মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি

‘সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য-কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য। ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি। হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো-ষোলো, একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল’ দেশ যখন জ্বলেপুড়ে ছারখার হচ্ছিল, সরকার কিছুই করছিল না, তখন বিবেকের তাড়নায় কবিগুরুর সেই ‘দুই বিঘা জমি’র মতো বাবর রোডের বাড়ি, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছেড়ে ৮০ মতিঝিলের ফুটপাথে মাদুর বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও আন্তরিক হবেন, বেগম খালেদা জিয়া তার আহূত অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার অথবা স্থগিত করবেন। অনেকের মনে হতে পারে তারা কেউ কিছু করেনি। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়, কবে কোনকালে সমুদ্র মন্থন করে গড়ল এনেছিলেন। দেশ মন্থন করে আমি আমাকে চিনেছি, দেশের প্রাণ খুঁজে পেয়েছি- সেই প্রাণের শক্তি কোথায় তারও খবর জেনেছি।

বেগম খালেদা জিয়া তার অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহারের সুযোগ পাননি। আল্লাহর তরফ থেকে জনসাধারণ নিজেরাই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে যে যাই বলুন, সবাই মিলেমিশে দেশকে সংকট থেকে বাঁচাতে হবে এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন। তাই উভয় নেত্রীকেই ধন্যবাদ জানাই।

জানুয়ারি মাস। ঋতুতে প্রচণ্ড শীতের মাস। সেই মাসে প্রবল বাতাসে মতিঝিলের ফুটপাথে কাপড়ের তাঁবু টানিয়ে থাকা ছিল খুবই কঠিন। বই-পুস্তক থেকে আমি তেমন কিছুই শিখিনি, যা শিখেছি তার বেশির ভাগই ঠেকে ঠেকে শিখেছি। অনেকে মনে করতে চান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পছন্দ করেন না। যারা পিতার চামড়া দিয়ে জুতা বানাতে চেয়েছেন তাদের করেন। তারা তা ভাবতেই পারেন। মনে মনে কলা খেতে দোষ কী? পছন্দ-অপছন্দ নিজের ব্যাপার। সেটা কেউ কাউকে নাও করতে পারেন। কারও পছন্দ-অপছন্দে সমাজ চলে না, দেশ ও জাতি চলে না। পছন্দ-অপছন্দ ব্যক্তিসীমার বাইরে গেলে দেশের অকল্যাণ হয়। কারও পছন্দ-অপছন্দের কারণে রাষ্ট্রের কাছে কেউ বঞ্চিত হতে পারেন না। আইনের দরজায় কোনো সুবিধা-অসুবিধা হওয়ার কথা নয়- এসব আমার জন্মগত বিশ্বাস। আল্লাহতায়ালা আমাকে পুরুষ বানিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আমি কাপুরুষ হতে পারি, কিন্তু ইচ্ছা করলেই নারী হতে পারি না। কেউ কাউকে নারী বানাতে পারে না। হ্যাঁ, জন্ম থেকেই কোনো নারীর মধ্যে পুরুষের উপাদান বেশি থাকায় হয়তো সেই নারী পুরুষ হতে পারেন, আবার কোনো পুরুষ একইভাবে নারীও হতে পারেন। কিন্তু সেটা সাধারণ ব্যাপার নয়, অসাধারণ ব্যাপার। তাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভেবেছিলাম, সবকিছু হারিয়ে গেলেও একজন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান আমি পাব। স্বাধীনতার পর রাজধানীর বাইরে জাতির পিতার কাছে অস্ত্র দেওয়ার সৌভাগ্য আর কারও বা কোনো দলের হয়নি, আমার বা আমার দলের হয়েছিল- সে সম্মান নিশ্চয়ই পাব। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নির্মমভাবে নিহত হলে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে তার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেছিলাম, সে সবের মর্যাদা নিশ্চয়ই পাব। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় অনেক কিছুই পাইনি। কতজনকে কত পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়, অবস্থান কর্মসূচির শুরু থেকে কোনো পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। যদিও একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। সাধারণ মানুষ নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। অবস্থান কর্মসূচির শুরুর দিকে ১১ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাওনা উড়ালপুল উদ্বোধন করেছেন। সেখানে  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০-১৫ হাজার সদস্য প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। পরদিন মাওনার এক স্কুলমাঠে রাতে ছিলাম। সেখানে কিছু সাংবাদিক দুঃখ করে বলছিল, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১০ হাজার পুলিশ, আপনি দেশ স্বাধীন করেছেন, একজন প্রবীণ মানুষ, আপনার জন্য ১০ জন পুলিশও নেই- এটা কেমন কথা?’ এ রকম আরও কত ঘটনা ঘটেছে।

 

 

’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে গ্রামেগঞ্জে কারও তেমন ঘরদুয়ার ছিল না। দু-একটি টিনের ঘর, বাকি সবই ছনের ঝুপড়ি। সাধারণ গরিবের বাড়িতে খাবারও জুটত না, গরিবের ঘরে দুর্র্গন্ধযুক্ত মোটা চালের ভাত, সঙ্গে তরু-তরকারি হতো না। একটু ডাল কিংবা কাঁচা মরিচ অথবা লাউপাতা ভর্তা এই ছিল নিঃস্ব দরিদ্র সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের খাবার। শীতের রাত কাটাতে শতচ্ছিন্ন তালি দেওয়া কাঁথা ছাড়া তাদের কিছু ছিল না। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গরিব-ধনী নির্বিশেষে সবার ঘরের প্রায় খাবার একই রকম। বরং ধনবানের চেয়ে হতদরিদ্রের বাড়ির খাবার সুস্বাদু। কারণ ধনী মানুষের বউয়েরা রাঁধে না, গরিব ঘরে বউদের রান্নাই সম্বল। এই কদিন যমুনা-ধলেশ্বরীর আশপাশে কাটিয়েছি। সেদিন আলীপুর ইমান বেপারির বাড়ি ছিলাম। সুন্দর টেবিল-চেয়ার-খাট-পালঙ্ক, শীত নিবারণের কম্বল। সরাতৈল আমার মেয়ে ইমালদা হোসেন দীপার শ্বশুরবাড়িতে একই রকম। খাট-পালঙ্ক-শীতের কম্বল কোনো কিছুর অভাব নেই। অভাব যা তা হলো ভালোবাসার, সহমর্মিতার, মানবতার, একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ এবং অন্যের কষ্ট নিজের করে নেওয়ার।

একনাগাড়ে ৬৪ দিন মতিঝিলের ফুটপাথে শীত-বৃষ্টি-ঝড়-তুফানে রাত কাটিয়ে ৬৫ দিনের মাথায় সন্তোষে গিয়েছিলাম হুজুর মওলানা ভাসানীর কবর জিয়ারত করে মাজারে রাত কাটাতে। মতিঝিলের ফুটপাথে ৬৪ দিন নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট হলে ভালো হতো। কিন্তু তা হয়নি। কয়েকবার পুলিশ মাইক নিয়ে গেছে, যে চৌকিতে শুইতাম, একদিন বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে গেলে সে চৌকি-তাঁবু- পেশাবের বদনা- সবকিছু পুলিশ নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে লোকজন ধরে নিয়ে যেত। আরও বিরক্তিকর যা যা করা যায় তা তারা করেছে। এসব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানতেন কিনা শতভাগ পরিষ্কার হতে পারিনি। জানলে একরকম, না জানলে আরেক রকম। তখন টুঙ্গিপাড়ার ফরমান ছিলেন মতিঝিলের ওসি, এখনো আছেন কিনা জানি না। তার বাবা লায়েক আলী বিশ্বাস একজন বড় ভালো মানুষ ছিলেন। টুঙ্গিপাড়া গেলে ছায়ার মতো থাকতেন। টুঙ্গিপাড়ার মানুষ হওয়ায় সে যে কী ক্ষমতা দেখিয়েছেন তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। বিরক্ত হয়ে ঘোষণা করেছিলাম, আর কোনো বিরক্তিকর কিছু করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের সামনে অবস্থান নেব। জানি, তিনি কী করতে পারেন। বয়স হয়েছে, এখন লানতের জীবনের জন্য মায়া নেই। সারা জীবন সম্মানের জন্য লড়াই করেছি, সেই সম্মানহীন জীবন আমার কাম্য নয়। মতিঝিলে অবস্থানের সময় কত রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালক দলবেঁধে রাতে এসে ৫-১০ টাকার পোঁটলা দিয়ে সাহায্য করত। কত রিকশাওয়ালা বলত, ‘যতটা পারেন সারা দেশ একবার ঘুরে আসেন। সব মানুষ তো মতিঝিলে আসতে পারে না। আপনি তাদের কাছে যান।’ মূলত তাদের কথায় ৬৫ দিনের মাথায় হুজুর মওলানা ভাসানীর সন্তোষ, তারপর সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে তাঁবু ফেলেছিলাম। সে এক মহাদুর্ভাগ্যজনক ঘটনা! সাভার স্মৃতিসৌধের বিশাল আঙিনায় কম করে ৪-৫ হাজার বাতি। কিন্তু আমি যেখানে বিছানা ফেলেছিলাম, সেখানে আমার আশপাশের ৮-১০টি বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি- একে তো মশা, তার ওপর বাতি নেভানোর যন্ত্রণা। বার বার মনে হচ্ছিল, যদি নিহত হতাম, শহীদদের স্মরণে কত বাতি জ্বলছে, এসব বাতি আমার জন্যও জ্বলত। মরতে পারিনি, শুধু এই দুর্ভাগ্যের জন্য আমার উপরের বাতি নিভিয়ে দেওয়া হলো! তাহলে এই দেশে এই সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিয়ে যা বলা হয় সবই মিথ্যা, সবই ছলনা, সবই মেকি? মরলে সম্মান, বেঁচে থাকলে লাঞ্ছনা। পরদিন গিয়েছিলাম গোপালগঞ্জ। যাওয়ার পথে কাশিয়ানীর এমপি কর্নেল ফারুক খানকে জানিয়েছিলাম। তিনি তার কর্মীদের বলে রেখেছিলেন। তারা যথেষ্ট আদরযত্ন সহযোগিতা করেছে। কাশিয়ানীর হোগলাকান্দি কুমার নদের পাড়ে ৭ এপ্রিল রাতে ছিলাম। সন্ধ্যায় সে কী ঝড়-তুফান। মনে হয় এর আগে অমন দুর্যোগ কখনো দেখিনি। পরের রাত টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে পায়ের কাছে ছিলাম। এমনই কত ঘটনা, কত স্মৃতি। মে’র কোনো একসময় গিয়েছিলাম কিশোরগঞ্জ। কটিয়াদীর মধ্যপাড়া স্কুলমাঠের পাশে শ্মশানঘাটে তাঁবু ফেলেছিলাম। জানতাম না, ভাগ্যই টেনে নিয়েছিল কিশোরগঞ্জ সদরের ভাটগাঁও কবরস্থানের পাশে। সেখানে শবেবরাতের কারণে তিন দিন ছিলাম। ’৯৭ সালের ৯ তারিখ ভাটগাঁও হাইস্কুলের মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি কাঁঠালের চারা লাগিয়েছিলেন। তার সে কী দুরবস্থা! পুষ্টিহীন বস্তির শিশুদের মতো শুকিয়ে গেছে। চারাটির অবস্থা দেখে বড় ব্যথিত হয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বোনা কোনো চারার অবস্থা অমন পুষ্টিহীন হলে দেশের অবস্থা কেমন হবে? ভাটি বাংলার মানুষ বড় সহজ-সরল। তাই সেখান থেকে বৌলাই করিমগঞ্জ হয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর হয়ে পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর, গুপ্তবৃন্দাবনে ঘাঁটি গেড়েছিলাম। এমনই কত জায়গা, কতখানে গেছি। এর মধ্যে রোজা এসেছে, রোজা গেছে, ঈদ এসেছে, ঈদ গেছে, ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শ্রীমতী শুভ্রা মুখার্জি ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তার অন্ত্যেষ্টিতে যেতে পারিনি, শ্রাদ্ধে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরেই এক নতুন পরিস্থিতি। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সংসদ সদস্যপদ ত্যাগ করলে সেখানে উপনির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়। আমাদের দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বেশ কটি উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সে হিসেবে কালিহাতী উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। লোকজনের চাপাচাপিতে একসময় নিজেই প্রার্থী হই। সেভাবেই কাজকর্ম চলে। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থার ঋণ পুনঃতফসিল করা নিয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন সাপের পাঁচ পা দেখানোর মতো করে মনোনয়নপত্র বাতিল করে। আমি হাইকোর্টে যাই। হাইকোর্ট বৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। তিনি তার সব ধৈর্য হারিয়ে বলে বসেন, সরকার আপিল করবে। ওর আগে কোনো নির্বাচনে মনোনয়নের বৈধতা নিয়ে সরকার আপিল করেনি। প্রার্থীরা দু-এক জন করেছেন। দুই দিন আপিল করবেন, আপিল করবেন লম্ফঝম্প করলেও তার আপিল করার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ সরকার কোনো পক্ষে ছিল না। পরে অন্যায়-অযৌক্তিকভাবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হয়ে আপিল করেছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে। তার কোনো পক্ষ হওয়ার উপায় বা সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে তারা তা-ও করেছে। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান না আমি সংসদে যাই, তাই তারা অত তৎপর। আমি বিশ্বাস করতে পারলে খুশি হতাম কিন্তু এখনো তা করতে পারছি না। সে জন্য নাখোশ না থেকে উপায় কী? স্বস্তিতে আমার বছর কাটে দিনের মতো। কিন্তু অস্বস্তিতে দিন যায় না। একে তো কুশিমণির টাইফয়েড হওয়ায় মন খারাপ, তার ওপর নানা অস্বস্তি। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাব।

গোদের উপর বিষফোড়ার মতো পৌর নির্বাচনে আবার নির্বাচন কমিশন ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে বসে আছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কী যে হেলাফেলা, কী যে ছেলেখেলা বলে শেষ করা যাবে না। এই প্রথম রাজনৈতিক দলের প্রতীকে পৌর এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্র্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কারবারই রাজনীতি। মাছের যেমন পানি ছাড়া চলে না, তেমনি রাজনৈতিক দল ছাড়া নির্বাচন কমিশন অসাড়, অচল। অথচ দেশে প্রথম স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলাপ-আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেনি। মেয়র বা চেয়ারম্যান দলীয় প্রতীকে, কাউন্সিলর, মেম্বারদের প্রতীকের প্রয়োজন নেই- মানে নামাজ পড়তে পারবেন, অজু করতে পারবেন না। জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল যাচাই-বাছাইয়ের আগে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে, প্রত্যাহারের আগে প্রকৃত প্রার্থী কে তা ঠিক করে দেয়। পৌরসভায় শুধু একজনকে মনোনয়ন দিতে হবে, একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিলে সব অবৈধ হবে, মানে ইচ্ছা হলে কোনো দলকে নির্বাচন থেকে যাতে বাইরে রাখতে পারে। নির্বাচনী আইনে স্পষ্ট বলা আছে, দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আবার কে মনোনয়ন দেবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরযুক্ত পত্র তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এ যে জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও পৌর নির্বাচনের কায়দাকানুন বেশি। এভাবে আর যাই হোক গণতান্ত্রিক রাজনীতি চলে না। রাজনৈতিক দলকে এভাবে গুরুত্বহীন হেলাফেলা করলে রাজনীতিই গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। এসব ত্রুটি এবং অসঙ্গতি দূর না করে নির্বাচন কমিশন খামখেয়ালি করে অগ্রসর হলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জানি না, এর পরও নির্বাচন কমিশন শত সহস্র ত্রুটি নিয়ে অগ্রসর হবে কিনা। কাঁধে ভূত চাপলে কেউ সোজা রাস্তা দেখে না, দেখলেও চলে না। দেখা যাক, সামনে কী হয়!

২৮ জানুয়ারি মতিঝিলের ফুটপাথে অবস্থানের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেছিলাম। আজ বেলা ১১টায় সেই মতিঝিলের ফুটপাথে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করব। ৩০৮ দিনের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার সময়গুলো নিয়ে একটি বড় লেখা অল্প দিনের মধ্যেই দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার ইচ্ছা আছে। এ ৩০৮ দিনের ১৭৭ দিন হাটে-মাঠে-ঘাটে-স্কুলের বারান্দায়, ৩৫ দিন টাঙ্গাইলের সোনার বাংলার বাড়িতে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ছাড়া যাযাবরের মতো, ১২ দিন মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে শাহানা-দুলালের বাসায়, ৩ দিন মতিঝিলের জানালা ছাড়া এক দরজার খোপের মতো অফিসঘরে, ১০ দিন সখিপুরের বাড়িতে, ২ দিন টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজারে পিতার পায়ের কাছে, ১ দিন হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার সন্তোষে, বাদবাকি ৬৮ দিন সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে। আজ মঙ্গলবার পহেলা ডিসেম্বর, স্বাধীনতার মাসে সাংবাদিক, দলীয় নেতা-কর্মী এবং আপামর জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্বের সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

লেখক : রাজনীতিক

সর্বশেষ খবর