বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নৃশংসতা

অন্তত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক

রাজধানীর উত্তরায় এক অটোরিকশা চালকের ওপর যাত্রীবাহী বাস চালিয়ে দিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অটোরিকশাটি যাত্রী নিয়ে আবদুল্লাহপুরের দিকে যাওয়ার সময় জসীমউদ্দীন রোডের সিগন্যালে থামে। এ সময় আবদুল্লাহপুর-মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী তেঁতুলিয়া পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। অটোরিকশা চালক ফারুক গাড়ি থেকে নেমে বাসচালকের কাছে জানতে চায় তার অটোরিকশাকে ধাক্কা দেওয়া হলো কেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কিছুটা তর্ক-বিতর্কও হয়। এ সময় সিগন্যাল ছেড়ে দিলে বাসচালক ‘তুই সর নইলে পিষ্যা ফেলামু তোরে’ বলে অটোরিকশা চালককে হুমকি দেয়। অটোরিকশা চালক সরে দাঁড়ানোর আগেই তার ওপর চালিয়ে দেয় যাত্রীবাহী বাস। বাসের চাকায় অটোরিকশা চালক আটকে গেলে সে অবস্থায় আধা কিলোমিটার চালিয়ে আজমপুর সিগন্যালে বাসটি থামে। ঘটনার আকস্মিকতায় বাসযাত্রীরা বিমূঢ় হয়ে পড়লেও বাস থামার সঙ্গে সঙ্গে তারা চালককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। দেশে বাস ও ট্রাক চালকদের একাংশের বেপরোয়া আচরণ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। উত্তরায় গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় অটোরিকশা চালকের ওপর বাস তুলে দিয়ে যে নৃশংসতা দেখানো হলো তার কোনো তুলনাই নেই। সড়ক দুর্ঘটনা দুনিয়ার প্রতিটি দেশেই ঘটে থাকে, আমাদের দেশে তার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু জ্ঞাতসারে হুমকি দিয়ে কারও ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার নৃশংসতা কল্পনা করাও কঠিন। বাস-ট্রাক চালকদের সাতখুন মাপ কথাটি আমাদের দেশে প্রবচনের মতোই ব্যবহূত হয়। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়েও চালকরা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পায় শক্তিশালী ইউনিয়নের জোরে। সরকার এমনকি দেশের আইনকানুনও যেন পরিবহন চালকদের কাছে জিম্মি। স্বভাবতই যা ইচ্ছে তাই করার মনোভাব তাদের মধ্যে প্রকট হয়ে উঠছে। রাজধানীতে শত শত লোকের সামনে একজন অটোরিকশা চালকের ওপর বাসের চাকা তুলে দেওয়া তারই উদাহরণ। আমরা আশা করব অতীতে যাই হোক অন্তত অটোরিকশা চালক ফারুক হত্যার দায়ে নৃশংস বাসচালক যাতে বিচারের মাধ্যমে তার প্রাপ্য শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে।  বাস-ট্রাক চালকদের বেপরোয়া আচরণে লাগাম পরানোর স্বার্থে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে  আত্মসমর্পিতের মনোভাব দেখানো হবে না আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর