শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এতেকাফ

মুফতি মো. ওলিউল্লাহ পাটওয়ারী

এতেকাফ

এতেকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান  করা। শরিয়তের পরিভাষায় ‘এতেকাফ’ বলা হয়, পুরুষের জন্য নিয়তসহ এমন মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর মহিলাদের জন্য এতেকাফ হলো, নিয়তসহ ঘরের ভিতর নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থানে অবস্থান করা।

এতেকাফ তিন প্রকার। যথা : ১. ওয়াজিব, ২. সুন্নাতে মু’আক্কাদাহ্, ৩. মুস্তাহাব। এতেকাফে অনেক ফজিলত আছে। হাদিসে এসেছে : যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি দিলে একদিন এতেকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা জাহান্নামকে তার থেকে তিন খন্দক দূরে সরিয়ে দেবেন। এক খন্দক বলে বোঝানো হয় আসমান জমিনের যে দূরত্ব তার চেয়েও বেশি দূরত্বকে। এক দিনের এতেকাফ দ্বারা জাহান্নাম এরকম অনেক দূরে সরে যায়। আর জাহান্নাম তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার অর্থ সে জান্নাতের কাছে চলে আসে। হাদিসে আরও আছে এতেকাফকারী ব্যক্তি সব রকম গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এত বেশি নেকি লেখা হয় যেন সব ধরনের নেক কাজ করেছে। এতেকাফের শর্ত হচ্ছে— নিয়ত করা : বিনা নিয়তে এতেকাফ করলে সহিহ হবে না। এমন মসজিদে এতেকাফ করা যেখানে নামাজের জামাত হয়। এতেকাফের জন্য সর্বোচ্চ স্থান হলো মসজিদুল হারাম অতঃপর মসজিদে নববী (সা.)। এরপর রায়তুল মুকাদ্দাসে, তারপর জামে মসজিদ এবং এরপর যে মসজিদের মুসল্লি সংখ্যা বেশি। মহিলা তার গৃহে নামাজের স্থানে এতেকাফ করবে। মানতের এতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। নফল এতেকাফের জন্য রোজা শর্ত নয়। নফল এতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই। অল্প সময়ের জন্যও নফল এতেকাফ করা যায়। মসজিদে এতেকাফের নিয়তের সঙ্গে অবস্থান করাই উত্তম। কেউ যদি রমজানের এতেকাফের মানত করে তাহলে তার এ মানত সহিহ হবে। মানত করার পর যদি সে শুধু রমজানের রোজা রাখে, এতেকাফ না করে, তবে তার ওপর অন্য এক মাসে রোজাসহ লাগাতার এতেকাফের কাজা করা ওয়াজিব। পরবর্তী রমজানে ওই এতেকাফের কাজা করলে তা আদায় হবে না। এতেকাফ সহিহ হওয়ার শর্ত হলো, মুসলমান হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, জানাবাত এবং হায়িয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া। বালিগ হওয়া এতেকাফ সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়। তাই জ্ঞানবান নাবালিগের জন্যও এতেকাফ সহিহ হবে। মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি নিয়ে এতেকাফ করা জায়েজ। অনুমতি দেওয়ার পর স্বামী তাকে এতেকাফ থেকে বারণ করতে পারবে না। মহিলাদের জন্য মসজিদে এতেকাফ করা নাজায়েজ। এতেকাফের আদব : এতেকাফের অবস্থায় নেকের কথা ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা। শ্রেষ্ঠ মসজিদকে এতেকাফের জন্য নির্বাচন করা। যেমন : মসজিদুল হারাম, জামে মসজিদ ইত্যাদি। এতেকাফের অবস্থায় কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করা, হাদিস পাঠ করা, ইল্ম শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া, রসুলুল্লাহ (সা.) ও অন্যান্য নবীর সিরাত পাঠ করা ও ধর্মীয় গ্রন্থাদি লেখা। এতেকাফকারী ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিমিত্ত নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তাঁর ইবাদতে নিয়োজিত রাখবে এবং দুনিয়াদারি কাজকর্ম থেকে দূরে থাকবে। এতেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ : বিনা ওজরে মসজিদ থেকে বের হওয়া। বিনা ওজরে দিনে বা রাতে সামান্য সময়ের জন্য মসজিদ হতে বের  হলেও এতেকাফ ফাসিদ হয়ে যায়, ইচ্ছা করে বের হোক কিংবা ভুলক্রমে। অনুরূপভাবে মহিলা তার ঘরের নির্ধারিত স্থান থেকে বের হবে না। প্রস্রাব-পায়খানা ও জুমার নামাজ আদায় ইত্যাদি ওজরের কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। এতেকাফের স্থানেই ঘুমাবে ও পানাহার করবে। এর জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। মসজিদ ভেঙে যাওয়ার কারণে অথবা জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার কারণে এতেকাফকারী ব্যক্তি যদি মসজিদ হতে বের হয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য মসজিদে চলে যায়, তবে এতে এতেকাফ ফাসিদ হবে না। জান বা মালের আশঙ্কা হলেও উক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার জন্য মসজিদ হতে বের হবে না। কোনো মৃত ব্যক্তিকে দেখার উদ্দেশ্যে বা তার জানাজা আদায়ের উদ্দেশ্যে এতেকাফ হতে বের হলে এতেকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। পানিতে ডুবন্ত বা আগুনে পড়া কোনো মানুষকে রক্ষা করার জন্য মসজিদ থেকে বের হলেও এতেকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে অসুস্থতার কারণে সামান্য সময়ের জন্য মসজিদ হতে বের হলেও এতেকাফ ফাসিদ হবে। অবশ্য এতেকাফের মানতের সময় যদি রোগীর সেবা, জানাজার নামাজ ও ইলমের মজলিসে যাওয়ার শর্ত করে, তা হলে এসব তার জন্য জায়েজ।  এতেকাফকারী ব্যক্তি মুয়াজ্জিন হোক বা অন্য কেউ হোক, মিনারে আরোহণ করলে এতেকাফ ফাসিদ হবে না।

খতিব : বাইতুন নুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর