শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

যুবসমাজ মসজিদমুখী হোক

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

যুবসমাজ মসজিদমুখী হোক

‘আর মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। তাই তোমরা আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে ডেকো না।’ (সূরা জিন, ৭২:১৮।) ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো মসজিদ এবং নিকৃষ্ট স্থান হলো বাজার।’ (মুসলিম।)

পৃথিবীর সব মসজিদই আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, উপাসনা-আরাধনার জন্য নির্দিষ্ট। রসুল (সা.)-এর সময় মদিনাতুল মুনাওয়ারার পবিত্র মসজিদে নববি প্রধান বিচারালয়, সংসদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হতো। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধিরা এলে রসুল (সা.) মসজিদেই তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন। খোলাফায়ে রাশেদিনরাও একই সুন্নত মেনে চলেছেন।

মসজিদমুখী কাজের সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো— আল্লাহর ঘরে বসে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা ও অন্যান্য কাজ পরিচালনার জন্য শান্তি ও তাকওয়াময় পরিবেশ পাওয়া যায়। তা ছাড়া যেহেতু মুমিনের প্রতিটি কাজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, তাই মসজিদে বিভিন্ন ধরনের সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজ করা দোষ নয় বরং প্রশংসনীয়। আমাদের সমাজে কে যেন মিথ্যা হাদিস রটিয়ে দিল ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম।’ যে কথা মসজিদে হারাম মসজিদের বাইরেও তা হারাম। আমরা মসজিদের জীবন এবং সমাজ জীবনের মাঝে একটি অজ্ঞতার দেয়াল তৈরি করে নিয়েছি। ফলে দেখা যায় মসজিদের ভদ্র মানুষটি, মসজিদের বাইরে ভয়ানক সন্ত্রাসী।

মসজিদের নামাজি ব্যবসায়ী, বাইরে ভেজাল চক্রের সদস্য। মসজিদের সম্মানিত সদস্য সুদের কারবারের সঙ্গে জড়িত। এসবের পেছনে একশ্রেণির নামধারী-বেশধারী আলেমরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। উম্মতকে মসজিদ থেকে দূরে রাখতে তারা রসুলের নামে মিথ্যা হাদিস বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। সরলমনা মুসলমানও ধর্ম ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়েছে খুব সহজেই। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ মোল্লা আলী কারি হানাফি, আজলুনি আশ-শাফেয়ি এবং ইমাম শাওকানিসহ সব মুহাদ্দিস একমত মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত সব হাদিস জাল-বানোয়াট ও মিথ্যা। (আল আসরার, পৃ.২২৭; আল মাসনু, পৃ. ১৪৭; আল ফাওয়াইদ, খ. ১, পৃ. ৪৪।) বরং সহি হাদিস থেকে জানা যায়, মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করা, হারানো-পলাতক কিছু খোঁজ করা বা চিত্কার করা নিষেধ। তবে দুনিয়াবি কথা বলা, কবিতা আবৃতি করা, হাসাহাসি করা নিষেধ নয়। জাবির (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) যে স্থানে ফজরের সালাত আদায় করতেন সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। তার সামনেই সাহাবিরা জাগতিক কথা বলতেন, জাহেলি যুগের আলোচনা করতেন, কবিতা আবৃতি করতেন এবং হাসতেন। আর রসুল (সা.) শুধু মুচকি হাসতেন। (মুসলিম)

একশ্রেণির আলেম মসজিদে পেপার পড়া কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করাকে দোষ মনে করেন। তারা জানেন না পত্রপত্রিকা পড়া/ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য সবচেয়ে ভালো/উত্তম জায়গা হলো মসজিদ। মসজিদে একজন তরুণ যখন নেট ব্রাউজ করবে, তখন তার আত্মায় আল্লাহর ভয় কাজ করবে। অশ্লীল পর্নোগ্রাফি তাকে টানবে না। আমাদের মসজিদগুলোতে তরুণদের উপস্থিতি নিতান্তই কম। এর কারণ হলো মসজিদ ব্যবস্থাকে তরুণদের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। আমাদের সরকার এবং আলেমরা তরুণদের নিয়ে কম ভাবেন। সরকার তরুণদের সব দিকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি যদি তরুণদের মসজিদমুখী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ সমৃদ্ধি ও শান্তির দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর