বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এ সাফল্য জনগণের

মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি

এ সাফল্য জনগণের

অর্থনীতির নানা সূচকে বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে চলছে। নানা সমস্যার মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে, যা বর্তমানে সিঙ্গেল ডিজিটে অবস্থান করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। নারী উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর লিঙ্গ বৈষম্যে অনেকটাই সমতা এসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে জেন্ডার সমতা এমনভাবে বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখন সমান গুরুত্বপূর্ণ। ’৯৬-এর পর কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদানের প্রতিফলন সমাজে পড়তে শুরু করে। ২০০৫-০৬ শ্রম জরিপ অনুসারে মোট শ্রমশক্তির ৪১.৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৮.১ শতাংশ নারী সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত। গত এক দশকে কৃষি খাতে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ১০.৪ শতাংশ, যা নারীদের দ্বারা বর্তমানে সম্পাদিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় হচ্ছে: উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। ব্যক্তি, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য সবাইকে আত্মনিয়োগ করা। সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়া। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা। হিংসা-বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে থেকে উন্নয়ন নীতি-কৌশল সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সম্ভাবনাময় শিল্প খাত উন্নয়নে সঠিক নীতি-কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা। সম্পদের সুষম বণ্টন করা। বিদেশিরা যাতে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে সে জন্য বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। বিশ্ব দরবারে দেশকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। পুঁজিবাজারের সমস্যা দূর করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষের আস্থা  তৈরি করা। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে অধিক চাঙ্গা রাখা।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানো অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। এর ফলে বিশ্বের ৫১টি অভিজাত দেশের তালিকায় ঢুকল বাংলাদেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় এখন ১৩১৪ ডলার। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৫৮তম বৃহৎ অর্থনীতির  দেশ। দেশের মাথাপিছু ক্রয়ক্ষমতা এখন ৩০১৯ ডলার। ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর মতে মোট দেশজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ, ২০১৪ সাল থেকে ১১ ধাপ ওপরে। বর্তমানে দেশের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন ১২৩৫ ডলার, ২০০৬ সালে যা ছিল ৫১৪ ডলার। জাতীয় উৎপাদনের হার ২০১৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৬.৫১ শতাংশ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশ টানা ছয় বছর ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারত ব্যতীত দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাপিয়ে ক্যাটাগরি ৬ থেকে ৫-এ উঠে এসেছে।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ গুণ বেড়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের জন্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ) সাহায্য নিত যাতে এক বিলিয়ন ডলার অপচয় না হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৭.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

২০০৫ সালে দেশের রেমিট্যান্স আয় ছিল ৪.৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের গত ছয় মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭.৪৫ বিলিয়ন ডলার। এর পেছনে মূল কারণ বৈদেশিক কর্মসংস্থানে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি। মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতে ২০১৫ সালে ৪,২০,০০০ পুরুষ ও ৭৬,০০৭ জন নারী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছেন।

আন্তর্জাতিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসের অক্টোবর ২০১৫ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তিন গুণ বেড়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে দেশের ১০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৩৭ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু সম্পদ ২,২০১ ডলার। বাংলাদেশের দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাওয়ার এ কৃতিত্ব দেশের ১৬ কোটি মানুষের। বিশেষত শ্রমজীবী মানুষের। দেশের প্রায় ১  কোটি শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে কাজ করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। পোশাকশিল্পের ৪০ লাখেরও  বেশি নারী শ্রমিকের অক্লান্ত ভূমিকা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পোশাক তৈরির দেশ হিসেবেই শুধু প্রতিষ্ঠিত করেনি,  দেশের অর্থনীতিকে স্ফীত করছে।

দেশের উন্নয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ইপিজেড সমূহের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং এসইজেড সমূহ সৃষ্টি, উন্নত কারিগরি প্রশিক্ষণ, বিদ্যুতের উন্নয়ন ইত্যাদি অন্যতম। তবে আগামীতেও আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, এসইজেড সমূহকে দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সহজে বরাদ্দ করতে হবে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির প্রাপ্যতা এবং ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে হবে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে নদীর পাড়ে শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন এবং নদী পথে যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি কারিগরি শিক্ষার মান ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটিয়ে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধারে আত্মত্যাগ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের কঠোর পরিশ্রম সার্থক হবে। বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

     লেখক : সাবেক মন্ত্রী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর