বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কারাগারে ঠাঁই নাই অবস্থা

বন্দীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করুন

ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী- বাংলাদেশের কারাগারগুলোর অবস্থা দাঁড়িয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কবিতার অমর পঙ্ক্তিমালার মতো। দেশের কারাগারগুলোতে এখন ধারণ ক্ষমতার প্রায় ১৩০ শতাংশ বেশি বন্দীকে রাখা হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদিনই কারাগারে যুক্ত হচ্ছেন এক হাজার বন্দী। কেন এই অভিযান চলছে, কী এই অভিযানের উদ্দেশ্য আমরা সেদিকে না গিয়ে শুধু বলতে চাই, দেশের কারাগারগুলো ইতিমধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাজে নজির হয়ে উঠেছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে কোনো কোনো কারাগারে তিনগুণের বেশি বন্দী আটক থাকায় ইতিমধ্যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্মর্তব্য, জেলকোড অনুযায়ী প্রত্যেক বন্দীর জন্য জায়গা বরাদ্দ ৩৬ বর্গফুট। সে অনুযায়ী দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতা ৩৪ হাজার ৪৬০ জন। অথচ গত সোমবার পর্যন্ত ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৮২২ জন। তিল ধারণের ঠাঁই না থাকলেও প্রতিদিনই বাড়ছে বন্দীর সংখ্যা। এ অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে কারা প্রশাসনে। মাত্র কদিন আগেই দেশের সবকটি কারাগারে জারি করা হয়েছিল বিশেষ সতর্কতা। বন্দীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সতর্কতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিদিন কারাগারগুলোতে কমপক্ষে ১ হাজার বন্দী যোগ হলেও বন্দী ব্যবস্থাপনার জন্য বাড়ছে না বাজেট। এতে করে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা জোরদার হয়ে উঠছে। সবচেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এ কারাগারের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৬৫০ জন হলেও গত রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে বন্দী ছিলেন ৮ হাজারেরও বেশি। দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দীর অবস্থান একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। কারাগারে অপরাধীদের নেওয়া হয় শোধরানোর জন্য। কিন্তু কারাগারে শোধরানোর পরিবেশ না থাকলে সে উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।  ধারণক্ষমতার বেশি বন্দী আটক থাকলে তাদের ওপর কর্তৃপক্ষীয় নজরদারি ব্যাহত হয়। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে গণগ্রেফতার বন্ধ কিংবা দেশে কারাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা ভাবা যেতে পারে। জেলকোড অনুযায়ী বন্দীরা যাতে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর