মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রেনে কাটা পড়ে তিন শিশুর মৃত্যু

সেলফি অপসংস্কৃতির অবসান হোক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর এলাকায় মুঠোফোনে ট্রেনের ভিডিও করতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছে তিন শিশু। তাদের সঙ্গী অন্য এক শিশু লাফ দিয়ে রেললাইন থেকে সরে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায়। সাম্প্রতিককালে রেললাইনে কাটা পড়ে মৃত্যুর একটি বড় কারণ মুঠোফোন। নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেলওয়ের একটি থানা এলাকায় এ বছরের প্রথম নয় মাসে ২৩০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬ জনই মারা গেছে মুঠোফোনে কথা বলা কিংবা গান শুনতে শুনতে রেলপথ ধরে চলা কিংবা রেললাইন পার হওয়ার সময়। এ ট্র্যাজেডির সর্বশেষ সংযোজন হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ভাদুঘরের রেলক্রসিং এলাকার দুর্ঘটনা। ট্রেন আসার সময় সেলফি তোলার জন্য বাসা থেকে একটি মুঠোফোন লুকিয়ে বের করে আনে ১২ বছরের শিশু পারভেজ। তিন বন্ধুকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের ভিডিও তুলতে তারা পাশের রেলক্রসিং এলাকায় যায়। সেখানে পাশাপাশি দুটি রেললাইন। চার বন্ধু একটি লাইনের ওপর বসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের দৃশ্য মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধারণ করছিল। তারা যে রেললাইনের ওপর বসেছিল, সেটি দিয়ে একই সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিল সুরমা মেইল। সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের শব্দের কারণে হতভাগ্য শিশুরা সম্ভবত সুরমা মেইলের শব্দ টের পায়নি। ফলে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শুভ ও পারভেজ নামের দুই শিশু। ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোনায়েম নামের এক শিশু গুরুতর আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। চার বন্ধুর মধ্যে আফ্রিদি প্রাণে বেঁচে যায় লাফ দিয়ে রেললাইন থেকে সরে যাওয়ায় । ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেলফি তুলতে গিয়ে তিন শিশুর মৃত্যু সেলফি ট্র্যাজেডির ভয়াবহতাই তুলে ধরেছে। সন্দেহ নেই শিশুরা বড়দের সেলফি তোলা দেখে উৎসাহিত হয়ে সেলফি তুলতে গিয়েছিল। আর তাতেই তারা অকালে ঝরে পড়ল জীবন থেকে। সমাজে সেলফি অপসংস্কৃতির রমরমা না থাকলে তা যে শিশুদের এমন মরণখেলায় উদ্বুদ্ধ করত না তা সহজে অনুমেয়। আমরা আশা করব তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের যথেচ্ছতায় কিছুটা হলেও বাদ সাধবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা গড়ে উঠলে এ ধরনের অপমৃত্যু ঠেকাতে তা অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।

সর্বশেষ খবর