শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জীবনজুড়ে জারি থাকুক হজের আমল

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

জীবনজুড়ে জারি থাকুক হজের আমল

পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরছেন হাজীরা। সদ্য হজ ফেরত হাজীদের মর্যাদা অনেক বেশি। তাদের আত্মায় এবং গায়ে লেগে আছে মক্কা-মদিনার সুঘ্রাণ। দেশে ফেরার পরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ সৌরভ ঘ্রাণ ছড়াবে। সাধারণ মানুষ যেন হজ মৌসুমে ফোটা ‘হাজী ফুল’ থেকে খোশবু নিয়ে খোশ নসিবের অধিকারী হতে  পারে— তাই প্রিয় নবী (সা.) হাজীদের সঙ্গে সালাম ও মুসাফাহার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাবরানি শরিফে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো হাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম বলবে, তার সঙ্গে মুসাফাহা ও মুআনাকা করবে এবং দোয়ার আবেদন করবে। কারণ কবুল হজকারীর সব পাপ আল্লাহ মাপ করে দেন। যে ব্যক্তি হজ থেকে ফিরে এসেছে সে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’ হজ পালনকারী বিপুল সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। এই সম্মান ও মর্যাদার কথা স্মরণে রেখেই পরবর্তী জীবন আল্লাহর দেখানো পথে চলার দৃঢ় শপথ নিতে হবে।

প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মাঠ-ঘাটের ধুলাবালি মেখে আসতে পারা অনেক মর্যাদা ও ভাগ্যের বিষয়। জীবনের প্রতিক্ষণে এ কথা স্মরণ রেখে সাধ্যানুযায়ী কল্যাণের পথে চলতে হবে। হজ-পরবর্তী জীবনে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে সে হজ কবুল হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়। এ কথা মনে রাখতে হবে, ওয়াদা অনুযায়ী আল্লাহ আপনাকে নিষ্পাপ করে দিয়েছেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর ঘোষণা অনুযায়ীও আপনি এখন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ। আপনার কলব এখন আয়নার মতো স্বচ্ছ, শরতের মতো শুভ্র, মেঘের মতো নরম। এখন প্রতি মুহূর্তে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, কলবের আয়নায় যেন গুনাহর দাগ না পড়ে। সুফি সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস শোনাচ্ছি। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান একটি স্বচ্ছ-সুন্দর-শুভ্র-দাগহীন কলব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। যখন সে একটি গুনাহ করে, কলবের আয়নায় একটি দাগ পড়ে। গুনাহর দাগে দাগে একসময় ওই আয়না তার শুভ্রতা-স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে।’ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কোনো গুনাহ যদি হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নিবেন। বাকি জীবন আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.)-এর দেখানো পথে চলতে পারাই হজের সার্থকতা।

হজ থেকে ফিরে আসার পর একজন হাজীর অবশ্যিক কর্তব্য হচ্ছে, সে তার ধর্মের হেফাজত করবে, পূর্ণতার দিকে লক্ষ্য রাখবে, এর কোনো অংশ ছুটে যাওয়া কিংবা বাদ পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি যত্নবান হবে। তাই একজন হাজীকে যাবতীয় ফরজ এবং ওয়াজিব সঠিকভাবে আদায় করার পাশাপাশি আল্লাহ কর্তৃক নিষেধকৃত বিষয়াদি ত্যাগ করে আমৃত্যু আল্লাহর দীনের ওপর দৃঢ় ও অবিচল থাকতে হবে।

হজের পর একজন মুমিন যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দেবেন তা হলো, সে নিজের বিষয়ে বার বার ভাববে এবং আত্মসমালোচনা করবে, নিজের আমলের হিসাব নিজে নিবে। অনেককে দেখা যায়, হজের মতো তাত্পর্যপূর্ণ একটি ইবাদত সম্পন্ন করে আসার পরও নফসের প্রবঞ্চনা ও শয়তানের প্রতারণার শিকার হয়ে ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এ অবস্থায়ই মৃত্যু তার কাছে এসে উপস্থিত হয়। হে আল্লাহর ঘরের হজ সম্পাদনকারী! আপনি তার মতো হবেন না যে নিজ পরিশ্রমে অত্যধিক কষ্ট করে সুতা কাটে তারপর নিজেই তা ছিঁড়ে ফেলে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালা বান্দাকে সতর্ক করে বলেন, ‘তোমাদের অবস্থা যেন সেই মহিলার মতো না হয়, যে নিজ পরিশ্রমে সুতা কাটে এবং তারপর নিজেই তা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলে।’ (সূরা নাহল, আয়াত ৯২)।

একজন হাজীকে স্রষ্টার সৃষ্টির কল্যাণে সদা নিয়োজিত থাকতে হবে। এ দেশ ও মাটিকে ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসতে হবে দেশের মানুষকে। তাদের কল্যাণে নিজের মেধা ও শ্রম ব্যয় করতে হবে। এদেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।  খেয়ে না খেয়ে চোখের জল আর পেটের জ্বালায় দিন কাটছে। এদের চোখের জল দূর করার দায়িত্ব হাজীদের বহন করার চেষ্টা করতে হবে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।   

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর