শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানব পাচার বন্ধ হচ্ছে না

কার্যকর আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই

মানব পাচারের মামলায় সুনির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে অনীহা কাজ করছে। দুই বছর আগে ২০১৩ সালে নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত অভিবাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয় ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন’। কিন্তু এ আইনে গত দুই বছরে একটি মামলাও দায়ের হয়নি। মানব পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া মনোভাব থাকা সত্ত্বেও এ আপদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে আইন প্রয়োগকারীদের গাফিলতিতে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইনটি প্রণয়নের পর গত দুই বছরে উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে দেশের অনেক নাগরিককে অবৈধ পথে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর দিয়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। খরচ হিসেবে দালালরা প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ ডলার নিলেও তাদের মধ্যে খুব কম লোকই বিদেশে পৌঁছাতে পেরেছে। পথেই আটক হচ্ছে অনেকে। বিদেশে যারা পৌঁছাচ্ছে তারাও সেখানে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। গত কয়েক বছরে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত যেসব দালাল চিহ্নিত হয়েছে তাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা গেলেও তা না করে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। যা এ ঘটনার বিচারের জন্য সঠিক আইন নয়। মানব পাচারের শিকার হয় সাধারণত সমাজের প্রান্তিক মানুষ। পাচারকারী দলের সদস্যরা তাদের বিদেশে চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। প্রতারণার শিকার লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাঠিয়ে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। মানব পাচারকারীদের প্রতি সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রশংসাযোগ্য হলেও আইন প্রয়োগকারীদের গাফিলতিতে তা কোনো সুফল দিচ্ছে না।  মানব পাচার বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ জনসচেতনতা গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গ্রামাঞ্চলের স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার পুরোহিতদেরও জনসচেতনতা গড়ে তোলার কাজে লাগাতে হবে।  মানব পাচার বন্ধে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর