বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আল্লাহ দুনিয়ার সব ভাষার স্রষ্টা

মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন

আল্লাহ দুনিয়ার সব ভাষার স্রষ্টা

আল্লাহ সব ভাষার স্রষ্টা। সেহেতু কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ সব ভাষাই জানেন এবং যে ভাষায় তাকে ডাকা হোক না কেন তিনি বোঝেন। দুনিয়ায় যে শত শত ভাষা রয়েছে তা আল্লাহর বিশেষ কুদরত।  হজরত আদম (আ.) ছাড়া অন্য সব নবী-রসুলের প্রতি আল্লাহর প্রত্যাদেশ বা আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে তাদের মাতৃভাষায়। ভাষা বৈচিত্র্যের এ অপার মহিমার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা রুমের ২২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন— ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ বাংলা ভাষা দুুনিয়ার অন্যতম ভাষা এবং এ ভাষাও মহান আল্লাহর দান। বাংলা যেহেতু আমাদের মাতৃভাষা সেহেতু এ ভাষার প্রতি আমাদের মমত্ববোধ থাকতে হবে। মাতৃভাষাকে ভালোবাসা প্রতিটি মুসলমানের জন্য সুন্নত। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ করতেন। বিশুদ্ধভাবে তাঁর মাতৃভাষা আরবি চর্চায় তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। পবিত্র কোরআন মাতৃভাষার মর্যাদাকে স্বীকার করেছে মহিমান্বিতভাবে। সূরা ইব্রাহিমের ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সব নবীকে তাঁদের স্বজাতির ভাষায় পাঠানোর কথা বলেছেন। যাতে তাঁরা আল্লাহর কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। মেশকাত শরিফের হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবিভাষী হিসেবে যে গর্ববোধ করতেন তা স্পষ্ট করা হয়েছে। আরবি ভাষা পবিত্র কোরআনের ভাষা। এ ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহর প্রিয় হাবিব রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ছিলেন আরবি ভাষী। রসুলুল্লাহর মাতৃভাষা আরবিতে আল্লাহ তাঁর কাছে ওহি প্রেরণ করেছিলেন। আখেরি নবী রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে যেসব নবীর কাছে আল্লাহর ওহি প্রেরিত হয়েছে তাও পাঠানো হয়েছে নবীদের মাতৃভাষায়।

হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর নাজিল হয়েছিল আসমানি কিতাব তাওরাত হিব্রু ভাষায়। হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর নাজিলকৃত জবুর শরিফ ছিল ইউনানি ভাষায় লিখিত। হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর নাজিলকৃত ইঞ্জিল শরিফের ভাষা ছিল সুরিয়ানি। আমরা  আখেরি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। তাঁর ওপর নাজিলকৃত কোরআনের ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা দুনিয়ার সব মুসলমানের কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহর ইবাদতের জন্য মুসলমান হিসেবে আমরা আরবি ভাষার মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য। একইভাবে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনে মাতৃভাষা বাংলার বাইরেও যে কোনো ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। দুনিয়ার সব ভাষা যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর মহান নেয়ামত সেহেতু কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করার অবকাশ নেই।  আল্লাহ আমাদের মাতৃভাষার চর্চাসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা ও চর্চার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর