শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফজিলতপূর্ণ লাইলাতুল কদর

মুফতি আমজাদ হোসাইন

ফজিলতপূর্ণ লাইলাতুল কদর

আল্লাহতায়ালার দেওয়া প্রতিটি রাত ও দিন মানব জাতির জন্য অগণিত কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, রাতকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা উপার্জনের সময়। (সূরা নাবা : ১০-১১) কিন্তু হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ এমন একটি রজনী আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীকে দান করেছেন যে রাতটি সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময়।  ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘কদর’ অর্থ মহিমান্বিত। এক কথায় মহিমান্বিত রজনী বা মর্যাদাপূর্ণ রজনী। আমাদের ভারত উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে এ রাতটি শবেকদর নামে পরিচিত। শবেকদরে মহান রাব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। এ রাতটি মহিমান্বিত, তাত্পর্যপূর্ণ ও বরকতময়। এ বিষয়টি স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের ৯৭নং সূরা, সূরাতুল কদরে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি একে (আল কোরআন) নাজিল করেছি শবেকদরে। শবে কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? শবেকদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আমি এই রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছি। এর ব্যাখ্যা হলো, প্রথমে কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আকাশে নাজিল হয়। লওহে মাহফুজের পরিচয় কি? লওহে মাহফুজের অর্থ সংরক্ষিত ফলক। যার অবস্থান সপ্তম আকাশের উপর। এই লওহে মাহফুজে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে বা যা কিছু ঘটবে, সব কিছু আল্লাহতায়ালা এখানে লিখে রেখেছেন। তার মধ্যে পবিত্র কোরআনও লিখে রেখেছেন। তিনি লওহে মাহফুজ থেকে আল কোরআন লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করেছেন। সেখান থেকে রসুল (সা.)-এর নবুয়তি ২৩ বছরের জিন্দেগিতে সময়ে সময়ে প্রয়োজন মোতাবেক ধীরে ধীরে নাজিল করেছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করে এই রাতের মর্যাদা প্রকাশ করেছেন। যাতে উম্মতে মুহাম্মদী এ রাতের মর্যাদা বুঝে তার মূল্যায়ন করতে পারে। উম্মতে মুহাম্মদী এই রাতকে কেনই বা মর্যাদা দেবে না? এক রাতে ইবাদত করলে যদি হাজার মাসের থেকে বেশি ফজিলত পাওয়া যায়। তাহলে এই সুযোগ ছাড়াটা বোকামি ব্যতীত আর কিছুই নয়। আমরা রসুল (সা.)-এর উম্মত, আমাদের হায়াত আগের যুগের উম্মতের মতো দীর্ঘ নয়। তারা শত শত বছর হায়াত পেয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন ছিলেন। যেমন : বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য এক হাজার বছর শুধু জিহাদে কাটিয়েছেন। হজরত জাকারিয়া (আ.) হজরত আইয়ুব (আ.), হজরত হিজকীল (আ.) ও হজরত ইউশা ইবনে নূন (আ.)— এই চার নবী শুধু আশি বছর আল্লাহর ইবাদতে নির্জনে নিমগ্ন ছিলেন আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। উম্মতে মুহাম্মদীর দীর্ঘ হায়াত না থাকলে কি হবে! আল্লাহপাক তাদের লাইলাতুল কদর হাদিয়া স্বরূপ দান করেছেন। যাতে তাদের ইবাদত কোনো অংশেই আগের যুগের উম্মত থেকে কম না হয়।

যেমন : আয়াতে বলা হয়েছে, এই রাত হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। হাজার মাসে প্রায় ৮৩ বছর চার মাস হয়। এ হিসাবে কেউ যদি জীবনে ১২ রমজানে লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জন করতে পারে, তখন সে এক হাজার বছর ইবাদত করার ফজিলত পেয়ে যাবে। আয়াতের ভাষ্য মতে, তার থেকেও বেশি ফজিলত পাবে। শর্ত হলো শবেকদরের বরকত বুঝতে হবে। বুঝে আমলে রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলেই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি বা রেজা পাওয়া যাবে। অপরদিকে এই রাতকে আল্লাহপাক উম্মতে মুহাম্মদীর কাছে গোপন রেখেছেন। যাতে মানুষ রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে তাকে তালাশ করে। আর এই রাতের তালাশ করতে হবে নামাজ, তেলাওয়াত ও জিকির আজকারের মাধ্যমে। আমরা যদি রমজানের শেষ দশ দিনে প্রতি বেজোড় রাতে তারাবির নামাজের পর, কিংবা ঘুমানোর আগে শবেকদরের বরকত পাওয়ার জন্য দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করে নিই। অথবা সেহেরির সময় একটু আগে উঠে কয়েক রাকাত নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ কালামে পাকের তেলাওয়াত করে আল্লাহপাকের দরবারে সর্বপ্রকার পাপকর্ম এবং পাপকর্মের প্রেরণা বিসর্জন দিয়ে, একনিষ্ঠভাবে পাপ মার্জনার ভিক্ষা চেয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শবেকদরের বরকত পাওয়ার জন্য দোয়া করি। তাহলে তিনি আমাদের লাইলাতুল কদরের তামাম ফজিলত দিলেও দিতে পারেন।

এখন তো বেজোড় রাত অর্থাৎ ২১-২৩-২৫তম রাত চলে গেছে বাকি আছে ২৭তম ও ২৯তম রাত। এই দুই রাতের ইবাদত যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সে দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে ২৭তম রাতটি অধিকাংশ বর্ণনা মতে লাইলাতুল কদরের রাত। তাই এই রাতে সারা রাত ইবাদত করে মাওলাপাক থেকে নিজের যাবতীয় প্রয়োজনাদি পূরণ করে নিতে হবে। আল্লাহপাক সব মুমিন-মুসলমান ভাইদের পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফজিলত বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।  আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর