শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইসলাম ও মানবাধিকার

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইসলাম ও মানবাধিকার

ইসলাম মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসলামে মানবাধিকারকে আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার হিসেবে ভাবা হয়। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে ন্যায়বিচারের বিকল্প নেই। যে কারণে ইসলামে ন্যায়বিচারের ধারণাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকিবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ, যদিও ইহা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।’ মানুষের মর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি পদক্ষেপ হলো ছোট-বড় ভেদাভেদের অমানবিক প্রাচীর ভেঙে ফেলা। আজকের জরাজীর্ণ পৃথিবীতে যে অশান্তি, অনাচার, অসাম্য, হিংসা-বিভেদ, মানহানি, অরাজকতা ও খুনাখুনি চলছে তা থেকে মানবতাকে বাঁচাতে হলে এবং দুনিয়ার বুকে মানবিকতার বিজয় নিশান উড়াতে হলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রবর্তিত আদর্শ অনুসরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাম্য ও মৈত্রীর এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সেই নবীর উম্মত মুসলমানরাই আজ বিশ্বের সর্বত্র চরম বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। অথচ আজও মুসলমানরা নবীর আদর্শ লঙ্ঘন করে কোথাও অমুসলিমদের ওপর কোনো অত্যাচার-নিপীড়ন করছে এমন নজির পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। আজকের দুনিয়ার অমানবিকতার অন্যতম বিষয় তুচ্ছ রাজনৈতিক স্বার্থে অসহায় ও নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। পশ্চিমা জাতিগুলো তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্য হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে মেরে ফেলতে পর্যন্ত দ্বিধাবোধ করে না অথচ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসহায়, দুর্বল ও পীড়িত মানুষের অধিকার ছাড়া অন্য কিছুই কল্পনা করতে পারেননি।

 

 

তাদের প্রতি সর্বদাই ছিলেন সদয় ও মহানুভব। পৃথিবীর আদি থেকে আজ পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে আর যত মানুষ আসবেন সবার থেকেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পাপ, অন্যায়, অপরাধ যাকে কোনো দিন স্পর্শ করতে পারেনি। তার আচরণ, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, চরিত্র মাধুর্য সবকিছু মানুষকে মুগ্ধ করেছে। সৎ ও মানবীয় গুণাবলী তার চরিত্রে বর্তমান ছিল। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিহাসের পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ তুলনাহীন একটি জাতির, একটি সাম্রাজ্যের এবং ধর্মের ত্রিমুখী প্রতিষ্ঠাতা। নিরক্ষর হয়েও তিনি আল্লাহর কাছ থেকে নাজিল হওয়া এমন একটি গ্রন্থ বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়ে গেছেন যা বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা। আইনবিদদের জন্য একটি আইন বিশ্বকোষ, ভাষাবিদদের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ ব্যাকরণ গ্রন্থ। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দিষ্ট কোনো গোত্রে, সম্প্রদায় বা জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়নি বরং গোটা মানব জাতিকে মুক্তির পথ দেখানোর জন্যই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলে গেছেন, তোমাদের মাঝে দুটো জিনিস রেখে গেলাম তোমরা এই দুটো জিনিস আঁকড়ে ধরলে পথভ্রষ্ট হবে না। এক কোরআন ও দুই হাদিস। এ ঘোষণার মাধ্যমে মুসলমানরা যাতে পথভ্রষ্ট না হয় সে নির্দেশনাই তিনি উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য দিয়েছেন। বিদায় হজে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভাষণ দেন তা মানবাধিকারের ইতিহাসের এক স্মরণীয় ঘটনা।  মানব সমাজকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের পরস্পরের জীবন, সম্পদ এবং সম্ভ্রম তোমাদের (অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে) পবিত্র, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস এবং শহর পবিত্র। বুখারি।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর