্ণধার বনে বসলেন স্বয়ং ছোটদা। হতেই হবে, লেখক না হলেও পাঠক তো তিনি। পড়াশোনা লাটে উঠেছে, কাজ নেই কম্ম নেই, তাঁর পক্ষেই সম্ভব চিপাচস নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা পড়ে থাকা। চিপাচসের একটি সভাও একদিন হয়ে গেল টাউন হলের মাঠে। ঘন সবুজ মাঠের বটবৃক্ষ ছায়ায় বিকেলের সভাসমিতি জমে ওঠে বেশ। এক বটতলায় চিপাচস গড়ে তোলা হচ্ছে, অন্য বটতলায় ধাড়ি ধাড়ি ছেলেমেয়ে নিয়ে বসেছে পুরোনো কচিকাঁচার মেলা। কাঁচারা এদ্দিনে পেকে লাল, কিন্তু কাঁচা নামটি খোয়াতে নারাজ। ইত্তেফাক পত্রিকার রোকনুজ্জামান খান যাঁকে কচিকাঁচারা দাদাভাই বলে ডাকে, পত্রিকায় কচিকাঁচার আসরও যেমন খুলেছেন, কচিকাঁচাদের সংগঠনও গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন শহরে। সংস্থা সমিতি সংগঠন পরিষদ এসবের কমতি নেই ময়মনসিংহ শহরটিতে। ছোটদার কাছেই খবর জোটে শহরের এখানে ওখানে নানা রকম আলোচনা অনুষ্ঠান হচ্ছে, সাহিত্য সভা হচ্ছে, নাচ গান নাটক হচ্ছে। শুনে ইচ্ছের জিভে লোল জমে। চিপাচসের সভা থেকে ফিরলে ছোটদাকে পই পই করে জিজ্ঞেস করি, কে কে এসেছিল, দেখতে কেমন? কেউ কি কিছু বলল, কী বলল? ছোটদা এক এক করে নাম বলেন, এক এক করে পরিচয়। এর ওর বলা দুএকটি শব্দ বা বাক্য উপরোধে ঢেঁকি গিলতে গিলতে শোনান। ময়মনসিংহের পদ্মরাগ মণি, চিত্রালীর আসরে নজর কাড়া মেয়ে, সগৌরবে চিপাচসের সভায় উপস্থিত থাকলেও আমার আর চন্দনার পক্ষে সম্ভব হয়নি পুরুষমানুষের ভিড়ভাট্টায় ছায়া সুনিবিড় শান্তির মাঠটির শীতল ঘাসে পা ফেলার অনুমতি পাওয়া। পুরুষ-আত্নীয় আর পুরুষ-শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের আড্ডায় বা সভায় আমাদের অবাধ যাতায়াতের কোনও সুযোগ নেই, যতই আমরা যাওয়ার জন্য গোঁ ধরি না কেন।

 

চিত্রালীতে লেখা ছাপা হওয়ার পর থেকে আমার নামে অবকাশের ঠিকানায় বেশ কয়েকটি চিঠি আসে, পত্রমিতালির আবেদন দেশের বিভিন্ন শহর থেকে। এমন কখনও ঘটেনি, ডাকে কোনও চিঠি আমার জন্য আসেনি আত্নীয়স্বজনের বাইরের কারও, কোনও অচেনা কারও। চিঠি পেয়ে রীতিমতো উত্তেজিত আমি। পত্রমিতালি ব্যাপারটি অভিনব একটি ব্যাপার, কেবল চিঠিতে দূরের মানুষদের চেনা, চিনতে চিনতে বন্ধু-মতো, আত্নীয়-মতো হয়ে যাওয়া। ঢাকা থেকে জুয়েল, সিলেট থেকে সাব্বির, চট্টগ্রাম থেকে শান্তনু পত্রমিতা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিই। মেয়েরা ছেলেরা চমৎকার বন্ধু হতে পারে এই বিশ্বাসটি আমার মনে একটু একটু করে বাসা বাঁধতে থাকে। আত্নীয়তার বাইরে সম্পর্কের যে ব্যাপারটি আমি দেখেছি, তা প্রেম, ছোটদা আর দাদার জীবনে হয়েছে, রুনুখালা ঝুনুখালার জীবনেও। প্রেমের উদ্দেশ্য একটিই, বিয়ে। দাদার পক্ষে শীলাকে সম্ভব হয়নি, ছোটদা সম্ভব করে ছেড়েছেন। এর বাইরে ছেলে মেয়েতে কোনও রকম সম্পর্ক আমি আমার চেনা কারও মধ্যে দেখিনি। নাটক উপন্যাসে থাকে, সিনেমার গল্পে থাকে। আমি যে জগতে বাস করি, সে জগতে এর কোনও স্থান নেই। কিন্তু আমার কাছে আসা চিঠিগুলোই এই প্রথম অন্যরকম কিছু ঘটিয়ে ফেলে। পর পুরুষের চিঠি কিন্তু কোনও প্রেমের চিঠি নয়, কারও সঙ্গে আমার কোনও বিয়ের কথা হচ্ছে না, কিন্তু চিঠি। ডাকে আসা পত্রমিতাদের চিঠি বাড়িতে অনেকটা দল বেঁধে পড়া হয়। ডাকপিয়ন যার হাতে চিঠি দিয়ে যায়, সে ই পড়ে প্রথম। তারপর যার চিঠি তাকে দিতে গিয়ে চিঠির কথাগুলোও বলে দেয়, যে দেয়। জুয়েলের একটি চিঠি এলো, ইয়াসমিন খামখোলা চিঠিটি আমার হাতে দিতে দিতে বলল, ‘জুয়েল জানতে চাইছে তোমার কার গান পছন্দ, হেমন্তর না কি মান্না দের’। সাব্বির পাতার পর পাতা ধর্মের কথা লেখে, ছোট ছোট ধর্মপুস্তিকাও উপহার পাঠায়, তার চিঠি এলো তো ছোটদা আমার পড়ার আগে সে চিঠি পড়ে নিয়ে ছুঁড়ে দেন, ‘যা পড়, মুন্সি বেডার চিডি পড়’। চিঠি ব্যাপারটি যে ব্যক্তিগত, তা আমার তখনও বোঝা হয়নি। পত্রমিতালির ব্যাপারটি চন্দনাকে সংক্রামিত করেছে পরে, দাদাকেও। দাদা ঢাকার এক মেয়ে সুলতানার সঙ্গে পত্রমিতালি শুরু করলেন হঠাৎ। অদ্ভুত সুন্দর হাতের লেখা সুলতানার। চিঠি এলে দাদা আমাদের সবাইকে ডেকে সুলতানার হাতের লেখা দেখান। কেবল দেখান না, আমাদের সামনে বসিয়ে চিঠি পড়ে শোনান। পড়ে চিঠির উপর হাত বুলোতে বুলোতে বলেন, ‘মেয়েটা নিশ্চয়ই দেখতে খুব সুন্দরী’। দাদার বিশ্বাস যার হাতের লেখা এত সুন্দর, যার চিঠির ভাষা এমন কাব্যময়, সে প্যারাগন অব বিউটি না হয়েই যায় না।

চন্দনা চিত্রালী আর পূর্বাণীর বাইরে আরও একটি পত্রিকা পড়তে শুরু করেছে, বিচিত্রা। বিচিত্রার পাঠকের পাতায় ওর একটি লেখাও ছাপা হয়েছে। পুলিশবাহিনীতে মহিলা নেওয়ার খবর শুনে চন্দনা মহিলা পুলিশের পোশাকের একটি প্রস্তাব দিয়েছে, বোরখা, বোরখার তলে থাকলে ধর্মও থাকল আর চোর ছ্যাঁচড়ের কাজ-কর্ম চোখের ফুটো দিয়ে দেখাও গেল, পথচারী কারও পুলিশ বলে সন্দেহও হবে না। বিচিত্রা আবার ওর লেখাটির সঙ্গে এক বোরখাওয়ালির কার্টুন এঁকে দিয়েছে। ইশকুলে যাওয়ার রিকশাভাড়া থেকে চার আনা ছ’আনা বাঁচিয়ে চিত্রালী পূর্বাণী কিনি, বিচিত্রা কেনার পয়সা জোটানো সবসময় সম্ভব হয় না। দাদার কাছে হাত পেতে রাখি। পাতা হাত দেখতে দাদার আনন্দ হয়, কদাচিৎ ফেলেন ওতে কিছু, ও দিয়েই নেশাখোরের মতো বিচিত্রা কিনে নিই। কিনে নেওয়া মানে ইয়াসমিনকে নয়ত জরির মাকে কালো ফটকের কাছে দাঁড় করিয়ে অথবা নিজেই দাঁড়িয়ে হকার দেখলেই ডাকিয়ে কেনা। হকার না এলে ইয়াসমিনকে গাঙ্গিনারপাড় মোড় থেকে কিনে আনতে পাঠাই। ডাঙ্গর হয়েছি বলে রাস্তায় একা হাঁটা আমার বারণ। ইয়াসমিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি হয়নি, তাই দুঃসময়ে ওরই ওপর ভরসা করতে হয় আমাকে। পত্রিকা কেনার খরচই তো শুধু নয়, পত্রিকার জন্য লেখা আর পত্রমিতাদের চিঠির উত্তর পাঠাতেও খরচা আছে। ছোটদার হাতে চিঠি দিলে ডাকটিকিটের পয়সাও গুনে গুনে দিতে হয়। দাদার মেজাজ বিগড়ে থাকলে অগত্যা শিশিবোতলকাগজ। অবকাশের গা ঘেঁষে তিনটি রাস্তা চলে গেছে তিন দিকে, একটি গোলপুকুরপাড়ের দিকে, আরেকটি দুর্গাবাড়ির দিকে, আরেকটি গেছে সেরপুকুর পাড়ের দিকে। এই তিন রাস্তায় সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনই সুর করে ফেরিঅলা হেঁকে যায়। শাড়িকাপড়অলা, বাদামঅলা, চানাচুরঅলা, আচারঅলা, চুরিফিতাঅলা, আইসক্রিমঅলা, হাওয়াই মিঠাইঅলা, শাকসবজিঅলা, ঘিঅলা, মুরগিঅলা, কবুতরঅলা, হাঁসঅলা, কটকটিঅলা, মুড়িঅলা, শিশিবোতলকাগজঅলা। শিশি-বোতল-কাগজ ডাকটি শুনলেই হাতের কাছে যে ই থাকে পাঠাই দৌড়ে ধরতে ব্যাটাকে। ব্যাটার মাথায় থাকে বড় ঝাঁকা। মাথা থেকে ঝাঁকা নামানোর আগে দরাদরি চলে, কত? পত্রিকা তিন টাকা সের, বইখাতা দুই টাকা। কী কন তিন টাকা! চাইর টাকা কইরা নিলে কন। চাইর টাকা বেশি হইয়া যায়, সাড়ে তিন টাকাই দিয়েন। পাল্লা পাত্থর ঠিক আছে? দেইখা লইয়েন। ঝাঁকা নামিয়ে শিশিবোতলকাগজঅলা বারান্দায় বসলে শোবার ঘরের খাটের তলায় রাখা পুরোনো পত্রিকা মায়া কাটিয়ে নিয়ে এসে সামনে দিই। খুঁজে খুঁজে পুরোনো বইখাতাও নিয়ে আসি। বিক্রি করে দশপনেরো টাকা হয়। দশপনেরো টাকাই নিজেকে রাজা বাদশাহ মনে করার শক্তি জোগায়। ছোটদাও বিক্রি করেন পত্রিকা, মাও করেন পুরোনো শিশিবোতল জমিয়ে রেখে, উঠোন ঝাঁট দিতে গিয়ে পাওয়া ছেঁড়া কাগজের টুকরোও ধুলো ঝেড়ে জমা করে রেখে। ভাঙা শিশি আর ছেঁড়া কাগজ থেকে যে দু’পয়সা আয় করেন মা, তা তোশকের তলায় অথবা আঁচলের কোণায় বেঁধে রাখেন যা আমার ছোটদার আর ইয়াসমিনের বিষম হাহাকার থামাতে কোনও এক সময় কাজে লাগে। চন্দনাকে দারিদ্র্য এমন কষাঘাত করে না, পণ্ডিতপাড়ার একটি সবুজ টিনের ভাড়া বাড়িতে থেকেও চন্দনা দিব্যি পত্রিকার টাকা জুটিয়ে নেয় প্রতি সপ্তাহে। চন্দনা পুরুষভরা টাউনহল প্রাঙ্গণে না যেতে পারুক, কিন্তু বিস্ময়কর কাণ্ডও হঠাৎ হঠাৎ ঘটিয়ে ফেলতে পারে, খুব ভোরবেলা কাকপক্ষী জাগার আগে ও একদিন চলে এলো অবকাশে ওর ছোট ভাই সাজুর সাইকেল চালিয়ে। চন্দনাকে দেখে আমার হৃদয়ে খুশি উথলে ওঠে। বাড়ির সবাই হুড়মুড় করে বিছানা ছেড়ে হাঁ হয়ে চন্দনার দিকে তাকিয়ে রইল। কত বড় দুঃসাহসী হলে মেয়ে হয়ে সাইকেল নিয়ে শহরের রাস্তায় বের হতে পারে, সে ভোর হোক কী সুনসান মধ্যরাত হোক তা অনুমান করে সবাই বিমূঢ় বিস্মিত। চন্দনাকে ভেতরঘরে বসিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে চালের রুটি আর মাংস গরম করে এনে মা ওকে পাশে বসিয়ে খাওয়ালেন। নাকে মুখে গুঁজে চন্দনাকে অবশ্য দৌড়োতে হলো, রাস্তায় লোক বের হওয়ার আগেই বাড়ি পোঁছতে হবে ওকে। চন্দনা যখন সাইকেলে চড়ে ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় চুল উড়িয়ে চলে যাচ্ছিল, কালো ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিলাম। পৃথিবীতে ওই দৃশ্যের চেয়ে চমৎকার আর কোনও দৃশ্য আমার দেখা হয়নি। যেন সাইকেলে চুল উড়িয়ে চলে যাওয়া মেয়েটি চন্দনা নয়, আমি। আমার ইচ্ছে করে চন্দনার মতো সাহসে ভর করে সারা শহর ঘুরে বেড়াতে সাইকেলে।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা

 

সর্বশেষ খবর