মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ

মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি

বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ

বাংলাদেশে রয়েছে ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত। এই ১৬ কোটি মানুষ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ।

বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনার একটি দেশ। এ দেশের মানুষ কর্মঠ, পরিশ্রমী। তাদের বদৌলতে শিগগিরই এ দেশ এশিয়ার উদীয়মান টাইগারে রূপান্তর হবে। বাংলাদেশ একদিন পরিণত হবে পৃথিবীর বৃহৎ পোশাক, জুতা, ওষুধ, সিরামিক ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিকারক দেশে। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। তাই তিনি অনেক কিছুই দিয়েছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর মাটি ও দূষণমুক্ত পানি এ দেশেই আছে। দেশে যেমন প্রচুর গ্যাস ও কয়লা রয়েছে তেমন এ দেশের মাটিতে তিনবার ফসলও উৎপাদন হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন হিসাবের যোগফলে গত কয়েক বছরে এটা স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচকগুলো এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, খুব শিগগিরই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশে এখন আর কেউ না খেয়ে মরে না। বাংলাদেশ পৃথিবীর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্রমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের কৃষি খাত, প্রবাসী আয়ের খাত ও পোশাকশিল্পের আয়ের খাত দেশের পুরো চেহারাটা বদলে দিচ্ছে।

প্রতিটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশই এর ব্যতিক্রম হয়েছে। রাজনৈতিক কালচার উন্নত না হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে। উন্নয়নের সবচেয়ে প্রধান খাতটি কৃষি। কৃষিবিপ্লবে সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আর কৃষি খাত থেকে যখন ভাত-ডালের বন্দোবস্ত হয়েছে, তখন সামনে এগিয়ে এসেছে আরও একটি খাত প্রবাসী আয়। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী শ্রমিকদের অর্জিত সামান্য আয়কে পুঁজি করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি পোশাকশ্রমিকের ঘামঝরা শ্রমের ফসল আমাদের পোশাকশিল্প উন্নয়নের ধারাকে আরও বেগবান করেছে।

আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। এ দেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়ন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও দেশ আজ প্রায় মধ্য আয়ের দেশের কাতারে। সম্ভাবনার দিগন্তে পতপত করে উড়ছে পতাকা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি-সন্ত্রাস-জটিলতার মধ্যেই পাল্টে যাচ্ছে দেশের চিত্র। কোনো চক্রান্তই থামাতে পারছে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন রথ। তার একনিষ্ঠ তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ টানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি উন্নয়নের এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেওয়া আরও কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উেক্ষপণের কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী বছরে যা উেক্ষপণ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আনার পাশাপাশি দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। এমনকি স্যাটেলাইটের বর্ধিত ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।

সম্প্রতি আবারও বাংলাদেশ সম্পর্কে আশার কথা শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ। এ প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বাংলাদেশসহ ১০টি দেশ আগামী ১০ বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। গবেষণা অনুযায়ী বাকি ৯টি দেশ হচ্ছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইনস ও ভিয়েতনাম।

বিএমআই রিসার্চ মনে করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ ১০টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ৪ লাখ ৩ হাজার কোটি ডলার যোগ করবে, যা বিনিয়োগকারীদের বড় সুযোগ এনে দেবে। উল্লিখিত অর্থ জাপানের বর্তমান অর্থনীতির সমান।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা বাংলাদেশের সামনে হাতছানি দিচ্ছে তাকে কাজে লাগাতে জঙ্গিবাদের শিকড় উৎপাটন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সম্ভাবনাময় দেশের বদলে ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিশাপ যে জাতির জন্য অনিবার্য হয়ে উঠবে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ বিপদ ঠেকাতে পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়াস চালাতে হবে। বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের অন্যতম উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে হতে হবে আপসহীন।

লেখক : সাবেক মন্ত্রী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর