শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মোমেনকে ধাপে ধাপে শাস্তি দেওয়া হবে ময়লা ধোলাইয়ের জন্য

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ

মানুষ আমল করে আবার গুনাহও করে। এভাবে আমল ও গুনাহ করার মধ্য দিয়েই এক দিন নিভে যাবে তার জীবন প্রদীপ। আমলের কারণে তার জান্নাতে যাওয়ার কথা, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় গুনাহ পাহাড়। তাই মহান আল্লাহ তার ক্ষমার জন্য বিভিন্নভাবে তওবার সুযোগ করে দেন। দেখা যায় মৃত্যুর আগে সে কিছুদিন অসুখে ভোগে, এতে তার তওবার সুযোগ হয়। অসুখের কষ্ট ও তওবার কারণে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কারও কোনো হক নষ্ট করে থাকলে তাকে খবর দিয়ে এনে মাফ চেয়ে নেয়। স্বভাবতই মানুষ অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি দুর্বল থাকে, মাফ চাইলে ক্ষমা না করে পারে না। কারণ তাকেও তো এক দিন দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে। তাই স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে অসুখে ভোগে মৃত্যু হওয়া অনেক ভালো। এমন মৃত্যু কাম্য। কারণ এটা গুনাহ মাফ হওয়ার উসিলা হয়। তাই অসুখের কষ্ট শাস্তি নয় বরং তার অন্তরে লুকায়িত অহঙ্কার, রিয়াজনিত ময়লা দূর করে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের উপযোগী করে তোলেন।

অনেক সময় তওবার সুযোগ পায় না। হঠাত্ মারা যায়। তার কী গতি হবে? আল্লাহ পাক চাইলে তাকে নিজ অনুগ্রহে ক্ষমা করে দেবেন, চাইলে শাস্তি দেবেন। শাস্তিটা শাস্তির জন্য নয়, বরং অন্তরের ময়লা ধোলাই করার জন্য। যেমন কাপড় ময়লা হলে আমরা ধোলাই করে থাকি। ময়লার পরিমাণ দেখে ধোলাই করা হয়। ময়লা কম হলে সাবান দিয়ে সামান্য খচা দিলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। ময়লা বেশি হলে কিছু সময় পাউডার দিয়ে ভিজিয়ে রেখে ধোলাই করতে হয়। আবার অনেক কাপড়ে এত পরিমাণ ময়লা জমে, পাউডার দিয়ে ভিজালেও হয় না। বরং গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে অনেক আছড়িয়ে পরিষ্কার করতে হয়। মানুষের অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার ব্যাপারটাও এমনই। কারও ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায় তওবা ও চোখের দুই ফোঁটা অশ্রুতেই। কারও ময়লা পরিষ্কার হয় দীর্ঘদিন অসুখে ভোগে কষ্ট করার দ্বারা। কারও ময়লা দূর হয় কবরের আজাবে। আবার কারও অন্তরে এত পরিমাণ ময়লা জমে যে, কোনো কিছুতেই তার ময়লা দূর হয় না।

সে ময়লা দূর করার জন্য জাহান্নামের উত্তপ্ত গরম পানিতে চুবাতে হয়। তাই আল্লাহপাক মোমেনকে জাহান্নামে দেবেন শাস্তির জন্য নয়, তার অন্তরের ময়লা দূর করার জন্য। আমল করার কারণে জান্নাতে যাবে, তবে অন্তরের ময়লা দূর করার জন্য তাকে সাময়িকের জন্য হলেও শাস্তি পেতে হবে। সে শাস্তিটা মৃত্যুর আগেও হতে পারে, মৃত্যুর পর কবরেও হতে পারে। আবার হতে পারে জাহান্নামের শাস্তি। কিছু কিছু গুনাহর শাস্তি হাদিসে নির্ধারণ করা আছে। যেমন কেউ স্বেচ্ছায় এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করলে এক হুকবা তথা এক লাখ আটাশি হাজার বছর তাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। এটা তাকে শাস্তির জন্য নয়। বরং এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করাতে তার শরীরে যে ময়লা জমেছে, তা দূর করার জন্য এক লাখ আটাশি হাজার বছর জাহান্নামের উত্তপ্ত গরম পানিতে চুবাতে হবে, এ ছাড়া সে ময়লা দূর হবে না। অন্যান্য গুনাহর শাস্তির ধরনও এমনই। যে গুনাহ যত বেশি মারাত্মক ও ক্ষতিকর, সে গুনাহর জন্য ততবেশি জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। এটাই আল্লাহর বিধান। গুনাহমুক্ত জীবনই আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের কাম্য।

 

লেখক : খতিব, বায়তুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর