মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মৃত্যু উপত্যকা মহাসড়ক

যানবাহন চালকদের সুমতি কাম্য

দেশের মহাসড়কগুলো যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়কগুলো যখন অনেকটাই ফাঁকা তখন চালকদের একাংশ বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনার অবতারণা ঘটাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ১৮ জন। আহতের সংখ্যা যে কয়েক গুণ তা সহজে অনুমেয়। প্রতিটি ঈদে ঈদের আনন্দ বিষাদে ঢেকে দেওয়ার যে অকাম্য খেলায় মেতে উঠছে একশ্রেণির যানবাহন চালক তা দুর্ভাগ্যজনক। গত ঈদুল ফিতরেও দেশের মহাসড়কগুলোকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল তারা। তাদের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে নিহত হয়েছিলেন ১৮৬ জন। আহতের সংখ্যা ছিল ২ হাজারেরও বেশি। এ বছর সে রেকর্ড ভাঙার জন্য যানবাহন চালকদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা থামানোর যেন কেউ নেই। দুনিয়ার যেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে এগিয়ে। ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোর চেয়ে এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা গড়ে ২৮ গুণ। প্রতি বছর ২০ থেকে ২১ হাজার মানুষ এ দেশে প্রাণ হারান সড়ক দুর্ঘটনায়। আহত হন অন্তত ১ লাখ; যার একাংশকে সারাজীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ এ দেশে যান্ত্রিক যানবাহন চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ নয়, উেকাচই নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। যেনতেন প্রকারে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেলে সাত খুনও মাফ হয়ে যায়। যানবাহন চালকদের শক্তিশালী ইউনিয়নের কাছে দেশের সরকার, আইন-আদালত সবকিছু জিম্মি বললেও অত্যুক্তি হবে না। কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের অবস্থা অকল্পনীয় হলেও আমাদের দেশে তা ঘটছে। যানবাহন চালকদের ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে রাজনীতিকদের গাঁটছড়া এমনকি তাদের গডফাদার হিসেবে কোনো কোনো মন্ত্রীর ভূমিকা পালন এ অবস্থার সৃষ্টি করছে। সভ্য দেশ হিসেবে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলার স্বার্থে সড়ক দুর্ঘটনার মচ্ছব থামাতে সরকারকে সংকল্পবদ্ধ মনোভাব দেখাতে হবে। দেশের মানুষ না যানবাহন চালকদের ইউনিয়ন— কার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে এ বিষয়ে সরকারসংশ্লিষ্টরা দায়বদ্ধ ভূমিকা পালন করবেন আমরা এমনটিই দেখতে চাই। যানবাহন চালকদের সুমতিও কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর