বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ হতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

প্রতিদিন আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে লেনদেন করি। ক্রয়-বিক্রয় করি। অর্থসম্পদ আদান-প্রদান করি। কিন্তু কজনের লেনদেন স্বচ্ছ ও সুন্দর? অন্যান্য আমলে এগিয়ে থেকেও অনেক মুসলমান লেনদেনে পিছিয়ে আছে। ওয়াদা ভঙ্গ করা, মিথ্যা বলা, ওজনে কম দেওয়া, পণ্যে ভেজাল দেওয়া আজকের মুসলমানের মধ্যে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের লেনদেন দেখে অনেক অমুসলিম অবাক হয়ে যায়। তারা ভাবে, এক সময় যারা দুনিয়ার মানুষকে সততা শিক্ষা দিয়েছে, স্বচ্ছতার দীক্ষা দিয়েছে, সত্যের পথ প্রদর্শন করেছে তাদের লেনদেন দেখে মায়া হয়। তাদের অনেকে আজ যেন নিজেদের গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার জন্য যে কোনো চুক্তিতে সাক্ষী রাখার প্রতি পবিত্র কোরআনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ আয়াত লেনদেন সম্পর্কে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! যখন কোনো নির্ধারিত সময়ের জন্য তোমরা পরস্পরের মধ্যে ঋণের লেনদেন কর তখন লিখে রাখো’... ‘তারপর নিজেদের পুরুষদের মধ্য থেকে দুই ব্যক্তিকে তার সাক্ষী রাখ। আর যদি দুজন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষী রাখবে, যাতে একজন ভুলে গেলে অন্যজন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।’ সূরা আল বাকারাহ, আয়াত : ২৮২। অন্যত্র ঘোষিত হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেল না। লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে। আর (লেনদেনে অস্বচ্ছতা রেখে) নিজেকে হত্যা কর না। নিশ্চিত জান, আল্লাহ তোমাদের প্রতি মেহেরবান।’ সূরা আন্ নিসা, আয়াত : ২৯। আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূরণ কর।’ সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত : ১। হাদিসের কিতাবগুলোতেও বান্দার হক ও অধিকার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, (মহান আল্লাহ) কিয়ামতের দিন অবশ্যই প্রত্যেক পাওনাদারের পাওনা আদায় করাবেন। এমনকি শিংযুক্ত বকরি থেকে শিংবিহীন বকরির প্রতিশোধ নিয়ে নেবেন।’ মুসলিম শরিফ। অর্থাৎ দুনিয়াতে কেউ যদি অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দেয় বা কারও আর্থিক ক্ষতি করে তাহলে মহান পরওয়ারদিগার কিয়ামত দিবসে এর বদলা নেবেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবেন। সেদিন নিজের সব নেকি দিয়ে দিতে হবে দুনিয়াতে অন্যের ক্ষতি করার কারণে। তবে কেউ যদি দুনিয়াতে নিজের পাওনা টাকা-পয়সা ক্ষমা করে দেয়, অপর মুসলমান ভাইকে মাফ করে দেয় তার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা। রসুল (সা.) বলেছেন : এক ব্যক্তি লোকদের সঙ্গে লেনদেন করত। সে তার লোকদের বলে রেখেছিল যখন তোমরা কোনো অভাবীর কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে যাবে, তাকে মাফ করে দেবে, হয়তো আল্লাহপাক (কিয়ামতের দিন) আমাদের মাফ করে দেবেন। কাজেই মৃত্যুর পর যখন সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করল, আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করে দেলেন (বুখারি, মুসলিম)।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর