সোমবার, ৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

টার্গেট জয়?

সৈয়দ বোরহান কবীর

টার্গেট জয়?

সজীব ওয়াজেদ জয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী। বাংলাদেশের অভ্যুদয় আর জয়ের জন্ম সমান্তরাল। জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মাঝে মধ্যে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেশে আসেন। বাংলাদেশে আজ তথ্য প্রযুক্তিতে যে বিপ্লব ঘটেছে তার মুখ্য কারিগর হলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তার চরম সমালোচকও স্বীকার করবেন, তার হাত ধরেই বাংলাদেশ কম্পিউটার প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বুনেছেন জয়, এই স্বপ্ন তিনি পল্লবিত করেছেন।

সম্প্রতি জয়কে নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। নানারকম কথাবার্তা বলা হচ্ছে তাকে নিয়ে। প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেইনি। এটা গতানুগতিক রাজনৈতিক সমালোচনা হিসেবেই আমার মতো অনেকেই বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছেন। কিন্তু ক্রমাগত নানামুখী আক্রমণের তীর যখন জয়কে ছোড়া হচ্ছে তখন আর বিষয়টিকে বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই সমালোচনা কেবল মেঠো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। এই প্রচারণা পরিকল্পিত এবং একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। লক্ষ্য হলো জয়কে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এটা গোয়েবলসীয় তত্ত্বের এক অনুপম বাস্তবায়ন। একটি মিথ্যা বারবার বললে তা সত্যের মতো দেখায়। জয়কে নিয়ে এখন যা হচ্ছে তা দেখেশুনে আমি ১৯৯২ সালে ফিরে গেলাম। তখন আমরা ভোরের কাগজে কাজ করি। আজকের কাগজ থেকে বেরিয়ে আমরা ‘ভোরের কাগজ’ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম তারও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। নাঈমুল ইসলাম খান ভোরের কাগজ থেকে বিদায় নিয়েছেন। নতুন মালিক, নতুন সম্পাদক। এক দুপুরে মৃণালদা এলেন, তখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী। বন্ধু নঈম নিজাম মৃণালদাকে আমার সঙ্গে বসিয়ে দিয়ে এসাইনমেন্টে চলে গেল। মৃণালদা একটি সাম্প্রদায়িক পত্রিকার কপি বের করে আমার টেবিলে ধরলেন। জয়কে নিয়ে একটি লেখা। জয় নাকি মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে এক্সিডেন্ট করেছেন। মৃণালদা আমাকে বললেন, ঘটনা একবিন্দুও সত্য নয়, আপনি নিজে যাচাই করে যেটা সত্য সেটিই লিখুন। আমি রাজি হলাম। সরেজমিন অনুসন্ধান করলাম। কথিত এলাকার থানায় গেলাম, পুলিশের সঙ্গে কথা বললাম। দেখলাম ঘটনাটা শুধু মিথ্যাই নয়, একদম বানোয়াট, কল্পনাকেও হার মানানো। আমি দুই দিন পর একটা রিপোর্ট করলাম। রিপোর্টটি পরদিন পত্রিকায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপাও হলো। এরপর শুরু হলো বিপত্তি। নব্য গদিনসীন সম্পাদক দুপুরে গোমরা মুখ করে নিউজ রুমে প্রবেশ করলেন। আমাকে বললেন এসব রিপোর্ট কেন ছাপা হলো, এসব ফালতু রিপোর্টের অর্থ কী? ইত্যাদি। আমি তখন টগবগে তরুণ। আমিও উত্তেজিত হলাম। কিছুক্ষণ বাহাস চলল। নিউজ রুম স্তব্ধ। আমি গুম হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। সন্ধ্যায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে নয়া পল্টনের ভোরের কাগজ অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে নামতেই দেখি মৃণালদা। দুজনে রিকশায় উঠে এলোমেলো ঘুরলাম। স্বাধীনতার স্বাদ, আনন্দ সেদিন হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম। আজ যখন আমি স্বাধীন জীবনযাপন করি, তখন হঠাৎ করেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের চেহারাটা ভেসে ওঠে। যাক সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু আজকের জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রচনাকারীদের আসল উদ্দেশ্য উন্মোচনের জন্য ৯২-এর ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। যারা ৯২-এ জয়কে উচ্ছৃঙ্খল এক তরুণ হিসেবে চিত্রিত করতে চেয়েছে তারাই এখন জয়কে ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবে উপস্থাপনের নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। দুটো ঘটনা দুই যুগের ব্যবধানে হলেও একই সূত্রে গাঁথা। তখন যারা সত্য প্রকাশে উষ্মা দেখিয়েছিল এখনো তারা সুশীলের নিক্তি নিয়ে বসে আছেন।

এখন জয়কে নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে এর উৎস হলো ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের একটি সাক্ষাৎকার থেকে। এটিএন নিউজে ‘নিউজ আওয়ার এক্সট্রা’ অনুষ্ঠানে মাহফুজ আনাম স্বীকার করেন যে, ওয়ান-ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ যে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিল তা সঠিক ছিল না। যাচাই-বাছাই না করে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার দায়ে মাহফুজ আনামের শাস্তি দাবি করেন। একজন সন্তান যখন দেখেন তার মাকে কারাগারে অন্তরীণ করা হয়েছে, তখন তার কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই কষ্ট ক্ষুব্ধতায় রূপ নেয় যখন তিনি জানেন যে, তার মা বিনা অপরাধে কারানির্যাতন ভোগ করেছেন। তখন ক্ষুব্ধ সন্তান যদি যাদের কারণে তার মাকে অনাকাঙ্ক্ষিত শাস্তি ভোগ করতে হলো তাদের শাস্তি দাবি করেন সেটি কি অন্যায়? আমরা কী করতাম? অবশ্য, জয়ের ওই স্ট্যাটাসের পর আওয়ামী লীগের কর্মীরা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা শিশুসুলভ বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সন্তান হিসেবে জয় বিচারের দাবি করবে—এটাই স্বাভাবিক। এরপর নানাভাবে নানা জায়গায় জয়কে নিয়ে নানা কুৎসা ছড়ানো শুরু হয়। এটা আরও গভীর রূপ নেয় যখন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ড থেকে রূপান্তরিত সাংবাদিক শফিক রেহমান গ্রেফতার হন। শফিক রেহমানের গ্রেফতারের ঘটনাটা চমকপ্রদ। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির এক নেতা গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন। তিনি সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওই বিএনপি নেতা আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করেন। জয় সম্পর্কে তথ্য নিয়ে এবং তাকে অপহরণ করতে কারা তাকে প্ররোচিত করেছিল তাদের নামও তিনি আদালতে বলেন। আদালতে তিনি শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানের নাম বলেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়। শফিক রেহমানের বাসা থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গাড়ির নম্বর, তার বাসার রুট ম্যাপ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। এ সময় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিএনপি জয়ের ব্যাপারে অনৈতিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। শফিক রেহমানের মতো ব্যক্তি কেন জয়ের গাড়ির নম্বর সংগ্রহ করবেন? তাকে হত্যার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে?

বিএনপির অদ্ভুত একটা গুণ হলো, যখনই দলটি কোনো অপকর্ম করতে গিয়ে ধরা পড়ে তখনই তারা আরেকজনের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকারে একই রকম অভিযোগ এনে ঘটনাটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এবারও বিএনপি তাই করল। বিএনপির মহাসচিব বললেন, জয়ের অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক ৩০০ মিলিয়ন ডলার নাকি পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে তাল মেলালেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। কিন্তু মার্কিন ব্যাংকিং সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান যাদের আছে তারা জানেন, জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত একটি ডলারও কোনো মার্কিন ব্যাংকে রাখার সুযোগ নেই। আর জয়ের মতো হাই প্রোফাইল ব্যক্তির জন্য তো সেটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বিএনপি এই ডুগডুগি বাজিয়ে চলেছে। বিএনপি নেতাদের কেউ প্রশ্ন করছে না, কোন ব্যাংকে জয়ের টাকা আছে? এফবিআই তাহলে জয়কে কিছু বলছে না কেন? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, মার্কিন আদালতে নাকি বলা হয়েছে জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার সম্পর্কে এফবিআই যে তদন্ত করছে সে সম্পর্কে খোঁজ নিতেই নাকি ওই বিএনপি নেতা এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু আদালতের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিএনপির ওই দণ্ডিত নেতা আদালতে বলেছেন, ‘আমি এফবিআইয়ের ওই কর্মকর্তাকে অনুরোধ করি যে, তিনি যেন সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পর্কে কিছু তথ্য দেন।’ দণ্ডিত আদালতে আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমাকে বলা হয় যে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের টাকা পয়সা ও সম্পদ সম্পর্কে তথ্য নিতে।’ দেখুন কাণ্ড। মানে বিএনপি জয়ের তথ্য নেওয়ার জন্য টাকা ঢেলেছে। আর জয়ের অ্যাকাউন্টে টাকার পুরো ঘটনাটি তাহলে বানোয়াট? বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আট বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার কোনো কাজকর্মও নেই। একবার শুনলাম তিনি নাকি ব্যারিস্টারি পড়ছেন। পরে তারও আর কোনো হদিস নেই। তিনি লন্ডনে দামি বাড়িতে থাকেন, দামি গাড়িতে চড়েন। তার আয়ের উৎস কী? ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর শেখ রেহানা লন্ডনে বসবাস শুরু করেন। এখনো তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকরি করেন, পাবলিক বাসে চলাচল করেন। সজীব ওয়াজেদ জয় একজন স্বনামধন্য আইটি বিশেষজ্ঞ। তার আয়ের উৎস সবাই জানে। কিন্তু তারেক রহমানের আয়ের উৎস নিয়ে কেউ কোনো দিন প্রশ্ন করেছেন?

জয়কে নিয়ে তৃতীয় বিতর্ক শুরু হলো ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে। বিএনপির একজন জামাতপন্থি নেতা ভারতে মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। সরকারকে কীভাবে সরিয়ে দেওয়া যায় তার নীলনকশা করলেন। বীর বিক্রমে ফটোসেশন করলেন। তারপর পরই ওই নেতার পদোন্নতি হলো। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বনে গেলেন। যখন এ খবর ফাঁস হলো তখন তিনি নিজেও স্বীকার করলেন ‘হ্যাঁ বৈঠক করেছি’। এরপর হঠাৎ করে আনা হলো জয় প্রসঙ্গ। বলা হলো মেন্দি সাফাদির সঙ্গে তো জয়ও বৈঠক করেছে। সাক্ষী কে? সাক্ষী হলো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যিনি জড়িত সেই মেন্দি সাফাদিই। কী অদ্ভুত, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই সাক্ষী। তাহলে তিনি এতদিন বললেন না কেন?

অবশ্য স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর এ চেষ্টা অনেক পুরনো। মুক্তিযুদ্ধের পর তাদের প্রথম টার্গেট ছিলেন শেখ কামাল। সংস্কৃতিমনা মানুষটিকে, একরকম তো ‘ডাকাত’ বানিয়ে ছাড়া হয়েছিল। অনেক পরে আস্তে আস্তে সত্যের সূর্যোদয়ের পর দেখা গেল শেখ কামাল ছিলেন সংস্কৃতমনা, সেতার বাজাতেন। তার হাতে বাংলাদেশে আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর প্রচার করা হলো, বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে নাকি প্রচুর হিরা জহরত, সোনাদানায় ঠাসা। সব প্রতিকূলতাকে মাড়িয়ে শেখ হাসিনা ৮১-তে দেশে ফিরলেন। তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান তাকে ৩২ নম্বর বাড়িটি বুঝিয়ে পর্যন্ত দিলেন না। জিয়ার অপঘাতে মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর শেখ হাসিনাকে ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি হস্তান্তর করেন। শেখ হাসিনা বাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে এটিকে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু ভবন খুলে দেওয়ার পর সাধারণ মানুষ কোনো হীরা জহরত, সোনাদানা খুঁজে পেল না। বরং একজন রাষ্ট্রপতির এমন সাদামাঠা জীবনযাপনের ছবি দেখে বিস্মিত হলো, শ্রদ্ধায় ন্যুয়ে পড়ল। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন তখন তাকে নিয়েও অপপ্রচার, কুৎসা ছড়ানো কম হয়নি। শেখ হাসিনা এসব অপপ্রচার পায়ে মাড়িয়েই ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এখন শুরু হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে।

উদ্দেশ্যটা খুবই পরিষ্কার। বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে তা প্রতিষ্ঠা করলে তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশকেই বিতর্কিত করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তির নানামুখী অপতত্পরতার একটি বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ঘিরেই। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সেজন্যই তারা শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেনি, শিশু রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। হত্যা করতে না পারলেও তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে জাতির সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা আজও অব্যাহত।

আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়, শেখ হাসিনাকে তার রাজনৈতিক জীবনে বারবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়াকে ইকুয়্যাল স্পেস দেওয়ার নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের সাংবাদিকতা জীবনে আমরা দেখেছি শেখ হাসিনা কোথাও বক্তৃতা দিলেন এর কিছুক্ষণের মধ্যে কিছু সাংবাদিক খালেদা জিয়ার নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করলেন। পরদিন দুটো পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হলো। খালেদা জিয়া কোন ভুল করলেন পরদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও একটি রিপোর্ট ছাপা হলো। এ ভারসাম্যের রাজনীতির আবিষ্কারক বাংলাদেশের এক সুশীল গোষ্ঠী, যারা বিরাজনীতিকরণ তত্ত্বের প্রবক্তক। শেখ হাসিনা তার মেধায় যোগ্যতায় এসব অতিক্রম করেছেন। এখন বেগম জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যবধান এত যোজন যোজন দূরে যে, দুষ্ট সুশীলরা তুলনা করতে ভয় পান। তেমনি, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তারেক রহমানকে এক পাল্লায় মাপার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এসব কুৎসা অপপ্রচার। তারেক রহমানকে এদেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে। বাংলাদেশে দুর্নীতি, অপনীতির আইডল মনে করা হয় তাকে। আর জয়কে মনে করা হয় তরুণদের আইকন। মেধাবীদের অনুকরণীয়। যার হার্ভার্ডে পড়ার বিরল অভিজ্ঞতা আছে। আকাশ আর পাতালকে এক করার একটিই পথ- আষাঢ়ে গল্প ফাঁদা। সেটিই এখন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কিছু অদ্ভুত মিল আছে। তার মধ্যে একটি হলো তারা দুজনই খুব স্পষ্ট করে কথা বলেন। সত্য যত কঠিন হোক, যত তিক্ত হোক শেখ হাসিনা তা বলতে এতটুকু কার্পণ্য করেন না। এ জন্য ১৯৮১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তাকে কম সমালোচিত হতে হয়নি। এমনকি তার দলের অনেক নেতা পর্যন্ত আড়ালে আবডালে বলেছেন, ‘এত বেশি কথা বলেই দলটা শেষ করল’। শেখ হাসিনার সোজা সাপটা কথা নিয়ে বিভিন্ন সময়েই ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এসবকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন। জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস বা তার বক্তব্যগুলো যদি কেউ পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখবেন সোজা সাপটা, ভনিতাহীন। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সৎ সাহস এখনকার সমাজে ক’জনের আছে? সজীব ওয়াজেদ জয়ের আছে। এ জন্য আড়ালে হয়তো আওয়ামী লীগের নেতারাও জয়ের সমালোচনা করেন। কিন্তু জয়কে এভাবেই জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে হবে। তাই সজীব ওয়াজেদ জয় আসলে টার্গেট নয়, টার্গেট হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, লক্ষ্যবস্তু হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে চায়, যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানিয়ে উন্নয়নের চাকা থামিয়ে দিতে চায় তারাই জয়কে আক্রমণ করছে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস অতীতের মতো তাদের এ দুরভিসন্ধিও ব্যর্থ হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ই-মেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর