শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইসলাম জ্ঞানার্জনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

ইসলাম এমন এক জীবন ব্যবস্থা যেখানে জ্ঞানার্জনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। জ্ঞানার্জনের প্রতি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন একটি হাদিস তা উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ। (ইবনে মাজাহ)

মহান আল্লাহ জগৎবাসীর গাইড লাইন হিসেবে যে ঐশীগ্রন্থ কোরআন নাজিল করেছেন তা শুরুই হয়েছে জ্ঞানার্জনের তাগিদ দিয়ে। ইরশাদ করা হয়েছে : ‘পড়ুন (হে মুহাম্মদ!) আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে, পড়ুন আপনার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলম দ্বারা জ্ঞান দান করেছেন, মানুষ যা জানত না তা তিনি তাকে শিখিয়েছেন।’ (সূরা আল-আলাক : ১-৫)

পবিত্র কোরআনের নাজিলকৃত দ্বিতীয় সূরার নাম হলো ‘কলম’। এ সূরার শুরুতেই বাব্বুল আলামিন আল্লাহ কলমের শপথ নিয়েছেন। কোরআনে সেসব বিষয়ের শপথ নেওয়া হয়েছে তা বিশেষ তাৎপর্যের দাবিদার। কলমের শপথ নিয়ে আল্লাহ জ্ঞানার্জনের এই মাধ্যমটিকে সম্মানিত করেছেন। জ্ঞানচর্চার প্রতি মুমিনদের আগ্রহ যাতে বাড়ে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞানচর্চাকে কতটা গুরুত্ব দিতেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বদর যুদ্ধ-পরবর্তী ঘটনা। এ যুদ্ধে মুসলমানরা কুরাইশদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়। মুসলমানদের হাতে বন্দী হয় বিপুলসংখ্যক কুরাইশ। আটক বন্দীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন শিক্ষিত। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সেহেতু মুক্তিপণ দিয়ে নিজেদের বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করার ক্ষমতা ছিল না তাদের। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে সুযোগ হিসেবে নেন। তিনি ঘোষণা করেন কোনো বন্দী ১০ জন মুসলিম সন্তানকে লেখাপড়া শিক্ষা দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

ইমাম আহমদ (র.) হাদিস সংকলন গ্রন্থ মুসনাদে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি বলেন : কিছু সংখ্যক কয়েদির ধন-সম্পদ ছিল না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মুক্তিপণ আদায় করে দিলেন এভাবে যে, তারা আনসার-তনয়দের লেখার প্রশিক্ষণ দেবে।’ মুসলমানরা সে সময় আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল ছিল না। মুক্তিপণ হিসেবে অর্থ আদায় তাৎক্ষণিকভাবে লাভজনক হলেও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাক্ষরতা লাভকে আর্থিক লাভ লোকসানের চেয়ে উপরে স্থান দেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞানচর্চার তাওফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর