রবিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

রোগীদের জিম্মি করার প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক

চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে রোগীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা ধর্মঘটে নেমেছেন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু ও অস্ত্রোপচারের সময় পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেওয়ার পৃথক অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ থাকবে। স্মর্তব্য, ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেহেরুন্নেছা নামের এক প্রসূতি সন্তান প্রসবের পর মারা যান। একই দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ দুই ব্যাপারে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হলে চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘটে নামে। চিকিৎসকদের ধর্মঘট একদিকে যেমন চট্টগ্রামের শত শত রোগীকে জিম্মি অবস্থায় ফেলেছে তেমন এই ধর্মঘটের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এটি সভ্য সমাজের রীতি। দেশের সংবিধানে কোথাও বলা নেই চিকিৎসকরা আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে পারবেন না। চিকিৎসকরা তাদের চেম্বারে কর্মবিরতি পালন করায় চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোর আউট ডোরে রোগীর ভিড় বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর ভিড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো চিকিৎসকই চান না তাদের চিকিৎসার সময় রোগীর মৃত্যু হোক। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভুল যাতে না হয় তা এড়াতেও তারা তত্পর থাকেন। কিন্তু চিকিৎসার সময় রোগীর মৃত্যু হলেই হাসপাতালে ভাঙচুর কিংবা মামলা করার প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয়। চিকিৎসাবিদ্যা একটি টেকনিক্যাল বিষয়। চিকিৎসকের অবহেলা ছিল কিনা তা পুলিশ কিংবা আইজীবীর নির্ধারণ করার মতো বিষয় নয়। যে কারণে প্রাথমিক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরই কেবল মামলা করা যেতে পারে। চিকিৎসকের অবহেলায় কোনো রোগীর মৃত্যু হলে তার স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হতেই পারেন, তবে সে জন্য হাসপাতালে ভাঙচুর করে ক্ষোভ প্রকাশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে কোনো রোগীর স্বজন আইনের আশ্রয় নেওয়ায় চিকিৎসকরা ধর্মঘটে নামবেন এটিও সভ্য সমাজে আশা করা যায় না। চিকিৎসা একটি মানবিক পেশা। রোগীর জীবন বাঁচানোকে চিকিৎসকরা কর্তব্য হিসেবে দেখবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।  কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে তারা মানবিকতাকে অগ্রাধিকার দেবেন আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর