বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলাম নারীর মর্যাদা সমুন্নত করেছে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ইসলাম নারীর প্রাপ্য মর্যাদার প্রতি যত্নবান। দুনিয়ার যে কোনো ধর্মের চেয়ে নারীর অধিকারের প্রতি ইসলাম সহানুভূতিশীল। জননী হিসেবে, কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে ইসলামে নারীর যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে নেই। রসুল (সা.) বলেছেন, মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহশত। দাম্পত্য জীবনে স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক যথাযথভাবে আদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। রসুল (সা.)-এর হাদিসে বলা হয়েছে, সামর্থ্যবানের জন্য অন্যের পাওনা পরিশোধে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা জুলুম। এ জন্য তার শাস্তি ও অকল্যাণ অবধারিত। স্ত্রীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার দেনমোহর ও খোরপোষ না দেওয়াও উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ওপর জুলুমের শামিল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত কেয়ামতের দিন পর্যায়ক্রমে একে একে প্রত্যেক নারী-পুরুষকে বন্দী অবস্থায় সমবেত সব হাশরবাসীর সামনে হাজির করা হবে এবং বলা হবে, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে, যদি এর কাছে কেউ কিছু পাওনা থাক তবে আদায় করে নাও। এ সময় অধিকারহারা সেই নারী খুশি হবে, যে পিতা, ভাই ও স্বামীর কাছে স্বীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সে তাদের কাছ থেকে নিজের পাওনা আদায় করে নেবে।

অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন : ‘সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না।’ সূরা মুমিনু-১০১। তিনি আরও বলেন : ‘সেদিন করুণাময় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের হক ক্ষমা করে দেবেন, কিন্তু অপর মানুষের পাওনা কিছু মাত্রও ক্ষমা করবেন না। অতঃপর আল্লাহ ওই নারী বা পুরুষকে হাশরবাসীর সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে দাবিদারদের বলবেন : ‘তোমাদের পাওনা বুঝে নিতে এগিয়ে এসো।’ রসুল (সা.) বলেন : আল্লাহপাক ফেরেশতাদের নির্দেশ দেবেন, ‘এর নেক আমল থেকে প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা অনুসারে দিয়ে দাও। এভাবে সব পাওনাদারকে দেওয়ার পর যদি অল্প পরিমাণও নেক আমল অবশিষ্ট থেকে যায় এবং সার্বিক আমলের নিরিখে সে যদি আল্লাহর প্রিয়পাত্র প্রমাণিত হয়, তবে তার অবশিষ্ট নেক আমল বাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেন সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। পরিশেষে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। আর সার্বিক বিচারে সে যদি পাপী প্রমাণিত হয় এবং তার কোনো সৎ কাজও অবশিষ্ট না থাকে, তবে ফেরেশতারা আরজ করবে : ‘ইয়া আল্লাহ! এর সব পুণ্য ফুরিয়ে গেছে, অথচ এখনো অনেক পাওনাদার রয়ে গেছে।’ আল্লাহ তখন বলবেন : ‘এর পাপের সঙ্গে পাওনাদারদের পাপসমূহ মিলিয়ে দাও এবং একে জাহান্নামে ফেলে দাও।’ ইসলাম সামাজিক জীবনে নারীর সম্মান সমুন্নত রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন : ‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহলোক ও পরলোকে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ —সূরা আননূর-২৩।  উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো সতী-সাধ্বী নারীর ওপর ব্যভিচার ও অশ্লীলতার অপবাদ আরোপকারী ইহলোক ও পরলোকে অভিশপ্ত, তার জন্য গুরুতর শাস্তি অপেক্ষমাণ।  দুনিয়াতেও তাকে শাস্তি পেতে হবে।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর