বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক মুসলমানের জন্য অন্যের ভালোবাসা থাকতে হবে

মাওলানা আব্দুর রশীদ

রোগ শয্যায় শায়িত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.)। কয়েক দিন যাবৎ খাওয়া নেই, দাওয়া নেই সব কিছুই বিস্বাদ লাগে। এরই মাঝে এক দিন আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) মাছ খেতে ইচ্ছে করেন। স্বামীর খাবার বাসনা স্ত্রীর মনে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু মরু দেশে মাছ পাওয়া যে এক দুষ্কর ব্যাপার।

আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.)-এর বন্ধু মহল ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও এই সাহাবির অসুস্থতায় কম চিন্তিত নন। তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে লাগলেন। অবশেষে বহু চেষ্টা তদবিরের পর একটি মাছ পাওয়া গেল। আবদুল্লাহ বিন ওমরের স্ত্রী মাছটি আনন্দের সঙ্গে রান্না করেন। খুশবুতে সারা বাড়ি মৌ মৌ করতে করতে ঘর সুবাসিত হয়ে ওঠে। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.)-কে আজ বেশ হাসিখুশি মনে হচ্ছে। তিনি সবিনয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাছটি মুখে নিচ্ছিলেন। অমনি তার কানে ভেসে এলো এক আর্তধ্বনি।

মা! খুবই ক্ষিধে পেয়েছে। কিছু খাবার আছে কি? ভিক্ষুকের করুণ কণ্ঠস্বর তার মনে এক ভাবান্তরের ঝড় বইয়ে দেয়। অশ্রু ছলছল নয়নে আস্ত মাছটি তিনি ভিখারির হাতে তুলে দেন। স্বামীর এ কাণ্ড দেখে আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.)-এর স্ত্রী অবাক বিস্ময়ে ক্ষণকাল থ মেরে থাকেন। রাগে ক্রোধে আর ক্ষোভের প্রচণ্ডতায় অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু স্বামীকে কি আর কটু কথা বলা যায়? তাই নিজেই নিজেকে সামলে নিয়ে কোমলভাবে স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন, একি করেছেন আপনি? মিসকিনকে দান করার মতো ঘরে আরও অনেক কিছুই ছিল। এত কষ্ট, এত তালাশের পর অর্জিত মাছটি দিয়ে দিলেন? তা থেকে একটু খেলেও তো মনকে প্রবোধ দেওয়া যেত। কত দিন হলো কিছুই মুখে দিচ্ছেন না। ভেবেছিলাম, আজ একটু খাবেন। কিন্তু হায়...। এতক্ষণে  আবদুল্লাহ বিন ওমর মুখ খুললেন। তিনি বললেন, প্রিয় হাবীব রসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী কি তুমি শোননি? তিনি বলেছেন, ‘এমন ব্যক্তি কখনো মুমিন হতে পারে না, যে পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা ভালোবাসে ঠিক তাই অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য ভালো না বাসে।’ এখন তুমি বল নিজের জন্য যা কামনা করি ঠিক তাই আপন মুসলিম ভাইয়ের জন্য যদি কামনা না করি, তাহলে কি মুসলমান হতে পারব? সুতরাং এতে আশ্চর্যের কী আছে?  আমি তো প্রিয় হাবীব রসুল (সা.)-এর হাজার বাণীর মধ্য থেকে মাত্র একটিই অনুসরণের চেষ্টা করেছি।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর