বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাতিঘর

সৈয়দ বোরহান কবীর

বাতিঘর

জাতি হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা শেখ হাসিনার মতো একজন নেতা পেয়েছি। আবার আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা এই নেতাকে আবিষ্কার করতে পারিনি বা তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। চাটুকারিতা আর অন্তঃসারশূন্য স্লোগান দিয়ে শেখ হাসিনার ইমেজ বৃদ্ধির কসরৎ করে তার চিন্তা-চেতনা ও দর্শনের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারছি না। তাকে আমরা আর দশজন সরকারপ্রধান বা দলীয় নেতার কাতারেই রাখছি। অথচ বিশ্বে এই মুহূর্তে, সবচেয়ে বেশি গবেষণা হচ্ছে যে সরকারপ্রধানকে নিয়ে তার নাম শেখ হাসিনা। এক পলক ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে, হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুল থেকে শুরু করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়- বিশ্বের অন্তত নামিদামি দুই ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে গবেষণা করছেন। তাদের গবেষণার প্রেক্ষাপট এবং পদ্ধতি ভিন্ন কিন্তু শেষ প্রাপ্তির যোগফল একই, বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে; যার মূল কারিগর শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অনন্য দিক হলো, তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়েছেন। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পেরেছেন। জনগণকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক আশাজাগানিয়া গান। যে গানের সুর এদেশের মানুষকে করেছে অদম্য, আশাবাদী।

শেখ হাসিনার যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র ‘জনগণ’। তিনি ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ দর্শনের প্রবক্তা এবং এই দর্শনের আলোকেই বাংলাদেশকে বিকশিত করছেন।

কিন্তু ইদানীং সরকারের কিছু করিত্কর্মারা শেখ হাসিনাকে প্রচার করতে গিয়ে এমনভাবে ‘উন্নয়ন’ দর্শনকে আনছেন, যা হাস্যকর, বিরক্তিকর এবং উদ্বেগজনক। এ প্রসঙ্গে আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাহাথির মোহাম্মদের একটি উক্তি বেশি করে মনে পড়ছে। সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেছিলেন, ‘আমলাতন্ত্রের কাজ হলো অসাধারণ কোনো উদ্যোগকে সাধারণে নামিয়ে আনা, স্বপ্নকে কাগজে বন্দী করা আর উন্নয়নের মানবিক চিহ্নকে নিশ্চিহ্ন করা।’ বাংলাদেশে অতি উৎসাহী কতিপয় আমলার সাম্প্রতিক দৌড়ঝাঁপ দেখে মাহাথির মোহাম্মদের উক্তিটি আবার মনে পড়ে গেল।

সম্প্রতি তারা (অধিকাংশই কিছু পাওয়ার আশায়) ‘শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ও ব্র্যান্ডিং’ শিরোনামে এক কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এ নিয়ে তারা একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণী সভা করেছেন গত ৮ মার্চ। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এই সভা হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

প্রথমত, আমি ‘ব্র্যান্ডিং’ শব্দটার ঘোর বিরোধী। শেখ হাসিনা কোনো পণ্য নন, কিংবা বাজারদর বাড়ানোর বস্তু নন। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্মারক চিহ্ন। এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গৌরব। তিনি নিজেই একটি ব্র্যান্ড কাজেই নতুন করে ব্র্যান্ডিং করা, তাকে আরও ছোট করার শামিল। ধারণা করতে কষ্ট হয় না, আওয়ামী লীগের সুসময়ে জাঁকিয়ে বসা কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্ররোচনাতেই এই ব্র্যান্ডিং শব্দটি এসেছে। এসব বিজ্ঞাপনী সংস্থার (যারা ওই সভায় উপস্থিত ছিল) অন্তত দুটি হাওয়া ভবনের কর্ণধারের ব্র্যান্ডিংয়ের কাজেও নিয়োজিত ছিল। তাদের কাছে পৃথিবীর তাবৎ জিনিসই পণ্য আর তা বিপণনের জন্য প্রস্তুত করাই তাদের কাজ। আসল লক্ষ্য হলো, বিনাশ্রমে চাটুকারিতায় জলের মতো টাকা উপার্জন।

শেখ হাসিনার যে ১০টি উদ্যোগ নিয়ে তৈলাক্ত আমলারা কসরত করছেন, সেই ১০টি উদ্যোগই অসাধারণ এবং অনন্য। এর যে কোনো একটি উদ্যোগের জন্যই তার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। ১০টি উদ্যোগ হলো : ১. একটি বাড়ি একটি খামার ২. কমিউনিটি ক্লিনিক ৩. আশ্রয়ণ ৪. ডিজিটাল বাংলাদেশ ৫. শিক্ষা সহায়তা ৬. নারীর ক্ষমতায়ন ৭. ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ৮. সামাজিক নিরাপত্তা ৯. পরিবেশ সুরক্ষা ১০. বিনিয়োগ বিকাশ। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো কেবল উন্নয়নের জন্যই নয়, এর পেছনে আছে একটি রাষ্ট্রচিন্তা দর্শন। এর মূল লক্ষ্য হলো জনকল্যাণ ও জনগণের অংশগ্রহণ। উন্নয়ন পৃথিবীতে অনেকেই করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। আইয়ুব খান ঢাকঢোল পিটিয়ে উন্নয়নের দশক করেছিলেন, এরশাদের উন্নয়নের বন্যায় বাংলাদেশ ভেসে গিয়েছিল। লিবিয়ার চেহারা বদলে দিয়েছিলেন গাদ্দাফি। ইরাককে আধুনিক রাষ্ট্র বানিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন। সুযোগসন্ধানীদের যদি প্রশ্ন করা হয়, তাদের উন্নয়নের সঙ্গে শেখ হাসিনার উন্নয়নের পার্থক্য কি? তারা কী জবাব দেবেন? বরং এই উন্নয়নের ঢাকঢোল শেখ হাসিনার রাষ্ট্রচিন্তাকে আড়াল করে তাকে এক সাধারণ সরকার প্রধানের কাতারে নিয়ে যাচ্ছে। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘জনগণের সম্পৃক্তবিহীন উন্নয়ন আসলে কাগুজে বাঘ কিংবা কাচের ঘরের মতো। টেকসই উন্নয়ন হলো সেটাই যেটা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, তাদের ভাবনাগুলোকে একত্রিত করে করা হয়।’ অন্য সরকারপ্রধান আর শেখ হাসিনার ‘উন্নয়ন মডেল’-এর পার্থক্য হলো এখানেই। ধরা যাক ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’-এর কথা। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ আসলে কী? যারা নিজেদের প্রাপ্তির আশায় শেখ হাসিনার তথা কথিত ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা করছেন, তারা তাদের কর্মপরিকল্পনায় কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে বলেছেন, ‘গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্লিনিক স্থাপন। ১৩১৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের অবহেলিত দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগণ বিশেষত মা ও শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।’ পাঠক লক্ষ্য করুন, এর মধ্যে নতুনত্ব কী আছে। ১৯৮০ সালে লিবিয়া বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করেছে। কিউবা সবার জন্য বিনামূল্যে, সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। ভারতের ‘কেরালা’ নব্বই দশকে এই কাজ করে বিশ্বে মডেল হয়েছে। তাহলে শেখ হাসিনার উদ্যোগের বিশেষত্ব কী? কেবল কিছু ক্লিনিক করে, গরিব মানুষের চিকিৎসা সেবা দান কোনো অসাধারণ উদ্যোগ হতে পারে না। যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং কিছু প্রাপ্তির আশায় শেখ হাসিনাকে খুশি করতে ‘ব্র্যান্ডিং’ উৎসবের আয়োজন করেছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই এই উদ্যোগের দার্শনিক ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত নন। অবশ্য তাদের তা থাকারও কথা নয়। কারণ, মৌসুমি পাখিরা শস্য ফলানোর কষ্ট ঝোঝে না।

কমিউনিটি ক্লিনিক একটি অনবদ্য চিকিৎসা উদ্যোগ এ কারণে যে, এটিতে সরাসরি জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ হলো সরকার ও জনগণের সম্মিলিত শক্তির এক অসাধারণ মাইলফলক। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জমি দিয়েছে স্থানীয় জনগণ। সরকার তার ভবনটি বানিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় জনগণের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে কমিউনিটি গ্রুপ; যারা হাসপাতালটির দেখভাল ও তদারকি করছে। তারাই হাসপাতালের মালিক। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মচারীরা ওই কমিটির কাছে জবাবদিহি করছেন। জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় এর চেয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ আর কী হতে পারে? অথচ তথাকথিত তেলবাজি ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনায় আসল বিষয়টি অনুপস্থিত।

কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব মার্গারেট চ্যাং বলেছেন, ‘সারা বিশ্ব যখন অন্ধকারে পথ হাতড়াচ্ছিল তখন শেখ হাসিনা বিশ্বকে পথ দেখালেন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কীভাবে জনগণকে বিশেষ করে দরিদ্র জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়, তা বিশ্বকে হাতেকলমে শেখালেন শেখ হাসিনা।’ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছিলেন, ‘অবিশ্বাস্য! স্বাস্থ্যব্যবস্থায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা কীভাবে করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে।’ কমিউনিটি ক্লিনিক কেবল কিছু গরিব মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া নয়, বরং আমাদের সংবিধানে ঘোষিত ‘স্বাস্থ্য সবার অধিকার’-এর বাস্তবায়নের এক মডেল। শুধু কিছু সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে একে ছোট করার উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থে একটি দার্শনিক উদ্যোগকে কেবল সংখ্যাতত্ত্বে খাটো করা হচ্ছে? একজন মানুষের দেহ থেকে মস্তিষ্ক বের করে নিলে যেমন শুধু থাকে অন্তঃসারশূন্য দেহ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল চেতনাকে বাদ দিয়ে এটা উপস্থাপন করাও তেমনি একটি ব্যাপার।

শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক নয়, শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগের প্রতিটিতে রয়েছে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’-এর দর্শন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন, শেখ হাসিনার ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ শান্তির দর্শন ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত একটি দলিল। যে দর্শনের মূল কথা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণকে ক্ষমতার কেন্দ্রে আনা। জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল শক্তিতে পরিণত করা। যেমন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে কেবল কিছু ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে আসলে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটানো হচ্ছে। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। যারা শেখ হাসিনার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য কর্মপরিকল্পনা করছেন তারা কি শেখ হাসিনার রাষ্ট্র চিন্তা দর্শন সম্পর্কে জ্ঞাত?

শেখ হাসিনার যে দশটি উদ্যোগ নির্বাচন করা হয়েছে, তা নিয়েও আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অবদান হলো একটি অস্থিতিশীল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ রাষ্ট্রকে স্থিতিশীলতার আলোয় আলোকিত করা। বিশ্বব্যাংক প্রতি বছর প্রায় ২০০টি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিমাপ করে। WORLDWIDE GOVERNACE INDICATORS শীর্ষক এই বার্ষিক প্রকাশনায় দেখা যায়, ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ রাজনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি অস্থিতিশীল ছিল। গত তিন বছরে এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রের অবয়ব দিয়েছেন। হরতাল, নাশকতাকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’-এর কারণে। জনগণই ধ্বংসাত্মক রাজনীতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। জঙ্গিবাদ দমন ছিল শেখ হাসিনার আর একটি সাফল্য। এ সাফল্য তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূরদর্শী, মেধাবী ও বিচক্ষণ নেতার মর্যাদা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ‘জঙ্গিবাদের বিশ্বায়ন’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জঙ্গিবাদ দমনে ‘বাংলাদেশ মডেল’-কে অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনাকে নিয়ে সারা বিশ্বের এখন আগ্রহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাকে যে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া হয় এর একটি প্রধান কারণ জঙ্গিবাদ দমনে তার সাহসী এবং বিচক্ষণ নেতৃত্ব।

আর একটি ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সারা বিশ্বের বিস্ময়, তা হলো ‘কৃষিবিপ্লব’। বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মানচিত্র পাল্টে দিয়ে একটি খাদ্য-উদ্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেব উদ্ভাসিত হয়েছে। চাল, গম, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা পাঁচটি দেশের একটি। এই কৃতিত্ব শেখ হাসিনার কাছ থেকে আমলারা কীভাবে কেড়ে নেবে?

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে ঐতিহাসিক সাফল্য তাকে আপনি কীভাবে আড়াল করবেন? যুক্তি হিসেবে সুযোগসন্ধানীরা বলতেই পারেন, এটা তো আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। অবশ্য যারা সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে উন্নয়নের পরিমাপ করেন তারা এ রকম প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, আমি প্রয়াত ফিদেল কাস্ত্রোর একটি উদ্ধৃতি বরণ করতে চাই, কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘একটি রাষ্ট্রকে প্রথমে আদর্শিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হবে। এটা হলো ভিত্তি। আর তাহলেই উন্নয়নের পথযাত্রা সঠিক হবে।’

আজ থেকে শতবর্ষ পর শেখ হাসিনাকে মানুষ অন্তত একটি কারণে স্মরণ করবে তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো সাহসী পদক্ষেপ। এ জন্য তিনি অমরত্ব পাবেন। একটি জাতিরাষ্ট্রের আত্মপরিচয় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই যেমন তৃণমূল আওয়ামী লীগ, শিশু লীগের মতো আবর্জনা জন্মায় তেমনি আমলাতন্ত্রের মধ্যেও একটি সুবিধাবাদী আগাছাগোষ্ঠী জন্ম নেয়। এরা আওয়ামী লীগের সাফল্য, শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিকে দালানকোঠা আর সংখ্যাতত্ত্বের চাপে পিষ্ট করে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে এদের খুঁজে পাওয়া যায় না। মনে আছে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যখন পরাজিত হলো তখন বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য কাউকেই পাওয়া যায়নি। আমার মতো মূর্খদের তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বানাতে হয়েছিল। আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, আবার আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে এসব বসন্তের কোকিলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শেখ হাসিনা একজন ব্যতিক্রমী রাষ্ট্রনায়ক। তিনি আসলে শাসক নন, তিনি একজন মানবিক অভিভাবক। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি এ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন। যে স্বপ্ন দেখানো শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৭৫-এর পর বাঙালি জাতি হয়ে পড়েছিল স্বপ্নহীন। শেখ হাসিনা বাঙালির সেই স্বপ্ন পুনরুদ্ধারের নায়ক। এ পি জে আবদুল কালাম যেমনটি বলেছেন, ‘কিছু করার আগে অবশ্যই স্বপ্ন দেখতে হবে।’ শেখ হাসিনা বাঙালিকে স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছেন। অনেক বড় স্বপ্ন। তিনি দিয়েছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি অবয়ব দিয়েছেন। তিনি বাঙালিকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের বাতিঘর। তাই তার ব্র্যান্ডিং করার আগে তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে সবার আগে।  তার আদর্শ, দর্শন ও চেতনাকে আত্মস্থ করতে হবে চাটুকারিতা দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে। প্লিজ, এভাবে আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদকে হালকা করবেন না।

হলেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ই-মেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর