মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আপস-মীমাংসার সওয়াব অপরিসীম

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

আপস-মীমাংসার সওয়াব অপরিসীম

জীবন চলার পথে মানুষে মানুষে ঝগড়া-বিবাদ হয়। পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ঘর-সংসারে, পরিবারে মান-অভিমান হয়। বন্ধু-বান্ধব ও আপনজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। এসব পরিস্থিতিতে ইসলাম সবাইকে আপস-মীমাংসার তাগিদ দেয়। সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে উৎসাহিত করে। পরস্পরের মাঝে ভালো সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। আপস-মীমাংসাকে ইসলাম পৃথক একটি ইবাদত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যারা আপস-মীমাংসা করে দেবে তাদের জন্য ঘোষিত হয়েছে অসংখ্য সওয়াব ও পুরস্কার। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা জানাব না, যার মর্যাদা রোজা, সদকা এবং নামাজ থেকেও বেশি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, জানিয়ে দিন। তিনি বললেন, বিবাদকারীদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেওয়া। পক্ষান্তরে দুজনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা সব নেক আমলকে ধ্বংসকারী। (আবু দাউদ, তিরমিজি)। এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, দুই মুসলমানের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেওয়া সর্বোত্তম আমল। আল্লাহ চান তাঁর বান্দারা দুনিয়ায় মিলেমিশে থাকুক। সবাই পরস্পর ভালো সম্পর্ক স্থাপন করুক। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক সপ্তাহে দুবার সোম ও বৃহস্পতিবার সব মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। তখন সব মুমিন বান্দাকে মাফ করে দেওয়া হয়; তবে সেই ব্যক্তিকে নয়, যে তার কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে শত্রুতা বজায় রাখে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়, যাতে তারা আপস-মীমাংসা করে নিতে পারে, তজ্জন্য তাদের সুযোগ দান করা হয়। (মুসলিম)। প্রিয় পাঠক! দুই মুসলমানের মধ্যে আপস-মীমাংসা করা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ আমল যে, তা করতে গিয়ে যদি কেউ মিথ্যাও বলে, আল্লাহ তা মাফ করে দেন। হজরত উম্মে কুলসুম বিনতে ওকবা ইবনে আবু মুইত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ওই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেয় এবং উভয় পক্ষকে উত্তম কথা বলে। এর একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনকে ভালো কথা শোনায় (যদিও তা মিথ্যা হয়)। বুখারি ও মুসলিমে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর কাছে দুজন মানুষের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আমলটি অনেক প্রিয়। দুই মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অত্যন্ত নিন্দনীয় আমল। হজরত আবু  হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে তিন দিনের বেশি তার কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন রাখে। অতএব, যে ব্যক্তি তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে দোজখে যাবে। (আহমদ, আবু দাউদ)। মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর