সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অসৎ উপার্জন থেকে দূরে থাকতে হবে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

অসত্ভাবে অর্থ উপার্জন করা বা সে অর্থের খাবার গ্রহণ করা ইসলামী দৃষ্টিতে পুরোপুরি হারাম। হজরত কা’ব ইবনুল উজরাহ (রা.) বলেন : রসুল (সা.) বলেছেন— যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট, তা জান্নাতে যাবে না।’ —তিরমিযী। ইসলামী দৃষ্টিতে জোর করে অর্থ সম্পদ আদায় করা, আমানত আত্মসাৎ, প্রবঞ্চনা, চুরি, জালিয়াতি, সুদ, ঋণের অর্থ অস্বীকার, অসত্য সাক্ষ্য দেওয়া, এতিমের সম্পদ অবৈধ পন্থায় আত্মসাৎ, ঘুষ লেনদেন, ওজনে কম-বেশি করা, উল্লেখ না করে দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করা, জুয়া, লটারি, বান-জাদুটোনা, ভাগ্য গণনা, যথার্থ মূল্য গোপন করে অধিক মূল্য উল্লেখ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করা, অর্থের বিনিময়ে ক্রেতাকে পণ্যের খোঁজ দেওয়া, স্বাধীন মানুষকে দাস রূপে বিক্রয়, মদ ও শূকর এবং অপরাপর নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রয়লব্ধ সম্পদ সব হারাম বা নিষিদ্ধ খাদ্যের শামিল।  হজরত যায়েদ বিন আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত আবু বকর (রা.)-এর এক ক্রীতদাস ছিল। সে হজরত আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে কিছু অর্থের বিনিময়ে মুক্তির চুক্তিপত্র করে। অতঃপর সে যখন প্রতিদিন মুক্তিপণের কিছু অর্থ নিয়ে আসত, তখন হজরত আবু বকর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করতেন, এ অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করেছ? যদি সে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারত, তবেই তিনি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতেন, অন্যথায় তা গ্রহণ করতেন না। এক রাতে সে হজরত আবু বকর (রা.)-এর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সেদিন তিনি রোজা রেখেছিলেন, তাই সেই খাবার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ভুলে যান। তিনি অসচেতনভাবে তা থেকে এক লোকমা খেয়ে ফেলেন। এরপর মনে হওয়ামাত্র তাকে জিজ্ঞাসা করলেন— এ খাবার তুমি কীভাবে উপার্জন করেছ? ক্রীতদাসটি বলল, জাহেলিয়াতের আমলে আমি মানুষের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভালো গণক ছিলাম না, তাই মানুষকে শুধু ধোঁকা দিতাম। এই খাবার সেই ধোঁকার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংগৃহীত। হজরত আবু বকর (রা.) বললেন, সর্বনাশ। তুমি আমায় এ কি করেছ! অতঃপর তিনি গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করার চেষ্টা করলেন কিন্তু সেই খাবারের কিছুই বের হচ্ছিল না। তাকে বলা হলো, পানি না খেলে ওই খাদ্য বেরোবে না। তিনি পানি আনালেন এবং পানি পান করে ইচ্ছাকৃত বমির মাধ্যমে পেটের সব খাবার বের করে দিলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করুন। মাত্র এক লোকমা খাবারের জন্য আপনি এত অস্থির হলেন?  হজরত আবু বকর (রা.) বললেন, উক্ত খাবার বের করতে গিয়ে যদি আমার মারা যাওয়ারও ভয় থাকত, তবুও আমি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও তা বের করে ছাড়তাম। কেননা, রসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, যে শরীর হারাম খাদ্য নিয়ে হূষ্টপুষ্ট হয়, জাহান্নামই তার জন্য শ্রেয় স্থান। তাই আমি ভয় পেয়ে যাই, এ এক লোকমা হারাম খাবার দিয়ে আমার শরীর অন্তত কিছুটা হূষ্টপুষ্ট হতে পারে। —সহিহ বোখারি।

-লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর