সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাকিস্তানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

পাকিস্তানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে

বিজয়ের মাস চলছে। আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এক দিন পরই মহান বিজয় দিবস। ডিসেম্বর মাস এলেই প্রতি বছর মাসব্যাপী দেশজুড়ে বিজয়ের উত্সব চলে। কাছাকাছি দুটি দিন। বিজয় দিবস এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস। তাই বিজয়ের আনন্দ, আর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর বেদনায় মিশ্র অনুভূতির পূর্ণ হূদয়ে বাঙালি জাতি আগামী পরশু পালন করবে ৪৫তম বিজয় উত্সব। অশেষ ও অনির্বাণ কিছু পাওয়ার আনন্দ সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মানুষকে বেদনার কথা ভুলিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর অশেষ পাওয়ার আনন্দে আমরা উদ্বেলিত হয়েছি বটে, কিন্তু একটু পেছনে ফিরে তাকালেই দেখছি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াত, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আলবদর মিলে ৯ মাস ধরে পুরো বাংলায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে এবং পরাজয়ের আগমুহূর্তে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বাঙালি সমাজের মাথা অর্থাত্ বুদ্ধিজীবীদের। আমরা বিজয়ী জাতি। তাই প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে লাখ লাখ স্বজন হারার আর্তনাদ, দীর্ঘশ্বাস নিবারণের অভিপ্রায়ে সভ্যতা, মানবতাকে সম্মুন্নত রাখার জন্য যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের বিচারের জন্য যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যথাযথ আইন সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই বিচার শুরু হয় ২০১০ সালে এসে।

সম্প্রতি তরুণ প্রজন্মের একজন সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন পরাজয় নিশ্চিত জেনেও একাত্তরের ১৪-১৫ ডিসেম্বর তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল কেন? প্রত্যুত্তরে আমি বলেছি, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে হলে একাত্তরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের ঘটনার ওপর একটু নজর দিতে হবে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর সর্বাত্মক অভিযান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর টপ জেনারেল ও কমান্ডাররা বুঝতে পারেন তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত। একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর একটি গুলি খরচ না করে পাকিস্তানের একটি বিশাল সৈন্যবহর একজন ব্রিগেড কমান্ডারের নেতৃত্বে যখন যশোর থেকে পালিয়ে খুলনার দিকে চলে যায় তখন ঢাকায় পাকিস্তানের টপ জেনারেলরা বুঝতে পারেন সাধের পূর্ব পাকিস্তানে তাদের দিন শেষ, বাঙালির রক্তে মাখা সূর্যের আভায় উদ্ভাসিত বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কবর রচিত হতে যাচ্ছে। তারা শঙ্কিত হয় ৯ মাস বাংলার মাটিতে যে নৃশংস গণহত্যা তারা চালিয়েছে তার জন্য এক দিন না এক দিন তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তারা ভালো করে জানে আন্তর্জাতিক কনভেনশন ভঙ্গ করে তারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই, কেউ ক্ষমা করতে পারে না। এই অপরাধ কোনো দিন তামাদিও হয় না। সুতরাং এই বিচার এড়ানোর জন্যই তারা নতুন পরিকল্পনা আঁটে। স্বাধীন হলেও যাতে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার মতো শক্তিতে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য চূড়ান্ত পরাজয়ের আগে বাঙালির সব মাথা কেটে ফেলতে হবে। এই পরিকল্পনার মূল নায়ক ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, যিনি বঙ্গভবনে (তত্কালীন গভর্নর হাউস) বসে জামায়াত, মুসলিম লীগ ও শান্তি কমিটির নেতাদের সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা তৈরি করেন। পাকিস্তানি সেনা কমান্ডারদের ধারণা ছিল আপাতত স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ টিকে থাকবে না। পরবর্তীতে বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তায় এবং বাঙালি সহযোগীদের প্রচেষ্টায় পুনরায় তারা পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, আর তা না হলেও নিদেনপক্ষে বাংলাদেশে এমন একটি রাষ্ট্রীয় পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি বাংলাদেশ থেকে কোনো দিন না ওঠে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই জামায়াত প্রধান গোলাম আযমের নেতৃত্বে পরাজয়ের পরপরই তারা শুরু করে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহণ এবং তার হাত ধরে জামায়াত, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আলবদরদের বাংলাদেশে পুনরায় উত্থান, ক্ষমতায় আরোহণ ও ক্ষমতা বিস্তারের ধারাবাহিক কাহিনী এখন সবাই জানেন। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের অনুমতিতে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতা গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে থেকে যান। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। জিয়া, এরশাদ এবং পরবর্তীতে জামায়াত-বিএনপির শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বলতে আর কিছুই ছিল না। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াতের চিহ্নিত দুই যুদ্ধাপরাধী, নিজামী ও মুজাহিদকে বিএনপি যখন মন্ত্রী বানাল তখন পাকিস্তানের মিলিটারি ও মোল্লারা নিশ্চয়ই খুশিতে বগল বাজিয়েছে এবং আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলেছে এই ভেবে যে, একাত্তরে বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য তাহলে অনেকটাই সফল হলো। যাদের এখনো পাকিস্তান নিজেদের লোক মনে করে সেই জামায়াতের নিজামী ও মুজাহিদ মন্ত্রী হওয়া আর পাকিস্তানের লোক মন্ত্রী হওয়ার মধ্যে গুণগত ও আদর্শগত কোনো পার্থক্য নেই। তার প্রমাণ ২০০১-২০০৬ মেয়াদে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। তাই ওই সময়ে পাকিস্তান হয়তো মনে করেছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আর কোনো দিন তোলা হবে না। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি আবার জেগে উঠেছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে পাকিস্তানের চার সহযোগীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আরও কয়েকজন লাইনে আছে। সঙ্গত কারণেই পাকিস্তানের আঁতে ঘা লেগেছে। একাত্তরের পাপের ভারে ডুবন্ত অবস্থায়ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে গণহত্যার দায় অস্বীকার করছে এবং এদেশীয় গাদ্দার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে ঔদ্ধত্য আচরণ করছে। কিন্তু তাদের বাঁচার উপায় নেই। তাদের নিজস্ব দলিলপত্র, বই-পুস্তকে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও অঙ্গনে বিস্তর প্রমাণ রয়েছে একাত্তরে বাংলাদেশে তারা কতবড় নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর যুদ্ধের প্রথমভাগে বাংলাদেশে গণহত্যার অন্যতম সেনানায়ক, তখনকার ১৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা কর্তৃক লিখিত ‘A stranger in my own country’  গ্রন্থের ভূমিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ‘We exploited East Pakistan and when the people rose demanding thier right of self determination, the Pakistan millitary,  তা ছাড়া পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক চেষ্টা করেও গণহত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ধামাচাপা দিতে পারেনি। গণহত্যার অন্যতম ঠাণ্ডা মাথার পরিকল্পনাকারী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী নিজের গা বাঁচানোর জন্য তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন, ‘লে. কর্নেল ইয়াকুব মালিকের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭-২৮ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে অফিসারসহ ১৯৫ জন বাঙালিকে স্রেফ জবাই করা হয়। সালদা নদী এলাকায় ৫০০ জনকে হত্যা করা হয় এবং গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরগুলো শত্রুমুক্ত করার নামে সেনাবাহিনী নির্দয়ভাবে ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। একজন ব্রিগেড কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার ইকবালুর রহমান তার জবানবন্দিতে বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল গুল হাসান পূর্ব পাকিস্তানের সেনা ইউনিট পরিদর্শনের সময় সেনাদের জিজ্ঞাসা করতেন, তুমি কতজন বাঙালিকে মেরেছ? আরেকজন অফিসার লে. কর্নেল আজিজ আহমদ খান সাক্ষ্যে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে তার ইউনিট পরিদর্শনে গিয়ে জেনারেল নিয়াজি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমরা কত হিন্দু মেরেছ? জেনারেল নিয়াজি তার নিজের লেখা—‘The Betrayal of East Pakistan’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন জেনারেল টিক্কা খান তাকে বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। নিয়াজি তার বইয়ে লিখেছেন— টিক্কা খান পোড়া মাটি নীতি গ্রহণ করেন এবং সেই অনুসারে জেনারেল রাও ফরমান আলী ও ব্রিগেডিয়ার জানজেব আরবাব হুকুম পালন করেন। জেনারেল ফরমান আলী তার টেবিল ডাইরিতে উল্লেখ করেছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ ভূমি বাঙালির রক্তে লাল করা হবে’। নিয়াজি তার বইয়ে আরও লিখেছেন— ২৫ মার্চ রাতে জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় ছিলেন এবং তিনি দেখেছেন সেদিন রাতে টিক্কা খান কী করেছেন। সারা রাত ট্যাংক, কামান, মেশিনগানের ভয়ার্ত শব্দ ভেদ করে ভেসে এসেছে ঢাকার অসহায় মানুষের আর্তনাদ। আরেক পাকিস্তানি অফিসার ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক ‘Witness to surrender’ গ্রন্থের ৭৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন, ‘২৬ মার্চ সকালে টিক্কা খান শেরে বাংলা নগরে তার অফিসের বান্দারায় দাঁড়িয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ঢাকা তো পরিষ্কার, কিছু রাস্তার কুকুর ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না’। জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ আছে, মার্চ মাসে ঢাকায় উত্তাল আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগেই একাত্তরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক অ্যাকশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এত গেল পাকিস্তানি অফিসারদের নিজস্ব সামান্য স্বীকারোক্তি। বিদেশি সাংবাদিক ও কূটনীতিকদের রিপোর্টেও ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ সাংবাদিক সায়মন ড্রিংয়ের সেই বিখ্যাত প্রতিবেদন ছাপা হয় লন্ডনের দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। ওই রিপোর্টের একাংশের বাংলা করলে দাঁড়ায়— ‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান ও ধর্মের নামে ঢাকা নগরীকে ধ্বংস করে একটা ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে কম করে হলেও শুধু ঢাকায়ই সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ঢাকার অনেক এলাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে’। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকান কন্সাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড তার নিজের লিখিত ‘ক্রয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ২১৩ পৃষ্ঠায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাছাই করা গণহত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। এই গণহত্যার রিপোর্ট তিনি ২৮ মার্চ ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন। একই রকম বাছাইকৃত গণহত্যার বর্ণনা পাওয়া যায় তখন দিল্লিতে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ‘কেন কিটিংয়ের প্রতিবেদনে, যা আর্চার ব্লাড তার বইয়ের ২১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন। সুতরাং পাকিস্তান সেনাবাহিনী একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের থেকে ভয়ানক খারাপ অবস্থায় ছিল, এখনকার জেলা, তখনকার মহকুমা শহরের সঙ্গে সব জায়গায় সড়ক যোগাযোগ ছিল না। ওই রকম যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাকিস্তান আর্মি গ্রামেগঞ্জে গিয়ে কিছুতেই হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারত না যদি রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য, জামায়াত, মুসলিম লীগাররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে না থাকত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও জাপানের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন হয় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপর। তারপরও জার্মানি সমগ্র ইউরোপের কাছে এবং জাপান, চীন ও কোরিয়ার কাছে একাধিকবার আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তান অপরাধ তো করেছেই, আবার ৪৪ বছর পর এদেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে দ্বিতীয়বার অপরাধ করেছে, ভঙ্গ করেছে সব আন্তর্জাতিক রীতিনীতি। তাদের পাপের বোঝা দিন দিন ভারী হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের থেকে সবদিক থেকে এগিয়ে আছে। মোল্লা ও মিলিটারির কবলে পড়ে তারা মিথ্যা অহংবোধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণতায় ভুগছে। কিন্তু উপায় নেই। আন্তর্জাতিক আইনের কাছে তাদের মাথা নত করতে হবে, যেমনটি তারা করেছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া ব্যতিরেকে অন্যকিছু বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

     লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

     [email protected]

সর্বশেষ খবর