মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরিবহন ধর্মঘট

এ ধৃষ্টতা তারা কীভাবে দেখায়

নন্দিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির জন্য দায়ী ঘাতক বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রতিবাদে ধর্মঘটে নেমেছেন খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পরিবহন শ্রমিকরা। এ ধর্মঘটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট আহ্বানের ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারীরা বলছেন ঘাতক বাসচালক ন্যায়বিচার পাননি। সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটি আহূত ধর্মঘটে দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে তেমন পণ্য চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সন্দেহ নেই ধর্মঘট শ্রমিকদের সংবিধানসম্মত একটি অধিকার। দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য তারা ধর্মঘটের পথ বেছে নিতে পারেন। কিন্তু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডাকার ধৃষ্টতা সংবিধান কাউকে দেয়নি এবং কোনো সভ্য সমাজে তা কল্পনা করাও কঠিন। পাঁচজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দায় প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও আদালত মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়ে প্রকারান্তরে অভিযুক্ত বাসচালকের প্রতি নমনীয়তাই দেখিয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এ রায় মেনে নিয়েছেন। অভিযুক্ত পক্ষের কাছে রায় গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তারা উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণাও দেন। আইনের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য পথ হলেও রায়ের বিরুদ্ধে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা এবং দেশের ১০টি জেলার অধিবাসীদের কার্যত জিম্মি অবস্থায় ঠেলে দেওয়া ধৃষ্টতাই শুধু নয়, ক্ষমাহীন ঔদ্ধত্যের শামিল। আমরা আশা করব আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার মর্যাদার স্বার্থে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বানকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় অভিযুক্ত বাসচালকের শাস্তি কার্যকরের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক ধর্মঘট আহ্বানকারীরাই শুধু নয়, তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও সরকার কঠোর হবে এমনটি প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর