শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোচিং ও গাইড বইয়ের বৈধতা

শিক্ষাব্যবস্থা জিম্মি করার শামিল

শিক্ষা আইনের খসড়ায় ছায়া শিক্ষার নামে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনিকে বৈধতা দেওয়ার যে প্রয়াস চলছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। সহায়ক বইয়ের নামে গাইড বই বৈধতা দেওয়ার চেষ্টাও দুর্ভাগ্যজনক। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে কোচিং সেন্টার ও গাইড বই ব্যবসায়ী চক্রের কাছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আত্মসমর্পণ নিশ্চিত হলো। শিক্ষাব্যবস্থা কোচিং সেন্টার ও গাইড বই ব্যবসায়ী চক্রের হাতে জিম্মি কয়েক দশক ধরে। আইন করে অপশিক্ষার এ পদ্ধতিগুলোকে বৈধতা দেওয়া হলে তারা যে আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে, তা সহজে অনুমেয়। আশার কথা, দেশের ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক এই আত্মঘাতী প্রয়াসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, খসড়া শিক্ষা আইনে কোচিং, প্রাইভেট টিউশন ও গাইড বইকে সহায়ক পুস্তক নামে বৈধতা দেওয়ার ব্যবস্থায় তারা উদ্বিগ্ন। শিক্ষায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগের পরও যদি এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তা হবে বিপর্যয়কর এবং শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, পারিবারিক পর্যায়ে শিক্ষার সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। সরকার যেখানে বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে কোচিংকে বৈধতা দেওয়া হলে শ্রেণিকক্ষে পঠন-পাঠন সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়বে। শিক্ষকরা স্কুল-কলেজের বাইরে কোচিং করাতে ছুটবেন, অভিভাবকরা প্রাণপণ ব্যয় করে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার বাজারে ছোটাছুটি করবেন। আইনে কোচিং, প্রাইভেট টিউশন ও অনুমোদনহীনভাবে সহায়ক পুস্তক প্রকাশের ব্যবস্থা রাখার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পাশ কাটিয়ে যাওয়া এবং তাতে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ জোরদার হয়ে উঠবে। বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে খুব স্পষ্টভাবে ছায়া শিক্ষার নামে কোচিং, প্রাইভেট টিউশনি ও গাইড বইয়ের বৈধতার কুফল তুলে ধরা হয়েছে। আমরা আশা করব, বিশিষ্টজনদের সনির্বন্ধ আহ্বান সরকারকে ভুল পথ থেকে সরে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে। সরকারের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা কোচিং সেন্টার এবং গাইড বই চক্রের মাসোয়ারাভোগীদের ষড়যন্ত্র নস্যাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জেগে উঠবেন, এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর