শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাইকোর্টের বিজ্ঞোচিত রায়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব কাম্য নয়

সংসদ সদস্যরা আর ইচ্ছা হলেই বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না। ইচ্ছা হলেই সংসদ সদস্যরা বেসরকারি কলেজ বা স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার যে সুযোগ ভোগ করতেন, হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট বিধানটি বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বাদ সাধা হলো। বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে তাত্পর্যপূর্ণ এই আদেশ দেন। হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে হলে সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। হাইকোর্টের আদেশে বর্তমানে যেসব সংসদ সদস্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা কমিটির মেয়াদ থাকা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে নতুন করে কেউ সংসদ সদস্য এই ক্ষমতাবলে কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে বসতে পারবেন না। স্মর্তব্য, সংসদ সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে জেঁকে বসার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়। কোনো কোনো সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষককে নিজের হুকুম বরদার হিসেবে ব্যবহার করতে না পেরে তার ওপর জঙ্গি কায়দায় হামলা এবং কান ধরে ওঠবোস করার অভিযোগও রয়েছে কোনো কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। হাইকোর্টের বিজ্ঞোচিত আদেশের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক গডফাদারের প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হবে। শিক্ষকদের সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ কথা ঠিক সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই শিক্ষানুরাগী। স্কুল-কলেজের জন্য তাদের ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতাও প্রশংসাযোগ্য। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে যা ইচ্ছা তাই করার মতো প্রবণতা যাতে কারোর মধ্যে জেগে না বসে হাইকোর্টের আদেশটি তা নিশ্চিত করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংসদ সদস্যদের অনেকেই যেভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠছিলেন তা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। হাইকোর্টের আদেশ তাতে বাদ সাধবে বলে আশা করা যায়।

সর্বশেষ খবর