শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইসলামী জীবন

মুফতি আমজাদ হোসাইন

ইসলামী জীবন

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টির সেরা মানবরূপে সৃষ্টি করার পর মানের বলে বলীয়ান করেছেন। তিনি আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী সায়্যেদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আমরা মুসলমান। আমাদের পরিচয় হলো, আমরা আমাদের নবী (সা.)-এর প্রকৃত অনুসারী।  আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলামের প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখা জেনে আমলে রূপান্তরিত করাই ইসলামের দাবি। আমরা নবীজীর উম্মত হিসেবে তিনি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বাতলিয়ে গেছেন। সাহাবায়ে কেরামদের বিশাল জামাতের মাধ্যমে কোরআন-হাদিসের বাস্তব রূপরেখা রেখে গেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আলে-ইমরানের ১০২নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুসলমান! অন্তরে আল্লাহকে সেভাবে ভয় কর, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। সাবধান অন্য কোনো অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে। বরং এ অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু আসে যে, তোমরা মুসলমান।’ আলোচ্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা একটি মূলনীতির আলোকপাত করেছেন, তা হলো তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্থাত্ তাঁর অপছন্দনীয় কাজকর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকা। নিজেকে দীন-ইসলামমুখী করা। বদদীন, শারারাত ও খোরাফাত থেকে নিজেকে, অপর ভাইকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখার সাধ্যমতো চেষ্টা করা। ইমানি হালাতে যেন মৃত্যু হয় তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনে প্রত্যেক নামাজের পর দোয়া করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন। তাকওয়ার অর্থ হলো, প্রত্যেক কাজকর্মে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা। জীবনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহকে হাজের নাজের মনে করা। কখনো ও কোনো অবস্থাতেই আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া। (বাহরে মুহিত) আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার তার সব অবলম্বন  করা। আর আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জিত হয় সেজদার মাধ্যমে। হজরাতে আম্বিয়ায়ে কেরামরা আল্লাহপাককে সার্বক্ষণিক নিজের সঙ্গে আছে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। যেমন হজরত মূসা (আ.) বনি ইসরাইলকে বলেছিলেন,  ইন্না মাইয়া রাব্বি (আমার রব আমার সঙ্গে আছেন)। হজরত রসুলে আরাবি (সা.) মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করার সময় পথিমধ্যে সোরাকা বিন মালেককে দেখার কারণে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছিলেন, সে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের কাছে এসে পড়বে। তখন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে রসুল (সা.) বলেন,  লা-তাহযান ইন্নাল্লাহা মায়ানা (কোনো চিন্তা কর না আমাদের সঙ্গে আল্লাহ আছেন)। পবিত্র কোরআনের অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্পর্কেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।’ (সূরা ক্বাফ : ১৬) বস্তুত আল্লাহর ভয় ও নৈকট্যতা অর্জন হয় ইবাদতের মাধ্যমে। আর আল্লাহর ভয় সৃষ্টি ও ইবাদতের স্বাদ ওই ব্যক্তির ভিতরে থাকে, যার মধ্যে এত্তেবায়ে সুন্নত তথা সুন্নতের অনুসরণ আছে। সুন্নতের মুহাব্বত তখনই আসবে যখন মুসলমান জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থাত্ পোশাকে-লেবাসে, চলনে, বলনে খানা-পিনায় রসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অন্তরে স্থান দেবে এবং সুন্নতি জীবনযাপন করবে। কোনোভাবেই সুন্নত থেকে পিছপা হবে না।

আল্লাহ অখুশি হন এমন কোনো কাজে সে নিজেকে লিপ্ত করে না। আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে এসেছে, হজরত রসুলে মকবুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে কোনো ব্যক্তি যে জাতির সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করবে, সে কেয়ামতের দিন তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লামা আবদুর রউফ মানাবী (র.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় স্বীয় কিতাব ফয়জুল কাদিরে বলেন, অন্যের সভ্যতা গ্রহণ করার অর্থ হলো, তাদের সব কিছু গ্রহণ করা। তাদের রীতিনীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। তাদের চরিত্রে চরিত্রবান হয়ে পোশাকে-লেবাসে এবং বেশ-ভূষায় তাদের তরিকা গ্রহণ করা। অথচ ইসলামী শরিয়তে অন্যের সভ্যতা ও যারা আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাসী নয় তাদের তাহযীব-তামাদ্দুন গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃত মুসলমান তো সেই, যার ভিতরে ইমানি চেতনা ও জবানে ইমানের স্বীকৃতি আছে। বাস্তব জীবনে ইসলামী জীবন ধারণ করে চলে। নববী আদর্শে জীবন গঠন করে। সে কখনো ইসলাম বাদ দিয়ে অন্যের কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা-সংস্কৃতি ও রুসুম-রেওয়াজ গ্রহণ করতে পারে না। অশান্তির পথে হাঁটতে পারে না। সর্বদা শান্তির পথে চলবে। শান্তির পথে মানুষকে দাওয়াত দেবে। ইসলাম যেহেতু শিরক, বিদআত ও কুসংস্কারকে কোনোভাবেই সাপোর্ট করে না, মুসলমানরা তা কখনো গ্রহণ করতে পারে না। প্রিয় পাঠক! একটু ভেবে দেখুন তো আমাদের কি একদিন মরতে হবে না? আল্লাহর সামনে হিসাব দেওয়ার জন্য একদিন দাঁড়াতে হবে না? অবশ্যই মরতে হবে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। নিজের সব কর্মের পুরোপুরি হিসাব দিতে হবে। তাই আমরা সব মুসলিম ভাই কোরআন-হাদিস সমর্থিত সব ধরনের  আমল করি। কোরআন-হাদিস সমর্থিত নয় এমন কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকি। সঠিক পদ্ধতিতে আমল করার জন্য কোরআন-হাদিস বোঝার চেষ্টা করি। উল্লিখিত বিষয়গুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমাদের সামনে পথচলা উচিত। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সব ধরনের শির্ক, বদআত ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।  আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর