বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিল্প নিরাপত্তায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিকল্প নেই

আবদুল মান্নান

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ চার বছর অতিক্রম করে পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ করেছে চলতি মাসে। স্মরণ করা যেতে পারে, ৩১ অক্টোবর-২০১০ (১৬ কার্তিক-১৪১৭ বঙ্গাব্দ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়।  এ বাহিনীর লক্ষ্য হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণপূর্বক শিল্পবান্ধব নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। দেশের প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সব সময় সম্ভব হয় না। বরং শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মালিক-শ্রমিক এবং উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ নিরাপত্তার জন্য বিশেষায়িত ও পেশাদার পুলিশের অভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে মালিক-শ্রমিক এবং দেশ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি ক্ষুণ্ন হয় দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। সামগ্রিক মূল্যায়নে সর্বমহলে দাবি ওঠে বিশেষায়িত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের। প্রধানমন্ত্রী এ দাবির যৌক্তিকতা এবং গুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় সংসদে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের ঘোষণা দেন।

উদ্বোধনের পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ইন্টেলিজেন্স উইং এবং অপারেশনাল ইউনিট স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকায় অত্র শিল্প সেক্টরে আগের তুলনায় শ্রমিক অসন্তোষ বহুলাংশে প্রশমন করা সম্ভব হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন হওয়ার পর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকার আওতাধীন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানা শিল্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন এবং শিল্পবান্ধব কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে নিবিড় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। একজন পরিচালক (এসপি), একজন উপ-পরিচালক (অতিঃ পুলিশ সুপার), পাঁচজন সহকারী পরিচালক (এএসপি)সহ সর্বমোট ৬৭৩ জন জনবল নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১ এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকা তার কার্যক্রম নির্দিষ্ট ও গতিশীল করার জন্য আওতাধীন শিল্প এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে বিভক্ত করে গোয়েন্দা ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অত্র ইউনিটের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রতিটি সদস্য অত্র ইউনিটের আওতাধীন ডিইপিজেড এলাকা, অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক আবাসিক এলাকা, শ্রমিক অসন্তোষের উদ্ভব হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও সমস্যাসংকুল শিল্প-কারখানায় নিয়মিত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। জরুরি মুহূর্তে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা যেমন জিরাবো মোড়, আশুলিয়া বাজার, ফ্যান্টাসি কিংডম, জামগড়া ও বাইপাইল মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করে থাকে। যে কোনো কারখানা বা স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অফিসার ও ফোর্স গমন করে থাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষ ও কারখানা প্রশাসনের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে থাকে। কোনো কারখানায় কোনো সমস্যার সূত্রপাত হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। বেতন-ভাতা সংক্রান্তে মালিক-শ্রমিক বিরোধ দেখা দিলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শ্রম পরিদর্শকের সহায়তায় বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকে। শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিভিন্ন অপরাধ, নারী নির্যাতন ও ইভ টিজিং প্রতিরোধ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকা সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি নিরসনে নিয়মিত রাতের টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শিল্প এলাকায় সৃষ্ট বিভিন্ন অপরাধের জন্য থানায় মামলা রুজু হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ছায়া তদন্ত করে জেলা পুলিশকে সহায়তা করে আসছে। সহায়তা প্রদানসহ শ্রমিক আবাসিক এলাকার বাড়ি ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গণ্যমান্য ব্যক্তি, সামাজিক নেতা ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভার আয়োজন করে থাকে। গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণপূর্বক সম্ভাব্য শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে নিয়মিতভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বেপজা কর্তৃপক্ষ, কারখানা মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে থাকে।

ঈদ, পূজা প্রভৃতি ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে শিল্পাঞ্চলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি ও ব্যাপক আকারে ফোর্স মোতায়েন করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বিধায় শিল্পাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকছে। প্রয়োজনীয়তা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ভিআইপি/ ভিভিআইপি ব্যক্তি নিরাপত্তা ডিউটি, নির্বাচন ডিউটি, ট্রাফিক ডিউটিতেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ দায়িত্ব পালন করে সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। আওতাধীন এলাকায় যে কোনো ধরনের জন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রত্যক্ষভাবে জেলা পুলিশকে সহায়তা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন দৈব-দুর্বিপাক, দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড প্রভৃতিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফায়ার ব্রিগেডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে আসছে। এক্ষেত্রে রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ ও পরবর্তীতে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, ঢাকার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শ্রমিক আন্দোলনসহ বৃহৎ আকারে জন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।    হলেখক : কলামিস্ট।

সর্বশেষ খবর