সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আলোর শহর অন্ধকারে

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

আলোর শহর অন্ধকারে

১৩ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একযোগে ছয় স্থানে আক্রমণ চালায় উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন আইএস। তারা নিজেরাই এই আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। প্যারিসকে একসময় বলা হতো বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যের শহর, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এবং ইউরোপের রানী।  বলা হয়ে থাকে রাতেই শহরের আকর্ষণীয় রূপ পর্যটকদের কাছে ধরা পড়ে। সারা রাত ধরে চলে রূপের ঝলকানি। শহরের অলি-গলিতে, রাস্তায়, নাইট ক্লাবের মায়াবী হাতছানিতে বুদ হয়ে থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটক। রকস্টার দলের কানফাটা ড্রামের তালে সব ভুলে উন্মাদের মতো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে নাচ আর পানে মত্ত হয়ে থাকে গোটা শহর। বিশেষ করে সপ্তাহান্তে এর মাত্রা থাকে তুঙ্গে। কিন্তু হঠাৎ করে এ কি হলো! ১৩ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম প্রহর শুক্রবার সন্ধ্যায় সব স্তব্ধ হয়ে গেল, সব বাতি নিভে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যে আলো ঝলমলে প্যারিস নগরী পরিণত হলো ভুতুড়ে শহরে। রাস্তায় শুধু পুলিশ আর পুলিশ। পুলিশের নিরাপত্তা সাইরেন আর অ্যাম্বুলেন্সের ভয়ার্ত শব্দে সব কিছু কম্পমান। কোনদিকে গেলে প্রাণে বাঁচবে তা যেন হয়ে ওঠে প্রত্যেকের জন্য কেবলই নিয়তির ব্যাপার। যেখানে সেখানে ঘেরাও তল্লাশি চালাচ্ছে স্পেশাল কাউন্টার টেররিজম ফোর্স। মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীর স্পেশাল কমান্ডো দল। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ নিজে ঘোষণা দিয়েছেন, পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্যারিস শহরের কেউ যেন ঘর থেকে বের না হয়। ফ্রান্সকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে অবাধ স্বাধীনতার দেশ। তাই নজিরবিহীন এই ঘরে আবদ্ধ থাকার ঘোষণায় সারা বিশ্ব হতবাক, প্যারিসবাসী বাকরুদ্ধ। ১৯৪৮ সালের পর এবারই প্রথম ফ্রান্সের পার্লামেন্টের নিন্ম ও উচ্চ কক্ষ একসঙ্গে বসেছে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের আহ্বানে।

এই যৌথ সম্মেলনে আগামী তিন মাস দেশে জরুরি অবস্থা জারি রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের অনুমোদন চেয়েছেন। জরুরি অবস্থা মানে ফ্রান্স আর আগের ফ্রান্স থাকবে না। রাতের জৌলুস থাকবে না প্যারিসে। সৌন্দর্যের রানীকে তিন মাস ঘোমটা দিয়ে থাকতে হবে। জীবনযাত্রার শত বছরের অভ্যাসের ছেদ টানতে বাধ্য হবে ফ্রান্সের মানুষ। গত শতকের নব্বই দশকের শুরুতে কম্বোডিয়ায় জাতিসংঘের শান্তি মিশনে প্রায় ১৬ হাজার ফোর্সের প্রভোস্ট মার্শালের দায়িত্বে ছিলাম আমি। আমার অধীনে অন্যান্য দেশসহ ফ্রান্সের মেজর পদবির একজন অফিসারসহ ২০ জন অন্যান্য পদবির সৈনিক ছিল। একবার সমন্বয় সভায় ‘আউট অব বাউন্ড’ (নিষিদ্ধ) এলাকায় কেউ যেন না যায় এমন একটি কথা আমি বলার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সের মেজর সাহেব বলে উঠলেন, স্যার ফরাসি সৈনিক ও নাগরিকদের জন্য ‘আউট অব বাউন্ড’ বলতে কোনো কথা প্রযোজ্য নয়। ফ্রান্স অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কথাটি প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, এমন ফরাসি জাতি আজ চরম বাস্তবতার সম্মুখীন। নিজের দেশেই এখন অনেক কিছু ‘আউট অব বাউন্ড’ হয়ে যাবে, হয়তো অনির্দিষ্টকালের জন্য। ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্যারিসে ঘটে যাওয়া বর্বরতম ঘটনার একটু বিশ্লেষণ করি। আইএস প্রধান আবু বকর বাগদাদির ঘোষিত কৌশল হলো- ‘সন্ত্রাস এবং যুদ্ধের মাধ্যমেই খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা হবে। যারাই আইএসের বিরুদ্ধে থাকবে, তাদের ওপরই আক্রমণ করা হবে। কেউ রক্ষা পাবে না। আইএস বিরোধীরা তলোয়ারের নিচে পিষ্ট হবে, আর নয়তো তাদের আইএসের পক্ষ অবলম্বন করতে হবে’। বাগদাদির এই ঘোষণার বাস্তবায়নে আইএসের প্রতিটি আক্রমণের লক্ষ্য হলো- ‘প্রচণ্ড ভয়-ভীতি ও ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, সাধারণ মানুষকে নিস্তব্ধ করে ঘরে বন্দী করা এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক হতাহতের মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধে জয়লাভ করা। প্যারিস আক্রমণে আইএসের এই লক্ষ্য প্রায় শতভাগ অর্জিত হয়েছে।

সেদিন সন্ধ্যায় প্যারিস আক্রমণে নিহিত হয়েছে ১২৯ জন এবং আহত হয়েছে আরও প্রায় ৩০০ জন। নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়েছে কনসার্ট হলে, যেখানে দর্শক ছিল প্রায় দেড় হাজার। একই সময়ে কনসার্ট হলের অদূরে স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও জার্মানির ফুটবল খেলা দেখার জন্য দর্শক ছিল প্রায় ৮০ হাজার। আইএসের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী স্টেডিয়ামে আক্রমণ হওয়ার কথা। কারণ, তাতে হতাহতের সংখ্যা আইএসের লক্ষ্য অনুযায়ী আরও অনেক বেশি হতো। স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষণে বোঝা যায় স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাব্যবস্থা যত শক্তিশালী ছিল তা ভেদ করা হয়তো আইএসের পক্ষে সম্ভব ছিল না বিধায় সেখানে তারা আক্রমণ চালায়নি। অর্থাৎ অপারেশনের সফলতা শতভাগ নিশ্চিত করা আইএসের একটা লক্ষ্য এবং কৌশল। এতে বোঝা যায় নিরাপত্তার একটা লেভেল পর্যন্ত ভেদ করার সক্ষমতা আইএসের থাকলেও সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেদ করার সক্ষমতা তাদের নেই। আরেকটি দিকে তাকালেও সেটি বোঝা যায়। আমেরিকা তাদের এক নম্বর টার্গেট হলেও ৯/১১-এর পর আর কোনো বড় হামলা সেখানে আইএস-আল কায়েদা চালাতে পারেনি। চেষ্টা করছে তা বোঝা যায় এবং সে খবরও মাঝেমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ৯/১১-এর পর আমেরিকা গোয়েন্দা সক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়িয়েছে এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সের মতো একটা প্রায় অভেদ্য ফোর্স তৈরি করেছে শুধু নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্য। প্যারিসের বর্বর ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিশ্বের নেতাদের পক্ষ থেকে। আরব বিশ্বসহ মুসলমান প্রধান দেশের নেতারাও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। আইএস সিরিয়া ও ইরাকের কিছু ভূখণ্ড দখল করে নিজেরা একটা রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়েছে, যার প্রতি বিশ্বের কোনো দেশ ও সংস্থার সমর্থন এবং স্বীকৃতি কিছুই নেই। সুতরাং আইএস হলো আনকনভেনশনাল বা অনিয়মিত রাষ্ট্র, বিশ্ব সম্প্রদায় ও সংস্থার কাছে তাদের কোনো দায় নেই। তারা কোনো সমঝোতায় ও আলোচনায় বিশ্বাস করে না। যুদ্ধের কোনো নিয়মনীতিও তারা মানে না। শিশু ও নারীসহ নিরীহ মানুষকে তারা নির্যাতন ও হত্যা করেছে। এরকম একটি কথিত রাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে ফ্রান্স যুদ্ধরত। সেই যুক্তিতে আইএস যদি ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণই চালাত তাহলে কিন্তু তার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ ভিন্ন হতে পারত। সুতরাং নিরীহ বেসামরিক মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তারা সভ্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। আইএস সারা বিশ্বের মানবতা ও সভ্যতার শত্রু, তাতে কোনো দ্বিমত নেই। তাদের এহেন বর্বরতার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এমন আজগুবি রাষ্ট্র কোনো দিনেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না, টিকে থাকার প্রশ্নও ওঠে না। কিন্তু এই যে বর্বরতা, রক্তক্ষরণ তা রোধ করার উপায় কি? এই বর্বর শক্তিকে বিশ্ব সভ্যতার পক্ষশক্তি যদি পরাজিত করতে চায় তাহলে ওদের উত্থানের মূল কারণ ও শেকড়ের সন্ধান করতে হবে। সমাধানের যাত্রা শুরু করতে হবে শেকড় থেকে। শিকড় বাদ দিয়ে উপরে উপরে পাতা ছাঁটলে তাতে কোনো কাজ হবে না। যুদ্ধ করে আফগানিস্তানের তালেবানদের মতো আইএসকে আপাতত পরাজিত করা গেলেও রক্তক্ষরণ থেকে বিশ্ব মানবতাকে মুক্ত করা যাবে না। এ কথার উৎকৃষ্ট প্রমাণ আফগানিস্তান। আফগানিস্তানে আবার তালেবানদের উত্থান ঘটেছে, সঙ্গে এখন সেখানে আইএসও হাজির হয়েছে। এ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণে যেমন নিরীহ মানুষ মরছে, তেমনি পাল্টা হিসেবে আমেরিকার ড্রোন হামলায় আক্রান্ত হচ্ছে বিয়েবাড়ি, হাসপাতাল, প্রতিনিয়ত মরছে নারী-শিশুসহ বেসামরিক মানুষ। এর শেষ কোথায় তা জেনেও কেউ জানে না। যার ফলে বিশ্বের নেতৃত্বে থাকা পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী আচরণ ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এবং সেই স্বার্থ উদ্ধারে তাদের গৃহীত নীতির অ্যাকশনের বিপরীতে রিঅ্যাকশনের সম্মিলিত চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ১৩ নভেম্বর প্যারিসে। পশ্চিমা বিশ্ব নিজেরাই আজ বিপর্যস্ত, ভীতসন্ত্রস্ত। প্যারিস আক্রমণের জের এবং আইএসের নতুন হুমকির মুখে আমেরিকা তাদের নাগরিকদের জন্য বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে। তারা আজ বিশ্বের কোথাও নিরাপদ নয়। ছায়া শত্রু এখন ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য। বিশ্বের মানবতা, সভ্যতা, গণতন্ত্র, আধুনিকতা অগ্রগতি সবকিছুই আজ নীতিহীন বর্বরতার হুমকির মুখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের একের পর এক স্বার্থপর পদক্ষেপই এর জন্য দায়ী, যা এখন ব্যাকফায়ার করছে উগ্রবাদী ইসলামিস্ট ধর্মান্ধ জঙ্গিরূপে। সুতরাং এর শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ছিল মুসলমান শাসক অটোমান (ওসমানিয়া) সাম্রাজ্য, অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কের অধীনে। তুরস্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সঙ্গে অক্ষশক্তির পক্ষে ছিল। যুদ্ধে অক্ষশক্তি পরাজিত হলে তার পরিণতিতে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। যুদ্ধে জয়ী মিত্রপক্ষের প্রধান দুই শক্তি ফ্রান্স ও ব্রিটেন নিজেদের ইচ্ছামতো মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্র নির্মাণ করে। অনেক নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করে, নিজেদের মনমতো সীমানা টানে। পরবর্তীতে নিজেদের সুবিধা ও পছন্দমতো ব্যক্তিকে রাজা বানিয়ে একেকটি রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসায়। গণতন্ত্রের কথা তখন পশ্চিমা নেতাদের মনে ছিল না। তখন একনায়ক শাসকই তাদের পছন্দ্রের ছিল, যেমন- এখনো কোনো কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আছে। ওই রাজারা নামে ক্ষমতায় থাকলেও সব কর্তৃত্ব ছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের হাতে। কারণ তখন ইতিমধ্যেই ওই নতুন রাষ্ট্রগুলোর দখলদারিত্ব, সামরিক উপস্থিতিসহ ভাগবাটোয়ারা করে নেয় ফ্রান্স ও ব্রিটেন।

গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কয়েকটি দেশে অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মাধ্যমে শাসক পরিবর্তন হয়। কিন্তু পশ্চিমা শক্তির প্রবল সমর্থনের কারণে সব দেশে অভ্যুত্থান-বিপ্লব হতে পারেনি। আরব বিশ্বের পদানত শাসকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাড়ে সাত লাখ প্যালেস্টাইনের নিরীহ মানুষকে নিজ ভূখণ্ড থেকে উৎখাত এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে আরব বিশ্বের বুকের ওপর জোরপূর্বক ১৯৪৮ সালে ইসরাইল নামক দানব ও উগ্র ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়। তারপর নিজ ভূখণ্ডে নিরাপদে বসবাস করার সামান্য অধিকারটুকুও হারায় ফিলিস্তিনের মুসলমানরা। এ সম্পর্কে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এক ডজনেরও বেশি রেজুলেশন ইসরায়েল ঔদ্ধত্যভাবে অমান্য করে চলেছে। তারপরেও আমেরিকা ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ায় যা ঘটছে সেটিও আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের ভুল পদক্ষেপের কারণে ঘটেছে। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার গাদ্দাফিকে উৎখাত না করলে এবং সিরিয়ার আসাদকে উৎখাতের চেষ্টা না করলে আইএসের উত্থান হতো না।

এ ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্লেষকরাও একমত। নিরবচ্ছিন্নভাবে অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, বৈষম্যের শিকার হলে প্রতিটি মানুষই নিজেকে মূল্যহীন মনে করে এবং তাদের মনে ক্রোধের সৃষ্টি হয়। এ মূল্যহীন ও ক্রোধান্বিত মানুষকে সহজেই মগজ ধোলাই দিয়ে দলে ভেড়াতে পারছে আইএস। এ কারণেই ইউরোপের দেশগুলো থেকে শত শত মুসলিম যুবক-যুবতী দলে দলে আইএসের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। সুতরাং সমাধান চাইলে আইএসের বিরুদ্ধে এখন স্থল অভিযানের কোনো বিকল্প নেই তবে মূল কারণ দূরীকরণেও বিশ্ব সম্প্রদায়কে একই সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।  অর্থাৎ একটি সার্বিক সমন্বিত উদ্যোগ ও অভিযান দরকার। তা না করে যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটালে এবং শুধু স্থল আক্রমণ চালালে আইএসকে আফগানিস্তানের তালেবানের মতো আপাতত পরাজিত করা যাবে, কিন্তু সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে না। বরং আরও বড় মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।  সিরিয়া ও ইরাক থেকে আরও লাখ লাখ ভাসমান মানুষ অজানার উদ্দেশ্যে ধাবিত হতে বাধ্য হবে। যুদ্ধে শুধু অস্ত্রধারী নয়, হতাহত হবে অগণিত নিরীহ বেসামরিক মানুষ।

লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

                ই-মেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর