শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রিয় নবীর সাধারণ জীবনযাপন

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

আজকের পৃথিবী কত আনন্দময়। কত আড়ম্বরপূর্ণ। আমাদের জীবন ও চালচলন কত জৌলুসপূর্ণ। আমরা কত আরামপ্রিয়। সুন্দর বাড়িতে থাকি। ভালো খাবার খাই। নরম বিছানায় ঘুমাই। ফ্যান-এসি ছাড়া থাকতে পারি না। একটু কষ্ট সহ্য হয় না। যার উছিলায় আল্লাহতায়ালা এই আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই মহামানব রসুলে আরাবী (সা.)-এর জীবনযাপন কেমন ছিল তা কি আমরা কখনো জেনেছি বা জানার চেষ্টা করেছি? হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার-পরিজন পরপর দুই বেলা জবের রুটি দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি। এ অবস্থায়ই রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়েছে (বুখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ একবেলা খেয়েছেন তো আরেক বেলা না খেয়ে থেকেছেন। এই ছিল বিশ্বনবীর ঘরের অবস্থা। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গমন করে দেখলাম, তিনি একটি খেজুর পাতার চাটাইয়ের ওপর শায়িত আছেন। চাটাইয়ের ওপর কোনো চাদর বা বিছানা ছিল না। যাতে তাঁর পবিত্র দেহে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি ঠেস দিয়েছিলেন খেজুরের আঁশ ভর্তি একটি চামড়ার বালিশে। আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আপনার উম্মতকে সচ্ছলতা দান করেন। পারস্য ও রোমের লোকদের সচ্ছলতা প্রদান করা হয়েছে। অথচ তারা কাফির। আল্লাহতায়ালার ইবাদতবিমুখ। তার এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র ওমর! তুমি কি এখনো এ ধারণা রাখছ? তারা তো এমন সম্প্রদায়, যাদের পার্থিব জীবনেই নিয়ামত দান করা হয়েছে। অন্য এক বর্ণনাতে রয়েছে, তুমি কি এতে খুশি নও, তারা দুনিয়া লাভ করুক আর আমাদের জন্য থাকুক পরকাল (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মিসকিন অবস্থায় জীবিত রাখুন। মিসকিন অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং মিসকিনদের সঙ্গে হাশর করুন। হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, তা কেন ইয়া রসুলুল্লাহ! রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মিসকিনগণ ধনী লোকদের থেকে ৪০ বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে। হে আয়েশা! কোনো মিসকিনকে তোমার দরজা থেকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। অন্তত খেজুরের একটি টুকরা হলেও তাকে দিয়ে দিও। হে আয়েশা! মিসকিনকে ভালোবাসবে এবং তাকে নিজের কাছে স্থান দিবে। তাতে আল্লাহতায়ালা কিয়ামত দিবসে তোমাকে নিজের কাছে স্থান দান করবেন (তিরমিজি)। প্রিয় পাঠক! গরিব-মিসকিনকে কাছে টানতে নবীর নির্দেশ রয়েছে। অসহায়কে ভালোবাসতে রসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে বিশেষ উপদেশ এসেছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ এরূপ লোককে দেখে যাদের ধন-সম্পদ, স্বাস্থ্য সুস্থতা সব দিক দিয়ে তোমাদের তুলনায় অনেকগুণ বেশি দান করা হয়েছে।  তখন সে যেন তার নিজের তুলনায় নিম্নপর্যায়ের লোকদের দিকে লক্ষ্য করে (বুখারি ও মুসলিম)।

লেখক :  খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর