সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ বিসংবাদ

জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি নজর দিন

বাংলাদেশকে বলা হয় অমিত সম্ভাবনার দেশ। বিদ্যমান সম্ভাবনাগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে সিকি শতাব্দীর মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিজেকে শামিল করতে পারবে বাংলাদেশ— বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে এমন কথা প্রায়শই বলা হয়। পশ্চাত্পদ চিন্তাভাবনা এবং আমলাতান্ত্রিকতা বাংলাদেশের অপেক্ষমাণ সম্ভাবনাগুলোর সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দেশের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। বিদেশি বিনিয়োগ উত্সাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যত বিনিয়োগবান্ধব নীতিও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও আইনি মারপ্যাঁচে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর অবিমৃষ্যকারিতা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথকে রুদ্ধ করছে। দুই বছর আগে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে এসে ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে যায়। কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ঢাকায় বেপজার চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কারখানা স্থাপনে জমি চাওয়া হয়। বেপজার পক্ষ থেকে তত্পরতা দেখানো হলেও জমি দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সে বিনিয়োগ চলে যায় অন্য দেশে। ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। সনি ইলেকট্রনিক্সও বিনিয়োগ করতে এসে ফিরে গেছে জমি না পেয়ে। জাপানের নেতৃস্থানীয় আবাসন শিল্প ক্রিড গ্রুপ বাংলাদেশে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়েও হোঁচট খাওয়ার মতো বৈসাদৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছে। এ কোম্পানিটি ২০১২ সালে জাপানের বাইরে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। চারটি দেশে এ পর্যন্ত তারা তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে কাজ শুরু করাই দুরূহ হয়ে উঠছে। এশিয়ার চার দেশে একই সময়ে তারা ১১ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির কৃতিত্ব দেখালেও বাংলাদেশে আইনি বাধায় বর্ধিত বিনিয়োগ আটকে যাওয়ায় এ পর্যন্ত তাদের পক্ষে মাত্র ৪৯ ইউনিট তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। আমরা বার বার বলেছি, দেশের উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে উত্সাহিত করতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নই শুধু নয়, তা বাস্তবায়নেও উদ্যোগী হতে হবে। জাপানি বিনিয়োগ নিয়ে যে অনাহূত সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেবে এমনটিই কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর