শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ভেজাল প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

খাদ্য ও পণ্যে ভেজাল প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা, যা মানব এবং মানবতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা জানি আল্লাহতায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্য এক মহতী পেশা। এর মাধ্যমে যেমনি ব্যক্তি পার্থিব জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও আর্থিক সচ্ছলতা লাভ করে, অনুরূপভাবে পরকালীন জীবনেও মুক্তি ও সফলতা লাভে ধন্য হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বিশ্বস্ত ও সৎ ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের দিন নবী সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবেন। (তিরমিযি)

তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তার ব্যবসা নীতিতে কোনো প্রকার ধোঁকা, প্রতারণা, মিথ্যার আশ্রয়, শঠতা ও অসৎ উদ্দেশ্য স্থান পেতে পারে না। আর এটাই হলো ইসলামের ব্যবসা নীতি। এদের ব্যাপারে আল্লাহর হাবীব এরশাদ করেছেন— কিয়ামতের দিন সব ব্যবসায়ীকে অপরাধী হিসেবে আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হবে, তবে যারা পরহেজগার ও সৎ তারা ব্যতীত। (মিশকাত)

অতএব, ব্যবসার ক্ষেত্রে ইসলামী নীতি অনুসৃত হলে ভেজালমুক্ত খাদ্য ও পণ্যদ্রব্য সরবরাহ সম্ভব এবং এর মাধ্যমে যেমনি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে তেমনিভাবে ব্যক্তি, জাতি, গোষ্ঠী— নির্বিশেষে সমাজ ও রাষ্ট্র সবাই উপকৃত হবে। ভেজাল নামক ঘাতক থেকে রক্ষা পাবে। নিম্নে ভেজালের স্বরূপ ও এর প্রতিকারে ইসলামী নির্দেশনা সম্পর্কে সম্যক আলোকপাত হলো।

ভেজাল বলতে যা বুঝি : এর অর্থ হলো নিকৃষ্ট, খাঁটি নয় এমন নিকৃষ্ট দ্রব্য মিশ্রণ, গণ্ডগোল, ঝামেলা, কৃত্রিম, মেকি, এক কথায় নিকৃষ্ট পদার্থ যা উত্কৃষ্ট পদার্থের সঙ্গে মিশানো হয় কিংবা নিকৃষ্ট পদার্থ মিশ্রিত খাঁটি বা বিশুদ্ধ নয় এমন যে কোনো বস্তুকে ভেজাল বলে। পবিত্র কোরআন শরিফে ভেজালের প্রতিশব্দ এবং বিপরীত শব্দ হিসেবে এর উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং ভেজাল মানে অপবিত্র, নিকৃষ্ট খাবার পানীয় যা অকল্যাণকর ও অস্বাস্থ্যকর, মহান আল্লাহর বাণী— আর তিনি পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করেছেন এবং অপবিত্র ও নিকৃষ্ট বস্তুসমূহকে হারাম করেছেন। (সূরা আরাফ-১৫৭)

সম্প্রতি আমাদের দেশে পরিচালিত ভেজালবিরোধী অভিযানে ভেজালের যে বীভৎস চিত্র ধরা পড়েছে, তা দেশবাসীকে একদিকে হতবাক করেছে, অন্যদিকে তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত হাজারো অজানা শঙ্কা। এসব ভেজালের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য সংক্রান্ত কটি যেমন— ১. বিভিন্ন আড়তে সংরক্ষিত মৃত মুরগি, গরুর গোশত ও পচা ডিম। ২. হোটেল রেস্তোরাঁয় সংরক্ষিত অনেক দিনের পচাবাসী খাবার পরিবেশন। ৩. ফরমালিন জাতীয় বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত মাছ সরবরাহ। ৪. নাপাক শূকরের চর্বি হতে প্রাপ্ত তেলে ভাজা মিষ্টিদ্রব্য। ৫. বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে পাকানো ও সংরক্ষিত ফলমূল ও শাকসবজি। ৬. নির্ধারিত, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও গুঁড়োদুধসহ শিশুদের খাদ্যদ্রব্য। ৭. সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার। ৮. নিম্নমান কিংবা ক্ষতিকারক উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য। ৯. দুধের সঙ্গে পানি মিশ্রণ কিংবা পাউডার ও দুধের মিশ্রণ।

পণ্যদ্রব্যে ভেজালের স্বরূপ : ১. নিম্নমানের উৎপাদনের তৈরি পণ্যদ্রব্য। ২. নিম্নমানের পণ্যদ্রব্যে উচ্চমানসম্পন্ন বলে চালানো, কিংবা অভ্যন্তরে নিম্নমানের পণ্য রেখে বহির্ভাগে উত্তম পণ্য সাজানো। ৩. ওজনে কম-বেশি করা। ৪. দুগ্ধবতী গাভী বিক্রয়ের আগে দুধ আটকে রাখা। ইসলাম কল্যাণকর পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, এতে মানুষের জন্য যা হীতকর নয়, অকল্যাণকর ও নিকৃষ্ট যেসব বস্তু, পণ্য ও বিষয় হতে বিরত থাকতে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে ভেজাল পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ অবৈধ এবং পাপের কাজ।

সর্বশেষ খবর