বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার

মানুষের জন্য হুমকির সৃষ্টি করছে

অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশক ওষুধের ঢালাও ব্যবহার মানুষের জীবনের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১৯২৭ সালে অণুবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন। মানুষের রোগ মুক্তির ক্ষেত্রে এর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ প্রয়োগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সহজাত ক্ষমতাকে কেড়ে নিচ্ছে। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া দুনিয়ার কোথাও ওষুধ বিক্রির নিয়ম নেই। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের এক বড় অংশ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন নন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনেন নিজেদের মর্জিমাফিক। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাত-আটটি গুরুত্বপূর্ণ জেনেরিকের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ জীবাণুর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। দেশের মানুষের পুষ্টির জোগান দিতে মাছ-মুরগি উত্পাদনের উদ্যোগ বেড়েই চলেছে। মাছ-মুরগি রোগমুক্ত রাখতে কিংবা মড়ক ঠেকাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগকৃত এসব ওষুধ অনেকব ক্ষেত্রে রান্নার তাপেও নষ্ট হয় না। ফলে ওই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে ঢুকে বয়ে আনে মারাত্মক ক্ষতি। বিশেষ করে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করার বড় কারণ হিসেবে মাছ-মাংসের অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিককে দায়ী করা হয়। গবাদি পশুর পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। সারা দুনিয়াজুড়ে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের ৫০ শতাংশই ব্যবহার হয় কৃষি খাতে। এসব কৃষি পণ্য ব্যবহার করার পরিণতিতে জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ২০৫০ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে ১ কোটি মানুষ মারা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে রাজধানীর ৫৫.৭০ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ঢাকা মহানগরে যেসব রোগজীবাণুর সংক্রমণ ঘটে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না। এ তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে রাজধানীর বাইরের বাস্তবতারও মিল থাকার কথা। কারণ গবাদি পশু ও মুরগি শুধু নয় মত্স্য খামারগুলোতেও ব্যাপকভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ ঘটছে। বাংলাদেশের মত্স্য খামারগুলোতে ১০ ধরনের ও ৫০ শ্রেণির রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যবহৃত এসব অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। এ বিপদ ঠেকাতে সরকারকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রিতেও জারি করা দরকার নিষেধাজ্ঞা।

সর্বশেষ খবর